ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে ওদের মুখোশ উন্মোচন করম্নন- ইমাম সম্মেলনে- প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বার্থান্বেষী মহল যাতে ইসলামকে ব্যবহার করে জনগণকে ভুল পথে পরিচালিত করতে না পারে, সে জন্য ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'শানত্মির ধর্ম ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে ব্যাপক জনসচেতনতা বাড়িয়ে আপনাদের জনগণের কাছে এ সব লোকের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।' প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রশিৰিত ইমাম সম্মেলন ২০১০-এ বক্তৃতা করছিলেন। সম্মেলনটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইউনিসেফ যৌথভাবে আয়োজন করে। খবর বাসসর। তিনি ইসলামের নামে কেউ যেন দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও সামপ্রদায়িকতা ছড়াতে না পারে সে ব্যাপারে ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, 'ইসলাম শানত্মি ও সমপ্রীতির ধর্ম। এখানে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের স্থান নেই।' বেশ কিছু দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সারাদেশে প্রত্যেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন ধর্মীয় শিৰক নিয়োগের জন্য কার্যকর পদৰেপ গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, ধর্মীয় শিৰা ছাড়া পূর্ণাঙ্গ শিৰা অর্জিত হয় না। তিনি আরও বলেন, 'শিশুদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ আরও জোরালো করার লৰ্যে আমরা আমাদের নতুন শিৰানীতিতে তাদের প্রত্যেককে ধমর্ীয় শিৰা প্রদানের জন্য বিভিন্ন পদৰেপ গ্রহণ করেছি।'
এ প্রসঙ্গে তিনি ইমামদের সম্মানী বৃদ্ধি এবং যারা মাদ্রাসা থেকে শিৰা গ্রহণ করে ধমর্ীয় শিৰা প্রদান করতে চায় তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। এ ছাড়া তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকা- উপজেলা পর্যায় পর্যনত্ম সমপ্রসারিত করার লৰ্যে সরকার যথাযথ পদৰেপ গ্রহণ করবে।
স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে ইসলামের সমপ্রসারণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকা-ের পরবতর্ী সরকারসমূহ ইসলামের স্বার্থে কোন পদৰেপই নেয়নি। বরং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের পর ইসলামকে ব্যবহার করে যারা ৰমতায় এসেছে তারা মদ ও জুয়ার অনুমোদন দিয়েছে, যা জাতির জনক তাঁর শাসনকালে নিষিদ্ধ করেছিলেন।
শেখ হাসিনা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কিভাবে কিছু ইসলামী দল তাদের সঙ্গে জোট গড়েছে, যারা মদ ও জুয়ার অনুমোদন প্রদান করেছিল। তিনি এ ব্যাপারে ইমাম, ওলামায়ে কেরাম এবং ধমর্ীয় নেতৃবৃন্দকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মজিবুর রহমান ফকির, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রব হাওলাদার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, ইউনিসেফ প্রতিনিধি ক্যারেল ডি রো এবং ইমামদের প্রতিনিধি ড. মাওলানা মোঃ বাকারম্নলস্না বিন-দুর।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সামপ্রতিক ভারত সফর প্রসঙ্গে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সরকারের বিরম্নদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ দেশ বিক্রি করে দিচ্ছে। 'এ দেশের জন্য আমি বাবা-মা, ভাই ও পরিবারের অনেককে হারিয়েছি।' তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে এ কথা উলেস্নখ করে বলেন, 'আমি কোনভাবেই তা করতে পারি না।' তিনি এসব মিথ্যা প্রচারণার বিরম্নদ্ধে জনগণকে সচেতন করতে ইমাম ও ধমর্ীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সার্ক সনদ অনুযায়ী বাংলাদেশ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরম্নদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) এ বাঁধ নিয়েও সরকারের বিরম্নদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অথচ তারা যখন ৰমতায় ছিল তখন এই বাঁধ নির্মাণের বিরম্নদ্ধে একটি কথাও বলেনি। এ সব মিথ্যা প্রচারণাকে অনৈসলামিক কর্মকা- আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এসব বন্ধে আলেম, ওলামা ও ইসলামী নেতৃবৃন্দের এগিয়ে আসা উচিত।
বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ইমামদের ভূমিকার উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোয়াইন ফ্লু ও এইচআইভি/এইডসের মতো বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগ থেকে জনগণকে দূরে রাখতে ইমামরা গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
তিনি শিশুদের টিকা প্রদান, বনায়ন ও নিরৰরতা দূরীকরণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ এবং বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস ও মাদক সেবন থেকে তাদের দূরে রাখতে সচেতনতা সৃষ্টিতে এগিয়ে আসার জন্য ইমামদের প্রতি আহ্বান জানান। দেশের অগ্রগতির জন্য দুনর্ীতিকে বড় ধরনের প্রতিবন্ধক উলেস্নখ করে তিনি ইমাম ও সকল ধমর্ীয় নেতার প্রতি সমাজ থেকে দুনর্ীতি নির্মূলে সরকারের উদ্যোগকে সমর্থন যোগানোর আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা আস্থার সঙ্গে বলেন, এ ব্যাপারে ইমামরা এগিয়ে এলে সরকার দেশ থেকে সব ধরনের দুনর্ীতি দূর করতে সৰম হবে। তিনি বলেন, 'জনগণের সঙ্গে আপনাদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে এবং আপনারা তাদের কাছাকাছি যেতে পারেন। জনগণেরও আপনাদের ওপর রয়েছে পূর্ণ আস্থা। সুতরাং সমাজের শিৰিত অংশ হিসেবে আপনারা তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেন।'
ঐতিহাসিক মদিনা সনদের উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার মদিনা সনদের আলোকে শানত্মিপূর্ণ, উদার ও অসামপ্রদায়িক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে যেখানে নির্বিশেষে সকল ধর্মের লোকই তাদের নিজ নিজ ধমর্ীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ ও অরাজকতার রাজনীতি করতে চাই না।'
তিনি সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে সরকারের প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান যেখানে সকল ধর্মের লোকই তাদের নিজ নিজ অধিকার ভোগ করতে পারবে।
পরে প্রধানমন্ত্রী দেশের সেরা ইমামদের মাঝে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও চেক বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্যগণ, কূটনীতিক ও ধমর্ীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.