এএফপির বিশ্লেষণ- ভারতের ঔপনিবেশিক অতীতই এফডিআই নিয়ে সন্দেহের কারণ



ভারতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) নিয়ে জনমনে সন্দেহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা দেশটির ঔপনিবেশিক অতীতের তিক্ত ইতিহাসকে দায়ী করছেন। ভারতের খুচরা বাজারে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রবেশের মধ্য দিয়ে নতুন অর্থনৈতিক শোষণ শুরু হবে বলে জনমনে একধরনের আশঙ্কা রয়েছে।
স্বাধীনতার ৬৫ বছর পর ভারতের অর্থনীতি এখন অনেকটাই সমৃদ্ধ। কিন্তু ব্রিটিশদের ২০০ বছরব্যাপী শোষণের দুঃসহ স্মৃতি দেশটির জনগণ এখনো ভুলতে পারেনি।
নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মৃদুলা মুখার্জি বলেন, উপনিবেশবাদের নেতিবাচক প্রভাব জনমনে ঠাঁই করে নিয়েছে। মানুষের ভয়, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতা ও কৌশল ভারতকে পুনরায় উপনিবেশে পরিণত করতে পারে।
সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে পরিচিত এফডিআই নিয়ে ভারতের আইনসভায় গত সপ্তাহে তুমুল বিতর্ক হয়। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খুচরা পণ্যবিক্রেতা ওয়াল-মার্টসহ নামকরা অন্যান্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দাপটে ভারতের লাখ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে পথে বসতে হবে।
কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার পার্লামেন্টে এফডিআই নিয়ে ভোটাভুটিতে বিজয়ী হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বিদেশি ব্যবসায়ীদের শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন।
সমাজবাদী জনতা দলের (ইউনাইটেড) প্রধান শারদ যাদব এফডিআইয়ের বিপক্ষে ভোট দিতে আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশের প্রতি নিজ দায়িত্বের কথা ভাবুন। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ ভারতের সমৃদ্ধি কখনোই চায় না। তারা কেবল এ দেশের বিশাল বাজারটাকে পছন্দ করে। এ দেশে আরেকটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে প্রবেশ করতে দেবেন না।’
যুক্তরাজ্যের সাবেক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথম বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশাল ভারতের বিভিন্ন অংশে বাণিজ্য শুরু করেছিল। মালবাহী জাহাজে করে তারা বস্ত্র, নীল, চিনি ও মসলা চালান করত। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভেঙে দেওয়া হয়। ভারতের প্রথম স্বাধীনতাযুদ্ধ বলে খ্যাত ওই বিদ্রোহের পর উপমহাদেশে ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ শাসনব্যবস্থা (ব্রিটিশরাজ) চালু হয়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এফডিআই অনুমোদনের বিষয়টিকে ‘ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ভারতীয়রা ব্রিটিশদের বিশ্বাস করেছিল। পরিণামে কী হয়েছিল, তা সবাই জানে। এফডিআই অনুমোদনের মধ্য দিয়ে আবার ব্রিটিশ ও অন্যান্য জাতিকে ভারত শাসনের জন্য ডেকে আনা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক উদারীকরণের বিরোধিতার সমালোচনা করে ভারী শিল্প ও সরকারি উদ্যোগমন্ত্রী প্রফুল প্যাটেল বলেন, ‘আমাদের আবেগপ্রবণ হলে চলবে না। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ফিরে আসার সুযোগ নেই। বিদেশি কোম্পানিগুলোর নতুন বাজার প্রয়োজন। টাটার মতো ভারতীয় প্রতিষ্ঠানও এখন বিদেশে বিনিয়োগ করছে।’
অধ্যাপক মৃদুলা মুখার্জি বলেন, ভারতীয়দের এখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অর্জন করতে হবে। ভারত নিজ ভবিষ্যৎ বন্ধক দেবে না এবং ইতিহাসেরও পুনরাবৃত্তি হবে না।

No comments

Powered by Blogger.