মোটা হওয়ার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া

মানুষের বেশি মোটা হওয়ার জন্য দায়ী একটি ব্যাকটেরিয়াকে শনাক্ত করেছেন চীনের গবেষকরা। সাংহাইয়ের জিয়াও তং বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞানের অধ্যাপক ঝাও লিপিং জানান, এ ব্যাকটেরিয়া মানুষের জিন থেকে চর্বি উৎপাদন করতে পারে।
মানবদেহের এ স্থূলতা কমাতে গবেষকরা একধরনের খাদ্যও উদ্ভাবন করেছেন। গতকাল বুধবার চীনা সংবাদপত্র চায়না ডেইলিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অতিভোজন কিংবা অলসতার তুলনায় এন্টারোব্যাক্টার নামের একটি ব্যাকটেরিয়া মোটা হওয়ার পেছনে সরাসরি দায়ী। এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর অণুজীববিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়াল ইকোলজির এক সাময়িকীতে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়। এতে দেখানো হয়, যারা অনেক মোটা তাদের অন্ত্রের বাইরে থেকে ব্যাকটেরিয়াটি অন্ত্রে চর্বি তৈরি করতে পারে। ওই একই ব্যাকটেরিয়া রোগমুক্ত ইঁদুরের শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণেও বাধা দেয়। একজন খুবই মোটা মানুষের (প্রাথমিক ওজন ১৭৫ কেজি) ওপরে এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, এ ব্যাকটেরিয়াটি এন্ডোটক্সনি তৈরি করতে পারে। তার শরীরের ৩৫ শতাংশ অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার জন্য দায়ী এ জীবাণুটি। স্থূলতারোধে চীনা বিজ্ঞানীরা যে বিশেষ ধরনের খাবার উদ্ভাবন করেছেন, তা ওই রোগীকে খাওয়ানোর পর তার ওজন ৫১ দশমিক ৪ কেজি কমে গেছে। এরপর ওই ব্যক্তি উচ্চরক্তচাপ ও হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনির আধিক্য) থেকেও সেরে উঠেছে।
গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঝাও জানান, ওই ব্যাকটেরিয়াটি যে এন্ডোটক্সনি তৈরি করে, তা চর্বি উৎপাদনকারী জিনকে সক্রিয় করে তুলতে সক্ষম। একই সঙ্গে যে জিনটি চর্বি কমায়, সেটাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। স্থূলতার সঙ্গে অন্ত্রের অণুজীবের সম্পর্কটা তিনি আবিষ্কার করেন তাঁর এক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। ২০০৪ সালের কথা। তিনি ইঁদুর মোটা হওয়ার সঙ্গে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সম্পর্ক নিয়ে পড়ছিলেন। তখনই তাঁর মাথায় আসে যে, এ ধরনের সম্পর্ক তো মানুষের শরীরেও থাকতে পারে। তার পরই শুরু করেন এ গবেষণা। তিনি বলেন, 'দীর্ঘস্থায়ী রোগ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের পেছনে পাকস্থলীর ব্যাকটেরিয়া বিরাট ভূমিকা রাখে। অনেক কারণেই মানুষ মোটা হতে পারে। যেমন_কম শারীরিক পরিশ্রম, অতিরিক্ত ক্যালরি, জিন, পরিবেশ এবং পাকস্থলীর ব্যাকটেরিয়া। তবে এ মোটা হওয়াকে কিভাবে রোধ করা যায়, নতুন এ গবেষণা তারই পথ দেখিয়েছে।'
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ১৯৮০ সালের পর থেকে বিশ্বে মোটা মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০৮ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্বের প্রায় ৫০ কোটি মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন। সূত্র : এএফপি, হিন্দু।

No comments

Powered by Blogger.