এএফপির বিশ্লেষণ- চাভেজ-অধ্যায় অবসানের আভাস

পশ্চিমাদের নিরন্তর চাপ আর বিরোধীদের টালবাহানা সামান্য টলাতে পারেনি তাঁকে। কিন্তু এবার তিনি দৃশ্যত নতি স্বীকার করলেন মরণব্যাধি ক্যানসারের কাছে
এক যুগের বেশি সময় ধরে দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ চালাচ্ছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজ। পশ্চিমাদের নিরন্তর চাপ আর বিরোধীদের টালবাহানা সামান্য টলাতে পারেনি তাঁকে। কিন্তু এবার তিনি দৃশ্যত নতি স্বীকার করলেন মরণব্যাধি ক্যানসারের কাছে।
কিউবায় অস্ত্রোপচার করতে যাওয়ার আগে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর নাম ঘোষণা করে গেছেন।
চাভেজ ঘোষণা দিয়েছেন, উত্তরসূরি হিসেবে মাদুরোই তাঁর প্রথম পছন্দ। আগামী নির্বাচনে মাদুরোকে ভোট দিতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘আপনারা মাদুরোকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করুন। অন্তরের অন্তস্তল থেকে আমি এ আহ্বান জানাচ্ছি।’
চাভেজের এই ঘোষণার পর অনেকে ধারণা করছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে গিয়ে থাকতে পারে। সুস্থ হয়ে তিনি আবার রাজনীতিতে ফিরে না-ও আসতে পারেন। যদি সে রকম কিছু হয়, তাহলে ভেনেজুয়েলায় চাভেজ অধ্যায়ের অবসান হতে পারে।
তেলের অর্থে দরিদ্র জনগণের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসুবিধা নিশ্চিত করে সাধারণ ভেনেজুয়েলানদের কাছে জনপ্রিয় নেতা হয়েছেন চাভেজ। তবে দরিদ্রদের জন্য কাজ করলেও গরিব-ধনীর বৈষম্য এখনো কমিয়ে আনতে পারেননি। আবার তাঁর সময়েই অপরাধ, দুর্নীতি ও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
ক্যানসারের চিকিৎসার পর গত বছর থেকেই শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন চাভেজ। অস্ত্রোপচার ও কেমোথেরাপির কারণে তাঁকে ন্যাড়াও হতে হয়। ওজনও বেড়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবস্থানের কারণে সারা বিশ্বে অগ্নিমূর্তি হিসেবে পরিচিত এই বাম নেতা। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ, সাবেক লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ও সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে সখ্য থাকায় তিনি বরাবরই মার্কিনদের চক্ষুঃশূল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে ‘শয়তান’ আখ্যা দিয়ে সেই শত্রুতা বাড়ে আরও কয়েক গুণ।
১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া চাভেজ কারাকাসের সামরিক একাডেমিতে পড়াশোনা করেন। দুবার বিবাহবিচ্ছেদ করেন তিনি। রয়েছে চার সন্তান।
কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজের বিরুদ্ধে ১৯৯২ সালে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেন তখনকার লেফটেন্যান্ট কর্নেল চাভেজ। ওই ঘটনায় দুই বছর সাজা খেটেই জাতীয় বীর বনে যান তিনি। ছয় বছর পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী জোটের প্রতিনিধিত্ব করে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন।
১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও তিনি আবারও বললেন, তাঁর সমাজতান্ত্রিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে আরও একটি মেয়াদ দরকার। তবে বিরোধীরা বলছেন, চাভেজ কেবল নিজের স্বার্থে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চান। এ লক্ষ্যে ২০০৯ সালে সংবিধান সংশোধনও করেন। এর আওতায় বহুবার নির্বাচন করতে পারবেন একজন প্রেসিডেন্ট।
লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ফ্রি ট্রেড এরিয়া অব দি অ্যামেরিকাসের বিকল্প বামপন্থী সংগঠন সিইএলএসি পরিচালনা করছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট। তিনি রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলোর কাছ থেকে অস্ত্র কিনে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রবাহিনীর যন্ত্রণা বাড়িয়েছেন আরও।
প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার সশস্ত্র বাহিনী ও প্রধান রাজনৈতিক দলটিরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন চাভেজ। বিরোধীদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট ও বিচার বিভাগেও চাভেজের অনুসারীদের আধিক্য। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.