রাজশাহী সিলেটে জামায়াতের হরতালে ভাঙচুর বোমাবাজি-আজ ১২ দলের হরতাল

বিক্ষিপ্তভাবে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা অর্ধদিবস হরতাল ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে।
দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান ও প্রচার সম্পাদক তাসনিম আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালন করে দলটি। এ সময় বগুড়ায় একটি ঝুটবোঝাই ট্রাকে আগুন দেয় পিকেটাররা। রাজশাহীতে পুলিশের গাড়িতে হাতবোমা নিক্ষেপ এবং সিলেটে গাড়ি ভাঙচুর ও চকোলেট বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় হরতাল সমর্থকরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই বিভাগে আহত হয়েছে অন্তত ১৮ জন। এ সময় ২৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিস্তারিত আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে :
বগুড়া : দুপুর ১২টার দিকে শহরতলির সিলিমপুর এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে রংপুর অভিমুখী ঝুটবোঝাই একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অনেকক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। এ সময় দুজনকে আটক করে পুলিশ। এর আগে শাহজাদপুর উপজেলার ফটকি ব্রিজ এলাকায় তিনটি ও বগুড়া শহরের তিন মাথা রেলগেট এলাকায় একটি গাড়ি ভাঙচুর করে পিকেটাররা।
সাবগ্রাম ও লাহিড়িপাড়ায় পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দীঘলকান্দি মাঝিপাড়ায় পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুটে পিকেটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হন সদর উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রফিকুল আলম।
রাজশাহী : সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর কাজলা এবং শালবাগান মোড় এলাকায় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে হাতবোমা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে আহত হয় পাঁচজন এবং আটক করা হয় দুই শিবিরকর্মীকে। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় আরো ১০ জনকে। সকাল ৭টার পর শহরের কোনো রাস্তায় শিবিরকর্মীদের দেখা যায়নি। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন মতিহার থানার এসআই শাহনাজ পারভীন।
সিলেট : সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে ঝটিকা মিছিল করে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। নগরের টিভিগেট, সুবহানিঘাট, সোনারপাড়া, মিরাবাজার, চৌকিদেখি, দক্ষিণ সুরমা, লামাবাজার, তেমুখীসহ কয়েকটি এলাকায় গাড়ি ও রিকশা ভাঙচুর করে তারা। এ সময় তারা রাস্তায় বাঁশ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে কয়েকটি চকোলেট বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের চোরাগোপ্তা হামলায় ট্রাক-বাসসহ অন্তত ২০টি যানবাহন ভাঙচুরের শিকার হয়। মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে সাতজনকে আটক করা হয় বলে দাবি করেছে জামায়াত। সকাল ৭টার পর থেকে শহরের কোনো সড়কেই হরতালকারীদের দেখা যায়নি। জৈন্তাপুর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে শিবিরকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পাবনা : সকালে হরতালকারীরা ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের ধোপাঘাটে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চন্দন কুমার চক্রবর্তীর মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে ধোপাঘাট, বাঙ্গাবাড়িয়া ও পুষ্পপাড়া এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিকেলে জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার এক পর্যায়ে বাঙ্গাবাড়িয়া জামায়াতের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় জামায়াত-শিবির ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এতে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : সকালে শিবিরকর্মীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজ মোড় ও শিবতলা মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে ও লাঠিসোঁটা নিয়ে পিকেটিং শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। গতকাল পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিও ছিল মাঠে। এ সময় ভোলাহাট উপজেলা শিবিরের সভাপতি মাসুদ রানা ও সেক্রেটারি মাসুদ রানা সুমনকে আটক করে পুলিশ।
মৌলভীবাজার : হরতাল চলাকালে জেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে কুলাউড়া-জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা থেকে ছয় জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে কুলাউড়া ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মো. মোস্তফা ও কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক জামি আহমদ রয়েছেন। এ ছাড়া হবিগঞ্জ ও গাইবান্ধায় ঢিলেঢালাভাবে হরতাল পালিত হয়েছে।
এদিকে জয়পুরহাট শহরে সমমনা ১২টি ইসলামী দলের আজকের হরতালের সমর্থনে গতকাল সন্ধ্যায় ঝটিকা মিছিল বের করা হয়। এ সময় জয়পুরহাট ও ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িসহ ছয়টি গাড়ি ভাঙচুর করে মিছিলকারীরা। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান জয়পুরহাট সদর থানার ওসি আবদুর রশিদ।
ঢাকায় আধাবেলা, সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আজ, রংপুর আওতামুক্ত : আজ বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকায় আধাবেলা এবং রংপুর বাদে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে ইসলামী ও সমমনা ১২ দল। সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় আজ রংপুর হরতালের আওতার বাইরে থাকবে। ইসলাম নির্মূলের চক্রান্তকারীদের প্রতিহত করা ও বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাতিলের বিষয়ে বাম দলগুলোর হরতাল পালনের প্রতিবাদে এ হরতাল আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, ঘোষণা অনুযায়ী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের কথা থাকলেও আজ বৃহস্পতিবার কওমি মাদ্রাসাগুলোর পরীক্ষা শুরু হওয়ায় রাজধানীতে হরতালের সময় কমিয়ে আট ঘণ্টা করা হয়েছে। রাজধানীতে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালন করা হবে। এ ছাড়া রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের জন্য রংপুরকে হরতালের বাইরে রাখা হয়েছে।
আজকের হরতালে সবার সহযোগিতা চেয়ে জ্বালাও-পোড়াও ও গাড়ি ভাঙচুর না করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ১২ দলের সদস্যসচিব ও খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ।
হরতালে সমর্থন নেই শরিকদের : এদিকে আজকের হরতালে সমর্থন নেই জানিয়ে গতকাল বিবৃতি দিয়েছে ১২ দলের আহ্বায়ক ও মাসিক মদীনার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক ও খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা ইসহাক, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুর রাকিব ও মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট নুরুল হক মজুমদার ও মহাসচিব আবুল খায়ের, ভাসানী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মমতাজ চৌধুরী, ইসলামিক পার্টির প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট আবদুল মোবিন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।
জোটের শরিকদের সমর্থন নেই, তবে কেন হরতাল? এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা জাফরুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যাঁরা হরতালে সমর্থন দেননি, তাঁরা আমাদের না জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।'

No comments

Powered by Blogger.