তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ, প্রতিবেদনের ২৯টি সুপারিশই গ্রহণ করেছেন হিলারি- বেনগাজির উপদূতাবাসে নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না

লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন উপদূতাবাসে নিরাপত্তাব্যবস্থা মোটেই পর্যাপ্ত ছিল না। আর এই সুযোগে উপদূতাবাসে সন্ত্রাসী হামলা চালানো সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনায় পররাষ্ট্র দপ্তরের পদ্ধতিগত ব্যর্থতা রয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে সমন্বয়হীনতাও ছিল।
বেনগাজিতে হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার এই দিকগুলো উঠে এসেছে। তিন মাসের তদন্ত শেষে গত মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি রিভিউ বোর্ড (এআরবি)। প্রতিবেদনে ওই ঘটনায় ব্যর্থতার জন্য কোনো কর্মকর্তাকে নির্দিষ্টভাবে দায়ী করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এআরবির ২৯টি সুপারিশই গ্রহণ করেছেন। তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি বলেন, প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো দ্রুত ও সম্পূর্ণ প্রয়োগ করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেসব মার্কিন দূতাবাস বা উপদূতাবাস বেশি ঝুঁকিতে আছে, সেখানে অতিরিক্ত মেরিন সেনা পাঠানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দূতাবাস ও উপদূতাবাসগুলোর যেসব কর্মকর্তা অতিরিক্ত ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাঁদের দেখভাল করতে পররাষ্ট্র বিভাগের একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার বেনগাজি শহরে মার্কিন উপদূতাবাসে এক সন্ত্রাসী হামলা হয়। এতে রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেন্সসহ চারজন মার্কিন নাগরিক নিহত হন। শুরুতে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত সুসান রাইস বলেছিলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে সারা বিশ্বে যে প্রতিবাদ চলছে, তারই ধারাবাহিকতায় এ হামলা হয়েছে। রাইসের এ মন্তব্যে সরকারের ভেতরে ও বাইরে তীব্র সমালোচনা হয়। বিশেষ করে রিপাবলিকানদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরে অবশ্য সন্ত্রাসী হামলার কথা বলা হলেও ততক্ষণে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ে। ২০১৩ সালের গোড়াতে হিলারির পদত্যাগের পর তাঁর জায়গায় রাইসেরই আসার সম্ভাবনা ছিল। তবে ১৩ ডিসেম্বর রাইস আকস্মিক ঘোষণা দেন, তিনি এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। কারণ, নিয়োগের প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত করতে গিয়ে অনেক মূল্য দিতে হতে পারে।
তদন্ত প্রতিবেদনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সক্রিয় নেতৃত্বের ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়। উপদূতাবাসের নিরাপত্তা যে হুমকির মুখে, সে বিষয়ে গোয়েন্দারা ‘তাৎক্ষণিক’ ও ‘সুনির্দিষ্ট’ কোনো নির্দেশনা দিতে পারেনি।
উপদূতাবাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদ্ধতিগত ব্যর্থতার কথা উঠে এলেও, এ ঘটনায় কোনো কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মেলেনি। তাই কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়নি প্রতিবেদনে।
হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পররাষ্ট্র বিভাগে কর্মরত সব কূটনীতিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বড় দায়িত্ব তাঁর। মার্কিন দূতাবাস ও উপদূতাবাসগুলোতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর ব্যাপারে কংগ্রেসের কাছে অনুরোধ জানাবে। এএফপি ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.