রামুর বৌদ্ধ পল্লিতে হামলা- মূল হোতারা কোথায়? by আব্দুল কুদ্দুস

আড়াই মাস পরেও কক্সবাজারের রামু বৌদ্ধবিহার ও বসতিতে হামলার ঘটনায় জড়িত মূল হোতাদের শনাক্ত করা যায়নি। যদিও পুলিশ ইতিমধ্যে হামলার ঘটনায় জড়িত ৩০৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে একাধিকবার।
আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু তার পরও কার পরিকল্পনায় এই হামলা? তা বের করা সম্ভব হয়নি।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননাকর বিতর্কিত ছবি প্রদর্শন নিয়ে উগ্র ধর্মান্ধগোষ্ঠী হামলা চালিয়ে রামুর ১২টি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার ও ৩০টির বেশি বসতঘর ধ্বংস করে। পরের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া ও টেকনাফে আরও সাতটি মন্দির ও ১১টি বসতিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় ১৯টি মামলায় আসামি করা হয় প্রায় ১৬ হাজার মানুষকে। অথচ মামলার প্রধান আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। ফেসবুক অ্যাকাউন্টের উত্তম কুমার বড়ুয়ার হদিসও এখনো পাওয়া যায়নি।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পর কম্পিউটার দোকানের মালিক ফারুক, ইন্টারনেটে ফেসবুকের ছবি সরবরাহকারী মুক্তাদির, হামলার সময় গাড়িতে করে লোকজন নিয়ে আসার হোতা শহীদুল ইসলাম ওরফে ভিপি বাহাদুর, মন্দিরে অগ্নিসংযোগকারী উখিয়ার প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি শাহজাদা ও মিজানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে আনলেও তাঁরা হামলার পরিকল্পনাকারী অথবা মূল হোতাদের ব্যাপারে কোনো তথ্য দেননি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও রামুতে হামলার ঘটনা তদন্তে গঠিত চার সদস্যের সরকারি তদন্ত দলের সদস্য মো. বাবুল আকতার প্রথম আলোকে জানান, এ পর্যন্ত আসামিদের দেওয়া জবানবন্দিতে হামলার পরিকল্পনা এবং মূল হোতাদের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে হামলার ঘটনার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িত বহু লোককে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বাবুল আকতার বলেন, ‘বৌদ্ধবিহারে অগ্নিসংযোগকারী রামু আরএসও জঙ্গি নেতা ছালামত উল্লাহ ও ইব্রাহিমকে ধরা গেলে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেত। আমরা এখন ওই পথে অগ্রসর হচ্ছি।’
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুণ বড়ুয়া জানান, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক আপাতত কেটে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধবিহার এবং বসতি নির্মাণ ও উন্নয়নের ফলে রামুর চেহারা পাল্টে গেছে। কিন্তু আস্থার সংকট এখনো রয়ে গেছে।
সীমা বিহারের আবাসিক পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, ঘটনার আড়াই মাস অতিক্রান্ত হলো, অথচ এখনো চিহ্নিত আসামিরা ধরা পড়েনি। তারা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে এদের চেহারা দেখা গেলেও পুলিশ তাদের ধরছে না। লুণ্ঠিত কয়েক শ বুদ্ধমূর্তিরও খবর নেই। প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থার পরিবেশ ফিরে আসত।
গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে রামুর বৌদ্ধপল্লি ঘুরে দেখা গেছে, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের তৎপরতায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধমন্দির ও বসতির নির্মাণকাজ চলছে। ইতিমধ্যে বসতির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এখন বৌদ্ধবিহারের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
রামুর উত্তর মিঠাছড়ি বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনাকেন্দ্রের পরিচালক করুণাশ্রী ভিক্ষু বলেন, সরকারি খরচে আমরা নতুন বিহার পাচ্ছি, তাতে সম্প্রদায়ের লোকজন খুশি। কিন্তু বৌদ্ধমন্দিরে হামলায় জড়িত এবং মূর্তি লুণ্ঠনকারীদের ধরা হচ্ছে না দেখে হতাশ হচ্ছি।
পুলিশ সুপার মো. আজাদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরার জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। গত ১০ দিনে অন্তত ২০ জন তালিকাভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর লুণ্ঠিত মূর্তিগুলো উদ্ধারেরও চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে মূর্তিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.