খাদ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ নিয়ে যোগ-বিয়োগ চলছেই

খাদ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ নিয়ে যোগ-বিয়োগ চলছেই। অধিদপ্তরে ১০টি শ্রেণীর (ক্যাটাগরি) এক হাজার ৫৫২টি পদে ‘যথেষ্টসংখ্যক’ রাজনৈতিক কর্মী ও পছন্দের প্রার্থীর নিয়োগ নিশ্চিত করতে এখন নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে।
লিখিত পরীক্ষার ফলাফল যা-ই হোক, মৌখিক পরীক্ষায় তাঁদের উতরে দেওয়ার জন্য পরীক্ষা ‘বিকেন্দ্রীকরণ’ করার চেষ্টা চলছে।
‘বিকেন্দ্রীকরণ’ কৌশল হিসেবে সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কমিটি কিংবা খাদ্য অধিদপ্তরের পরিবর্তে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হবে বিভাগীয় প্রশাসনকে। তবে সরকারি চাকরির নিয়োগবিধিতে এমন বিধান নেই। নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় এমন পদক্ষেপ নেওয়ার নজিরও বিরল। এক বছর আগে এসব পদে লিখিত পরীক্ষা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র জানায়, বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যে কয়েকজন বিভাগীয় কমিশনারকে অবহিত করা হয়েছে। তাঁদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তবে নিয়োগবিধিতে না থাকায় বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলছে। এ কারণে গত এক বছরেও নিয়োগের এই প্রক্রিয়া শেষ করা যায়নি।
এর আগে নিয়োগের এই প্রক্রিয়া বাতিল করে দেওয়ার পথ খোঁজা হচ্ছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিলে মামলায় পড়ে নিয়োগ-প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ মেয়াদে ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কায় সেই চিন্তা থেকে সরে এসেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে যেকোনো অজুহাত দেখিয়ে কয়েক ধরনের পদে নিয়োগ এখনো বাতিল করা হতে পারে বলে সূত্রগুলো জানায়।
খাদ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেণীর ওই পদগুলোতে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু করা হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। সর্বশেষ দুটি পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ২৫ মে। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল চূড়ান্ত করা হলেও মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য প্রার্থীদের ডাকা হয়নি।
সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলো জানায়, কয়েক ধরনের পদে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বিভিন্ন এলাকার সাংসদ, সরকারি দলের নেতা ও তদবিরবাজেরা নিয়োগ-প্রক্রিয়া বাতিল করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। কারণ, ওই ফলাফলে তাঁদের সুপারিশ করা ‘যথেষ্টসংখ্যক’ রাজনৈতিক কর্মী ও পছন্দের লোক নির্বাচিত হননি। এই চাপের কারণে নিয়োগ-প্রক্রিয়া বাতিলের পথ খোঁজা হচ্ছিল। কিন্তু কোনো কর্তৃপক্ষ বাতিলের দায়িত্ব নিতে রাজি না হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষা ‘বিকেন্দ্রীকরণ করার’ কৌশল নেওয়া হচ্ছে।
খাদ্য পরিদর্শক পদের কয়েকজন প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের লিখিত পরীক্ষা হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁদের অনেকেই এখন ঢাকায় অবস্থান করে নিয়মিত চাকরির খোঁজ-খবর নিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে ঘোরাঘুরি করছেন।
খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগ করা হবে ৩২৮ জন। পরীক্ষা দিয়েছেন প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার। উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে প্রতিটি পদের বিপরীতে ১০-১২ জন করে প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষার জন্য রাখা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রগুলো জানায়। এই অবস্থায় অনেক প্রার্থী ঘুষ দিয়ে হলেও চাকরি নিশ্চিত করার পথ খুঁজছেন। অনেকে দালাল ধরেছেন।
যে ১০ ধরনের পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, সেগুলো হচ্ছে: খাদ্য পরিদর্শক/কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক/অপারেটর (পেস্ট কন্ট্রোল); উপখাদ্য পরিদর্শক; সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক; উচ্চমান সহকারী; অডিটর; হিসাবরক্ষক কাম ক্যাশিয়ার; সুপারভাইজার (সাইলো); সহকারী অপারেটর; অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক এবং ডেটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর।
নিয়োগের এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি রয়েছে। এই কমিটির প্রধান হচ্ছেন খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ইলাহী দাদ খান। সদস্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) একজন প্রোগ্রামার। কমিটির সদস্যসচিব খাদ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) ইফতেখার আহমেদ।
জানতে চাইলে নিয়োগ কমিটির প্রধান বলেন, সব শ্রেণীর লিখিত পরীক্ষার ফল তৈরি হয়ে গেছে। এখন যোগ্য প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষা একাধিক স্থানে নেওয়া হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.