অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর দৃষ্টিতে- তথ্যপ্রযুক্তির ২০১২ প্রত্যাশা ২০১৩

তথ্যপ্রযুক্তির নানা ঘটনায় আলোচিত ছিল ২০১২। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রটি গতবছর কেমন গেল, চলতি বছরে প্রত্যাশাই বা কি? বলেছেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জামিলুর রেজা চৌধুরী
আউটসোর্সিং ও সফটওয়্যার
২০১২ সালে আউটসোর্সিংয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। সম্ভাবনাময় এ খাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাজ করছেন অনেকেই। আউটসোর্সিংয়ের বড় ওয়েবসাইটগুলো বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছে। আউটসোর্সিংয়ের পাশাপাশি দেশীয় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোও দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো কাজ করেছে। যেহেতু মুঠোফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে, তাই বাড়ছে ইন্টারনেটসহ অন্যান্য সেবাও। এ ছাড়া মুঠোফোনের জন্য অ্যাপসও তৈরি হচ্ছে এবং এটি তৈরির আগ্রহও বাড়ছে তরুণদের মধ্যে। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে আমাদের অবকাঠামোগত সমস্যা ছিল, যা এখন কিছুটা কম। শুরুতে ছিল কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট), এরপর এসেছে সাবমেরিন কেব্ল। তবে একটি সাবমেরিন কেব্ল থাকায় আমাদের প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হতো। এর একটি অগ্রগতি হয়েছে—ভূগর্ভস্থ আরেকটি কেব্ল চালু হয়েছে গত বছর।

ই-কমার্স
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে এসে চালু হয়েছে ই-পেমেন্ট গেটওয়ে। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় কাজ হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বড় বড় ব্যাংক এতে যুক্ত হলে কাজ অনেক এগিয়ে যাবে এবং সহজ হবে। পাশাপাশি বাড়বে অনলাইন লেনদেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে এর অপব্যবহারও। ইউটিউব এখন শুধু ভিডিওসাইটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন একটি শিক্ষাবিষয়ক উপকরণও বটে। এর ব্যবহারও বেড়েছে। ফেসবুকের বেশ অপব্যবহারও হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, কীভাবে এটি ভালোভাবে পরিচালনা করা যায়। এসব অপকর্ম রোধে সাইবার আইনকে শক্তিশালী করতে হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা
সামগ্রিক শিক্ষা উন্নত হয়েছে গত বছরও। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেড়েছে। পুরোপুরি গুণগত মান নিশ্চিত করা এখনো সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে কয়েক মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। সেটি হলে শিক্ষার সামগ্রিক গুণগত মান বাড়বে। অনেক তরুণ শিক্ষার্থী দেশের বাইরে পড়াশোনা শেষ করে গত বছর দেশে ফিরে এসেছেন। সরকার বেশ কিছু বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর-সুবিধা দিয়েছে। সব শিক্ষার্থীর হাতে স্বল্প মূল্যে ল্যাপটপ বা নেটবুক সরবরাহ না করতে পারলে পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পাওয়া যাবে না। তবে যেহেতু বছরের শুরুর দিনেই সবাই পাঠ্যবই পেয়ে গেছে, তাই এখন অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রমের দিকে নজর দেওয়া উচিত।

সরকারি কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তি
সরকারি কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার তেমন নেই। এখনো দেখা যায়, সভার তথ্য হাতে হাতে পৌঁছানো হয়, যা সহজেই ই-মেইলে পাঠানো সম্ভব। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ডোমেইনের আওতায় ই-মেইল ব্যবহার করেন না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের একটি নীতিমালা থাকা উচিত, যেন সরকারি কর্মকর্তারা নিজস্ব মন্ত্রণালয়ের ডোমেইনের আওতায় ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহার করেন। এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও তথ্য প্রদানের জন্য নেই নির্দিষ্ট কর্মকর্তা। যদিও তথ্য অধিকার আইনে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা থাকার কথা, যিনি তথ্য দেবেন। তবে কিছু নাগরিক সেবা চালু হয়েছে।
এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির আয়োজন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২ হয়েছে, যা প্রশংসনীয়।

মোবাইল ব্যাংকিং
গত বছর মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমও বেশ বেড়েছে। যেহেতু পেমেন্ট গেটওয়ে চালু হয়েছে, আশা করা যায়, চলতি বছরে এটি আরও উন্নত হবে।

মোবাইল ও থ্রি-জি
বর্তমানে প্রায় এক কোটি ব্যবহারকারী মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তবে ইন্টারনেট দ্রুতগতির না হওয়ায় বেশ সমস্যা হয়। এ জন্য দ্বিতীয় প্রজম্মের প্রযুক্তি টু-জিকে উন্নত করতে হবে। থ্রি-জি চালু হয়েছে—তবে সবার জন্য চালু হলে এর অগ্রগতি যেমন বাড়বে, তেমনি ভালো হবে।

স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে প্রযুক্তি
স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে। এখন সহজে অনেক কৃষক মুঠোফোনের ক্যামেরার মাধ্যমে ফসলের পোকার ছবি তুলে এর সমাধান নিচ্ছে। টেলিমেডিসিনের বেশ কয়েকটি উদ্যোগই ভালো করছে। এ ছাড়া মুঠোফোনে স্বাস্থ্যসেবার পরিধিও বেড়েছে।

আগামী বছরের প্রত্যাশা
কয়েক বছরে আমাদের বিরাট কিছু অর্জন না হলেও শক্ত একটি ভিত্তি গড়ে উঠছে। এর সুফল হয়তো আমরা আগামী দু-এক বছরের মধ্যে পাব। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে, যা বেশ প্রশংসনীয়। তাঁদের হাত ধরেই তথ্যপ্রযুক্তি খাত এগিয়ে যাবে।
অনুলিখন: নুরুন্নবী চৌধুরী

No comments

Powered by Blogger.