মার্শাল-মেহরাবকে ইতিহাসের হাতছানি

স্টিভ ওয়াহ, মার্ক ওয়াহর জানার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ওয়াহ ভাইরা হয়তো জানেনও না, ক্রিকেট রূপকথায় জায়গা করে নেওয়া তাঁদের সেই জুটি রেকর্ড বইয়ে নেমে গেছে আরেক ধাপ। ওয়াহদের তিনে ঠেলে এখন দুইয়ে বাংলাদেশের দুই তরুণ!
১৯৯০ সালে শেফিল্ড শিল্ডের সেই জুটিটা ক্রিকেট রোমান্টিকদের প্রিয় বিষয়গুলোর একটি। দুই যমজ ভাই মিলে ৪৬৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। ২২৯ রানে অপরাজিত ছিলেন মার্ক, ২১৬ রানে স্টিভ। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে পঞ্চম উইকেটের বিশ্ব রেকর্ড হয়ে যা টিকে ছিল পরবর্তী প্রায় দেড় যুগ। চেতেশ্বর পূজারা ও রবীন্দ্র জাদেজা টপকে গেছেন ওয়াহ যমজদের, কাল টপকে গেলেন মার্শাল আইয়ুব ও মেহরাব হোসেন জুনিয়র! নিজেদের নামটা আজ ওয়াহদের কানে পৌঁছাতেও পারেন ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের দুই ব্যাটসম্যান। বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ফেললে নিশ্চয়ই খানিকটা শোরগোল হবে ক্রিকেট বিশ্বে। যে জন্য মার্শাল-মেহরাবের আজ চাই আর মাত্র ৪৯ রান।
পরশু যখন মার্শালের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন মেহরাব, টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা মধ্যাঞ্চল তখন থরহরি কম্পমান। ৫৬ রানেই নেই চার উইকেট। দিন শেষে উইকেট ওই চারটিই। স্কোর বোর্ডে উইকেটের ঘরে অঙ্কটা একই থাকল কালকের দিন শেষেও। ১০০-২০০-৩০০ পেরিয়ে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৪৭২ রানের! যেকোনো জুটিতেই বাংলাদেশের রেকর্ড পেরিয়ে গেছেন। আগের রেকর্ডটিও ছিল পঞ্চম উইকেটে, সেটিতেও ছিলেন মার্শাল (৪২০, আশরাফুলের সঙ্গে)। আড়াই শ পেরিয়ে মার্শালের সামনে ট্রিপল সেঞ্চুরির হাতছানি, মেহরাব পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে বাংলাদেশের ট্রিপল সেঞ্চুরি একটিই, ২০০৭ সালে রকিবুল হাসানের অপরাজিত ৩১৩। আজ তাই বেশ কিছু ইতিহাস দেখার অপেক্ষায় বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম।
রেকর্ডটা মাথায় ছিল দুজনেরই। দুজনই জানতেন। চা-বিরতির সময় আশরাফুলকে বলেও গিয়েছিলেন মেহরাব, ‘বলেছিলাম, আপনার রেকর্ড ভেঙে দেব আজ। রেকর্ড ভাঙার আগে আগেও একবার মাঠ থেকে ইশারা করে দেখিয়েছি। মজাই হয়েছে...।’ হাতছানি এখন বিশ্ব রেকর্ডের, রোমাঞ্চিত দুজনই।
দুজন রোমাঞ্চিত ওয়াহ যমজদের টপকে যেতে পেরেও। মার্শাল ও মেহরাবকেও কিন্তু চাইলে বলা যায় ‘মানিকজোড়।’ জাতীয় লিগে এক দলে খেলেন (ঢাকা মহানগর)। মার্শাল ব্যাট করেন চারে, মেহরাব বেশির ভাগ সময় পাঁচে। এবারের জাতীয় লিগে সর্বোচ্চ রান ছিল মার্শালের (৬০৪), ঠিক পরেই মেহরাব (৫৬১)। জাতীয় লিগে দুজনেরই ছিল দুটি করে সেঞ্চুরি, এই টুর্নামেন্টেও দুটি করে হয়ে গেল। দলের বিপদে আগেও দুজনের ম্যারাথন সব জুটি হয়েছে এ মৌসুমে। এবার জাতীয় লিগের প্রথম ম্যাচেই চট্টগ্রামের বিপক্ষে দলের রান যখন তিন উইকেটে ৯৮, দুজন গড়েছিলেন ৩১১ রানের জুটি। মার্শাল পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি (২০৯)। সিলেটের বিপক্ষে ম্যাচে চার উইকেট নেই ৭১ রানে, এবার দুজনের জুটি ২০৯ রানের! মুঠোফোনে মার্শাল আরেকটা তথ্য যোগ করলেন, ‘আমরা কিন্তু রুমমেটও!’
জুটির আগের রেকর্ডে যাঁর অংশীদারি ছিল, সেই মোহাম্মদ আশরাফুল মুগ্ধ এই দুজনের ব্যটিংয়ে, ‘অসাধারণ ব্যাটিং করেছে দুজনই। শুধু এই ম্যাচে কেন, গোটা মৌসুমেই ওদের জুটিটা একটু জমে যাওয়ার পরই মনে হয়েছে, ওদের আর আউটই করা যাবে না। মার্শাল অনেক উন্নতি করেছে ব্যাটিংয়ে, আর মেহরাবকেও দেখলাম আগের চেয়ে অনেক আক্রমণাত্মক খেলতে।’
এই মৌসুমের আগে দুজনের গল্পটা অবশ্য আলাদা। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে সম্ভাবনাময় ছিলেন দুজনই। পথ হারিয়ে মার্শালের আর জাতীয় দলের কাছাকাছি আসা হয়নি। মেহরাব আবার খেলেছেন সাতটি টেস্ট ও ১৮টি ওয়ানডে। সম্বল একটি করে ফিফটি। জাতীয় দলের বাইরে তাই বছর তিনেক। গত জাতীয় লিগে দুটি সেঞ্চুরি করে বুঝেছিলেন, চাই আরও বড় কিছু। এবার তাই লক্ষ্য ছিল চারটি সেঞ্চুরি, অন্তত একটি ডাবল। দুটি লক্ষ্যই পূরণ হয়েছে। ছয় বছর আগে জাতীয় লিগে একবার ১৯৬ করে আউট হয়েছিলেন। জুটির রেকর্ডের চেয়ে ডাবল সেঞ্চুরিটাই তাই বেশি তৃপ্তি দিচ্ছে মেহরাবকে।
এখন দুজনই একই প্রান্তে। বয়সভিত্তিক পর্যায়ের সব সঙ্গীর জাতীয় দলে দাপট দেখে আক্ষেপ জাগে দুজনের মনেই। মেহরাব চান ফিরতে, মার্শাল স্বাদটা পেতে। তবে আজ লক্ষ্য একটিই—জুটির বিশ্ব রেকর্ড!

সং ক্ষি প্ত স্কো র
মধ্যাঞ্চল-পূর্বাঞ্চল, বগুড়া
ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস: ১৩০ ওভারে ৫২৮/৪ (শামসুর ২৩, সানি ২০, রকিবুল ০, মার্শাল ২৫১*, আশরাফুল ৪, মেহরাব ২০৬*; তাপস বৈশ্য ১/৬১, হাসান ০/৯৩, নাবিল ৩/১১১, আফতাব ০/৪৪, এনামুল জুনিয়র ০/১১৯, অলক ০/২৪, শাহরিয়ার ০/৮, ফয়সাল ০/৩৫, মমিনুল ০/১৯)।

No comments

Powered by Blogger.