শেষ দিনে টাইগারদের দরকার ৩৪৮ রান, হাতে ৮ উইকেট by আরিফুর রহমান বাবু

চট্টগ্রাম থেকে আরে টেস্ট ক্রিকেট কোন খেলা হলো? পাঁচ দিনের ম্যাচ, তাও প্রতিঘণ্টায় পানি পান, দুপুরে ভরপেট খেয়ে আর বিকেলে চা পান করে? এই বলে যাঁরা চেচান আর ওয়ানডে এবং টি২০-এর পক্ষে বড় গলায় কথা বলেন, তাদের জন্য একটা বড় খবর, টেস্টই ক্রিকেটের চিরায়ত ধারা।
চূড়ানত্ম পরিণতির সম্ভাবনা জাগলে একটা টেস্ট হয়ে ওঠে অনেক আকর্ষণীয়। যা নিয়ে রীতিমতো একটা চমৎকার গল্প লিখে ফেলা যায়। সত্যিই তাই, শেষ দিনে গড়ালে বেশিরভাগ টেস্ট ম্যাচ পায় অন্য মাত্রা। যা দেখার এক বিষয় হয়েও দাঁড়ায়। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ও ভারতের চলতি টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ ঠিক তাই_ই হয়েছে। বাংলাদেশ_ভারত সমর্থক_অনুরাগী ছাপিয়ে এখন গোটা ক্রিকেট বিশ্বের দৃষ্টি চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের দিকে। এটা আর ম্যাড়মেড়ে, একপেশে নেই। প্রকৃতি বড় ধরনের বাধা হয়ে না দাঁড়ালে ফল নিষ্পত্তির সম্ভাবনা যথেষ্টই। খালি চোখে ভারতের পালস্না একটু ভারি মনে হলেও বাংলাদেশও ছিটকে পড়েনি একদম। টাইগার ক্যাপ্টেন শাকিব আল হাসানের ভাষায়_ জয়, ড্র আর হার তিনটাই হতে পারে। আমরা ম্যাচ ড্র করেও ফেলতে পারি। আবার হারের শঙ্কাও আছে। অন্যদিকে জেতারও সুযোগ আছে। একচুলও বাড়িয়ে বলেননি শাকিব। এ টেস্ট উন্মুক্ত। জিততে পারে যে কেউ। আবার অমীমাংসিতও থেকে যেতে পারে। তবে টাইগারদের জয়ের হিসেব একটু কঠিন। জিততে হলে আজ বৃহস্পতিবার শেষ দিন শাকিব বাহিনীর দরকার ৩৪৮ রান। হাতে অছে ৮ উইকেট। কুয়াশা বাধা হয়ে না দাঁড়ালে এ রান করতে বাংলাদেশ পাবে ৯৮ ওভার। কুয়াশা না থাকলে সকাল নয়টায় খেলা শুরম্ন হবে। চলবে বিকেল পাঁচটা পর্যনত্ম। অন্যদিকে ভারতীয়দের হিসেব ঠিক উল্টো। সেবাগ বাহিনীকে আর ৩৪৭ রানের মধ্যে অলআউট করতে হবে। ওদের প্রয়োজন ৮ উইকেট। বুধবার চা বিরতির ঠিক ৩৩ মিনিট পর শাকিব বাহিনীকে এ কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ভারতীয়রা। ঠিক ৮ উইকেটে ৪১৩ রান করেই ইনিংস ঘোষণা করেন সেবাগ। প্রথম ইনিংসে এক রানে এগিয়ে থাকায় মোট লিড দাঁড়ায় ৪১৪। জয়ের দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত না করলেও টাইগার ক্যাপ্টেন শাকিব ড্র করার কথা বলেছেন বেশ জোর দিয়েই। তাঁর কথা, আমাদের প্রথম টার্গেট, সারাদিন ব্যাট করা। আর পুরো দিন উইকেটে টিকে থাকতে পারলে জেতাও সম্ভব। কিন্তু ইতিহাস মোটেই সায় দিচ্ছে না। পুরোটাই বিরম্নদ্ধে। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে বাংলাদেশ চতুর্থ ইনিংসে ৪০০-এর বেশি রান করেছেই মাত্র একবার। সেটা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে নিজ মাটিতে। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। মাত্র ১৩ মাস আগের কথা। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের বিরম্নদ্ধে ৫২১ রানের পাহাড় সমান লক্ষ্যেও পিছু নিয়ে ৪১৩ রান করেছিল টাইগাররা। সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছিলেন মোঃ আশরাফুল। আজকের অধিনায়ক শাকিবের ব্যাট থেকে এসেছিল ৯৬। এছাড়া মুশফিকুর রহিম করেছিলেন ৬১। আজ আশরাফুল_শাকিব ও মুশফিকুররা ঐ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালে অনিবার্যভাবেই তৈরি হবে সাফল্যের নতুন ইতিহাস। আশরাফুল এখনও ক্রিজে (১৬ নট আউট)। সঙ্গে তামিমও (ব্যাটিং ২৩) আছেন। বুধবার পড়নত্ম বিকেলে দ্বিতীয় ইনিংস শুরম্নর পর আউট হয়েছেন দু'জন, ইমরম্নল কায়েস ( ১) ও শাহরিয়ার নাফীস (২৩)। দু'জনই উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন।
এদিকে সেবাগের দর্প প্রায় ভাঙ্গার উপক্রম হয়েছিল। ১ উইকেটে ১২২ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরম্ন করা ভারত গৌতম গাম্ভীরের সেঞ্চুরি আর অমিত মিশ্র (৫০) ও ভিভিএস লক্ষ্মণের (হার না মানা ৬৯) অর্ধশতক সত্ত্বেও ৩৯৪ রানে ৮ উইকেট খুইয়ে বসেছিল ভারত। কিন্তু তারপরও দ্বিতীয়বার অলআউট হয়নি সেবাগের দল। ঐ লক্ষ্য পূরণের খুব কাছাকাছি গিয়েও না পারা বাংলাদেশ আসল লক্ষ্যের পিছু নিয়ে কোথায় গিয়ে শেষ করে সেটাই দেখার।

No comments

Powered by Blogger.