যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে আরও কর্মসূচি আসছে সিপিবি ও বাসদের- ৬ বছর পর মাঠে বাম দল by একরামুল হক

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করা এবং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে দেশের প্রধান দুটি বাম দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
ছয় বছর পর জাতীয় ইস্যুতে হরতাল পালনের পর সামনের মাসগুলোতে আরও কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় হচ্ছে দল দুটি।
দল দুটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী ইস্যুসহ নানা ইস্যু নিয়ে কর্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। জনসভা, পথসভা, জাগরণ অভিযাত্রার মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছেন তাঁরা। জনগণও তাঁদের ব্যতিক্রমী কর্মসূচিতে সাড়া দিচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে ঢিলেঢালাভাবে হরতাল পালিত হলেও এ দুই রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা সন্তুষ্ট। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি এবং সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাঁরা সফল হয়েছেন বলে মনে করেন।
বাম দলগুলোর শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে নাগরিকদেরও। গত মঙ্গলবারের হরতাল কর্মসূচিতে একদিকে মিছিল হয়েছে এবং তার পাশ দিয়ে চলেছে যানবাহন। এ সময় মিছিলকারীরা কোনো গাড়ি ভাঙচুর করেননি।
আগ্রাবাদের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জহিরউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটি বাম সংগঠনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেখে আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি। তাঁরা কোনো গাড়ি ভাঙচুর করেননি। কাউকে হরতাল পালনে বাধ্য করেননি। আমরা চাই রাজনৈতিক দল কর্মসূচি দেবে। সাধারণ জনগণ সেটা মেনে চলবে কি চলবে না সেটা জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।’
জানতে চাইলে সিপিবির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হরতাল ধ্বংসের নয়, সৃষ্টির। জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। ওরা তাই ধ্বংসের জন্য কাজ করেছে।’
জানা গেছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে সিপিবি ও বাসদ। তাঁদের কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে জামায়াত-শিবিরসহ সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। এ ছাড়া হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি এবং পরিবহন ও বাড়িভাড়া বৃদ্ধিসহ সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতার চিত্র তাঁরা তুলে ধরবেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) চট্টগ্রাম জেলার আহ্বায়ক মানস নন্দী বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ বাম আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বিকল্প গণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে তুলতে চাই। ’৭১-এর গণহত্যার বিচার ও শ্রমিক শ্রেণীর নানা ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলবে। এসব দাবি নিয়ে সমাবেশ, পথসভা চলবে মাসজুড়ে। এ ছাড়া দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছয়টি দলে বিভক্ত হয়ে সারা দেশে জাগরণ অভিযাত্রায় অংশ নেবেন। ৩ থেকে ৫ জানুয়ারি এই অভিযাত্রা চলবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে জনমত গঠনে জনসভা করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।’
মানস নন্দী মনে করেন এসব কর্মসূচি ঘিরে দুই দলের কর্মকাণ্ডে গতির সঞ্চার হয়েছে। জনগণের সমর্থন পেয়ে কর্মীরাও উজ্জীবিত।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নগর সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, দলের কর্মসূচি তুলে ধরতে সংগঠনের কর্মীরা মানুষের কাছে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ এ ক্ষেত্রে খুব ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও বাম দলগুলোর কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের। বিশেষ করে তরুণসমাজ এই দাবিতে সোচ্চার। পাশাপাশি সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থার কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর চাপ বেড়েছে। বাম দলগুলো মনে করছে এই পরিস্থিতিতে তারা জনগণের আরও কাছাকাছি হতে পারবে।
সিপিবি নেতা শাহ আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। এ কারণে বাড়িভাড়া ও গাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এসব ইস্যুতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে সফল হব আমরা।’

No comments

Powered by Blogger.