আবাসন খাত হুমকির মুখে-হেলাল উদ্দিন-সহসভাপতি, এফবিসিসিআই

দেশের আবাসন খাত হুমকির মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন।
এ মুহূর্তে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবই আবাসন খাতের মূল সমস্যা অভিহিত করে তিনি বলেন, জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থেই এ মুহূর্তে আবাসন খাতের সমস্যা সমাধানে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। কারণ, প্রবাসীদের বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি এ খাতে বিপুলসংখ্যক ফ্ল্যাট অবিক্রিত থাকা ও প্রকল্প স্থগিত হয়ে পড়ায় লাখ লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন দেশের উদীয়মান এই ব্যবসায়ী নেতা। রাজধানীর মালিবাগে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসে বাংলানিউজের প্রতিবেদককে সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
হেলাল উদ্দিন এ মুহূর্তে দেশের আবাসন খাতের সমস্যা সমাধানের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, 'আবাসন খাতের সমস্যা সমাধান জরুরি। কারণ, আবাসন ব্যবসায়ীরা নানা সমস্যা মোকাবিলা করছেন। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে হুমকির মুখে পড়েছে বিপুল সম্ভাবনাময় এই খাত। অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে হাজার হাজার রেডি ফ্ল্যাট। দেশের অর্থনীতিকে রক্ষার জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট থেকে বের হতে হবে।'
হেলাল উদ্দিন বলেন, 'জাতীয় অর্থনীতি চাঙা রাখতেই আবাসন শিল্পের প্রতি সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো খাতই অবহেলার নয়। এর পরও বলব, জাতীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রেখেও আবাসন খাতের সংকট কাটছে না।' স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'নানা সমস্যার কারণে দেশের আবাসন শিল্পে স্থবিরতা নেমে এসেছে। সংযোগের অভাবে নতুন প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ। তাই বড় বড় অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না। অথচ এ খাতে লাখ লাখ মানুষের রুটি-রুজি জড়িত।'
আবাসন খাতে প্রবাসী বিনিয়োগের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে হেলাল উদ্দিন বলেন, 'আমাদের প্রবাসী ভাইরা অনেক কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠান। তাঁরা চান এই টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করতে। কিন্তু নির্মিত ফ্ল্যাটগুলোতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আবাসন খাতে বিনিয়োগ এখন অনেকটাই কমে গেছে।'
হেলাল উদ্দিন বলেন, 'বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার অনেক ইতিবাচক কাজই করেছে। আশা করব, আবাসন খাতের সমস্যা দূর করতেও তিনি মনোযোগ দেবেন।'
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে হেলাল উদ্দিন বলেন, গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় অনেককে বাধ্য হয়ে এলপি গ্যাস ব্যবহার করতে হচ্ছে। মূলত এই বাড়তি খরচের ভয়েই অনেকে ফ্ল্যাট কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এমনকি অনেক ফ্ল্যাটের নির্মাণকাজ শেষ হলেও ডেভেলপার কম্পানিগুলো তা গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করতে পারছে না।
মুনাফার বাইরে ব্যবসায়ীদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, 'ব্যবসায়ীরা শুধু ব্যবসা করেন- এটা ভাবা ঠিক নয়। তাঁরা ব্যবসা করেন বলেই মানুষের কর্মসংস্থান হয়, দেশের অর্থনীতি সচল থাকে। এই সত্য কথাটা সবার উপলব্ধি করতে হবে। তবে বড় ব্যবসা এখন মাঝারি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসাকে গিলে খাচ্ছে। এটা ঠেকাতে সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে।'
এক প্রশ্নের জবাবে হেলাল উদ্দিন বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অবশ্যই ব্যবসাবান্ধব। কিন্তু কিছু সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ, সাধারণ মানুষের স্বার্থ- সবটাই সরকারকে দেখতে হবে।'
সরকারের ভালো কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি ভুল কাজের বিরোধিতা প্রসঙ্গে হেলাল উদ্দিন বলেন, 'ঘড়ির কাঁটা পেছানো, যানজট কমাতে এলাকাভিত্তিক মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত, রমজানে পণ্য রপ্তানি, প্রশাসক বসানোর ক্ষেত্রে কম্পানি আইনের বিরোধিতা- এসব ব্যাপারে আমরা সোচ্চার। সরকারকেই দেশের দোকান মালিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলো সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে।'
হেলাল উদ্দিন বলেন, 'এফবিসিসিআইয়ের রমজানের বাজার মনিটরিং, ফরমালিনমুক্ত বাজার ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। সেই সঙ্গে আমরা অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করব।'
ব্যাংক সুদ কমানো প্রসঙ্গে হেলাল উদ্দিন বলেন, 'ব্যাংক যে ঋণ দেয়, তা দিয়ে শিল্পোন্নয়ন সম্ভব নয়। মুদ্রানীতির কারণে ব্যাংকের সুদ অনেক বেশি। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণ পাচ্ছেন না। ফলে অনেক উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী বা গ্রামের উপকারে তেমনভাবে কাজে আসছে না।'
ব্যাংকের কাছে ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ সহযোগিতা পাচ্ছেন না উল্লেখ করে ওই ব্যবসায়ী বলেন, এসব কারণে ব্যবসায়ীরা বর্তমানে অনেকটাই দিশেহারা। তিনি ব্যাংক ঋণে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার দাবি জানান। এ জন্য এফবিসিসিআইয়ের নতুন কমিটি কাজ করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ ব্যাপারে সরকার এবং ব্যাংকগুলোকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
দেশের ভুট্টা ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেইজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে হেলাল উদ্দিন ভুট্টা উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতি জোর দেন। তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভুট্টা বিদেশে রপ্তানির ব্যাপারে সরকারি নীতিমালা থাকা দরকার। কারণ দেশে ভুট্টার ব্যাপক আবাদ হচ্ছে এবং এর ফলন ভালো। রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে ভুট্টা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি মনে করেন, ভুট্টা চাষ উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, রংপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর এলাকার অর্থনীতি পরিবর্তনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।
পরিচিতি : উদীয়মান ব্যবসায়ী সংগঠক মো. হেলাল উদ্দিন এফবিসিসিআইয়ের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে দুই বছরের জন্য সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। গত কমিটিতেও তিনি সংগঠনের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ভুট্টা ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেইজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ছাত্রজীবনে রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন হেলাল উদ্দিন। নিজের আবাসন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নীলময় গ্রুপের মাধ্যমে দীর্ঘদিন তিনি দেশের আবাসন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

No comments

Powered by Blogger.