পারসন অব দ্য ইয়ার ২০১২- ওবামা-১ম, মালালা-২য়

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনপ্রিয় সাময়িকী টাইমের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এ নিয়ে দু’বার প্রভাবশালী এ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম এ কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট।
এর আগে ২০০৮ সালে তিনি প্রথমবারের মতো টাইমের পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন।

ওবামা তার সার্বিক কার্যক্রমে সেরা হলেও পাকিস্তানের মানবাধিকারকর্মী কিশোরী মালালা ইউসুফজাইয়ের স্থান ঠিক ওবামার পর অর্থাৎ রানার আপ।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাংলিন ডি. রুজভেল্টের গড়া রেকর্ড ভেঙে টানা দ্বিতীয়বারের নির্বাচনে ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন ওবামা। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ইতিবাচক ভূমিকার কারণে টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ ওবামাকে এবারের বার্ষিক প্রচ্ছদে আনতে বাধ্য হয়েছে। অন্যথায় তালেবানদের হাতে আহত বিবিসি এর ব্লগার ও মানবাধিকারকর্মী মালালাই হতেন টাইম ম্যাগাজিনের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার-২০১২’।

টাইমের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রিক স্টেনজেল সাময়িকীর বুধবার চলতি সংখ্যার উন্মোচন করেন। এতে পারসন অব দ্য ইয়ার রানার আপ হয়েছে পাকিস্তানের শিক্ষা আন্দোলনের কর্মী কিশোরী মালালা ইউসুফজাই (১৫)।

তিনি জানান, অর্থনেতিক সংকটের সময় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন। ওবামাকে নতুন আমেরিকার স্থপতি উল্লেখ করে স্টেনজেল বলেন, “আমরা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও জনসংখ্যাতত্ত্বের পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছি। ওবামা নতুন ‍আমেরিকার প্রতীক এবং এর স্থপতি।”

প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের পর ওবামা ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে টানা দু’বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। স্টিনজেল বলেন, “আসলে যারা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান না, তাদের সমর্থন পেয়েছেন ওবামা। তারা বুঝতে পেরেছেন, প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে দলীয়করণ এড়িয়ে চলেন।”

তরুণ ও সংখ্যালঘু হিস্পানিক ভোটারদের মন জয় করে নতুন মৈত্রী স্থাপন করেছেন ওবামা। ৪০ বছর আগে রোনাল্ড রিগ্যানের রাজনৈতিক ঐক্যের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন তিনি বলে মন্তব্য করেন টাইমের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক।

টাইমের সংক্ষিপ্ত তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামার পরে মালালা ছাড়া রয়েছেন ইয়াহুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মারিসা মায়ার, মিশরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তার স্ত্রী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, অ্যাপলের টিম কুক। এছাড়াও হিগস-বোসন তত্ত্বের আবিষ্কারক তিনজন বিজ্ঞানী রয়েছেন সংক্ষিপ্ত তালিকায়।

তবে অনলাইন জরিপে টাইমের পাঠকরা পারসন অব দ্য ইয়ার হিসেবে নির্বাচিত করেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে। ছয় ব্যক্তির মধ্যে থেকে উনকে বেছে নেন পাঠকরা।

প্রতিবছরই বর্ষসেরা ব্যক্তি নির্বাচন করে টাইম। ৮৫ বছর ধরে পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত করে আসছে টাইম। ১৯২৭ সালে প্রথমবার ম্যান অব দ্য ইয়ার হয়েছিলেন চালর্স লিন্ডবার্গ।

গত বছর আরব বসন্ত ও অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলনসহ সারা বিশ্বের বিক্ষোভের স্বীকৃতি হিসেবে ‘বিক্ষোভকারীদের’ পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত করেছিল সাময়িকীটি।

প্রেসিডেন্ট, রাজনৈতিক নেতা, উদ্ভাবনকারী, শিল্প উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি ইতিহাসের কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তিরাও টাইমের পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৩৮ সালে ‍অ্যাডলফ হিটলার, ১৯৪৩ সালে জোশেফ স্তালিন ও ১৯৭৯ সালে ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনি এ খেতাব পান। কখনও কোনো প্রতিষ্ঠান টাইমের এ খেতাব লাভ করে।

No comments

Powered by Blogger.