পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি-সাত আসামিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ

পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার এজাহারের কপিসহ একাধিক তথ্য বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটন সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে এসব তথ্যের অনুলিপি বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসেও পাঠিয়েছে দুদকের তদন্ত টিম।
গতকাল বুধবার দুদক কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া কানাডার আদালত থেকে রমেশ সাহার আলোচিত ডায়েরির অনুলিপি পেতে দুই-এক দিনের মধ্যে চিঠি পাঠানো হবে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞাসহ সবাইকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলায় আসামির সংখ্যা সাত। দুদকের তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন। তিনি আরো জানান, মামলার তদন্তের জন্য গত মঙ্গলবার গঠিত চার সদস্যের কমিটি আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবে। এতে উপস্থিত থাকবেন তদন্ত কমিটির সমন্বয়কারী দুদকের পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
গতকাল সন্ধ্যায় দুদক কমিশনার এম সাহাবউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, 'এজাহার ও কিছু কাগজপত্র বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে আজ (বুধবার) পাঠানো হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।' তাঁরা যেন দেশত্যাগ না করতে পারেন সে বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধা যেন না আসে, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আসামিদের দেশ ছাড়া হওয়া ঠেকাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার বলেন, 'এ বিষয়ে এনকোয়ারি টিমকে বলা হয়েছে যেন তারা প্রপার স্টেপ নেয়।'
দুদকের তদন্ত দলের একজন কর্মকর্তা বলেন, এজাহারের কপিসহ মামলার বর্তমান অবস্থা, আসামি গ্রেপ্তার এবং কেউ যেন পালাতে না পারেন সে ক্ষেত্রে দুদকের ভূমিকা, কমিশনের ফরোয়ার্ডিং, দুদকের তদন্ত টিম পরবর্তী সময়ে কী কী পদক্ষেপ নেবে এসব বিষয় উল্লেখ্য করে গতকাল চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। কমিশন সব আসামিকেই গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতেও আসামিদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু গা ঢাকা দেওয়ায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে তারা বেশি দিন পালিয়ে থাকতে পারবে না।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, 'মামলার পর তদন্তের জন্য যে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটির আনুষ্ঠানিক বৈঠক বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় হবে। সেই বৈঠকের পর আমাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।'
তদন্ত দলের অন্য একজন কর্মকর্তা দুই সাবেক মন্ত্রী প্রসঙ্গে বলেন, মামলায় সরাসরি আসামি করা না হলেও সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল হাসান চৌধুরী পার পেয়ে যাননি। এরই মধ্যে কানাডীয় নাগরিক রমেশ সাহার ডায়েরির একটি অনুলিপি সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কানাডার আদালত থেকে সেই ডায়েরির অনুলিপি পেতে আইনিপ্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে সেই চিঠি কানাডায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। ডায়েরির কপি পেলেই দালিলিক প্রমাণ হিসেবে সেটা উপস্থাপন করা যাবে। তদন্তের পর এই দুজন চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।
দুদক সূত্র জানায়, মামলার প্রধান আসামি মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞার ধানমণ্ডির বাসায় তল্লাশি চালানো হলেও তাঁকে সেখানে পাওয়া যায়নি। উইং কমান্ডার তাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম এ অভিযান পরিচালনা করছে। দুদক সূত্র জানায়, র‌্যাবের সহায়তায় দুদকের এ টিম অভিযান চালায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে এই টিমকে সহযোগিতা করছে। আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সে জন্য মঙ্গলবার বিকেলে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুদক এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে। তবে আসামিদের মধ্যে এসএনসি-লাভালিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, রমেশ সাহা, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক পরিচালক মো. ইসমাইল কানাডায় অবস্থান করছেন। অন্য চার আসামি যাতে আদালতে হাজির হয়ে অগ্রিম জামিন নিয়ে বিচারপ্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতে না পারেন সে জন্য আদালতে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি রাখা হয়েছে বলে জানায় দুদক সূত্র।
গত সোমবার পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলায় সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দরপত্র মূল্যায়নে গঠিত কমিটির সদস্যসচিব কাজী মো. ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট লিমিটেডের (ইপিসি) উপপরিচালক মো. মোস্তফা। এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক (আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের) মোহাম্মদ ইসমাইল, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহা ও কেভিন ওয়ালেস।

No comments

Powered by Blogger.