এমপিওবহির্ভূত শিক্ষকরা আজ থেকে আমরণ অনশনে

 সকল ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির দাবিতে আজ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন করবেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। দেশের প্রায় সাড়ে সাত হাজার প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির দাবিতে বুধবার শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয় ঘোরাও কর্মসূচী শেষে অনশনের ডাক দেয়া হয়েছে। লাগাতার কর্মসূচীর তৃতীয় দিনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।
এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন শিক্ষক নেতারা। শিক্ষকদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে আহত হয়েছেন পুলিশের কয়েক জন সদস্য। পুলিশ বলেছে, আন্দোলনরত শিক্ষকদের মধ্য থেকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাই কোন কারণ ছাড়াই পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। কোন শিক্ষক এমন কাজ করতে পারে না। অন্যদিকে বেপরোয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় বিব্রত শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন, পুলিশ হয়ত টোকাইদের দিয়ে এ কাজ করিয়েছে। আমরা করিনি।
বুধবার দিনভর র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাওযা পাল্টাধাওয়া শেষে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অনশনের ঘোষণা দেন ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতারা। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার কু-ু। উপস্থিত ছিলেন সভাপতি এশারত আলীসহ নেতৃবৃন্দ। এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী বুধবার দুপুর একটার দিকে শিক্ষকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে যান। আগে থেকেই সচিবালয় সংলগ্ন প্রেসক্লাবের পাশের রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বিপুলসংখ্যক র‌্যাব-পুলিশ অবস্থান নেয়। প্রেসক্লাবের আশপাশেও মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। শিক্ষকরা ব্যারিকেড ভাঙ্গার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষকরা পুলিশ-র‌্যাবকে লক্ষ্য করে বেপরোয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকলেও হঠাৎই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের বারবার শান্তিপূর্ণ অবস্থানের আহ্বান জানানো হলেও শিক্ষকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও পাথর ছুড়তে থাকে। পরে পুলিশ টিয়ারগ্যাস সেল, রবার বুলেট এবং মরিচের গুঁড়ার (পিপার) স্প্রে করে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। টিয়ারগ্যাসের কারণে এক পার্যায়ে পুলিশ-র‌্যাব প্রেসক্লাবের পাশের রাস্তা থেকে সরে এলে শিক্ষকরা ব্যারিকেড ভেঙ্গে পুলিশকে ধাওয়া করে। এ সময় পুলিশ শিক্ষকদের লাঠিপেটা ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে গলির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। শিক্ষকরা বিক্ষিপ্তভাবে প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। মরিচের গুঁড়া স্প্রে করে আবার তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। দুপুরের পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় র‌্যাব-পুলিশ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে আগের দুদিনের মতো এদিনও পুরো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের রাস্তায় সৃষ্টি হয় প্রচ- যানজট। ৩টার দিকে কয়েক শিক্ষক প্রেসক্লাবের পাশে জড়ো হয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কুশপুতুল দাহ করেন। পুলিশের সঙ্গে শিক্ষকদের সংঘর্ষের ঘটনা প্রসঙ্গে রমনা জোনের উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষকরা ব্যারিকেড ভেঙ্গে সচিবালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের স্বাভাবিকভাবেই বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শিক্ষকদের ছোড়া ইটপাটকেলে কয়েক জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, একজন পুলিশ সদস্যদের হাত ভেঙ্গে গেছে। অনেকেই মারাত্মক আহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, পুলিশের ওপর তারা যেভাবে হামলা করেছে এতে মনে হয়েছে তারা জামায়াত-শিবিরের কর্মী। সাম্প্রতিক পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলার সঙ্গে এই হামালার মিল রয়েছে। এদিকে দেশের যেখানে-সেখানে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। এখন এসব নামসর্বস্ব সকল প্রতিষ্ঠানকেই এমপিওভুক্ত করে সরকারীভাবে বেতন দেয়ার দাবি কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরাই অধিকাংশ শিক্ষককেই বেতন দেন না মাসের পর মাস। মালিকরাই শিক্ষকদের বেতন না দিয়ে বলছেন, সরকার এমপিওভুক্ত না করলে আপনাদের বেতনভাতা চালানো সম্ভব নয়। বিকেলে বাসদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করে এশানরত আলী ও তাপস কুমার কু-ু বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কর্মী আছে বলে পুলিশ দাবি করলেও এই আন্দোলনের পেছনে কোন রাজনৈতিক ইন্ধন নেই। র‌্যাব-পুলিশের হামলা, রবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাসে অর্ধশতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন। এদের মধ্য থেকে কয়েক জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিক্ষকরা আগে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে সাংবাদিকরা এমন দাবি করলে শিক্ষক নেতারা বলেন, আন্দোলন বন্ধ করে দিতে শিক্ষকদের মধ্যে টোকাই ঢুকিয়ে দিয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। শিক্ষকরাই পুলিশের ওপর আগে হামলা করেছে সাংবাদিকদের কাছে প্রমাণ আছে এমন অভিযোগের বিষয়ে তাঁরা বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় শিক্ষকরা জড়িত থাকলে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.