দক্ষিণ চীন সাগর ও সিরিয়া ইস্যুতে ভিন্নমত চীন-যুক্তরাষ্ট্রের

দক্ষিণ চীন সাগরের কয়েকটি দ্বীপের মালিকানা-সংক্রান্ত বিরোধ ও সিরিয়া সংকট সমাধানের ইস্যুতে ভিন্নমত পোষণ করছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের চীন সফরের মধ্যেই এসব বিরোধ প্রকট হয়ে উঠেছে। তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দৃঢ়করণ ও নিজ নিজ দেশে নেতিবাচক রাজনৈতিক পরিবর্তন রোধের ব্যাপারে একমত হয়েছেন দুই দেশের নেতারা।


দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগর নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যাপারে আলোচনার লক্ষ্য নিয়ে গত মঙ্গলবার চীনে পেঁৗছান হিলারি ক্লিনটন। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর এক সম্মেলন শেষে কুক আইল্যান্ডস থেকে ইন্দোনেশিয়া হয়ে চীনে পেঁৗছান তিনি। গতকাল বুধবার দিনভর হিলারি চীনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রেসিডেন্ট হু চিনথাও, প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়াবাও ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং জিয়েচির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বেইজিংয়ের গ্রেট হলে প্রেসিডেন্ট চিনথাওয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর হিলারি জানান, চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খুবই শক্তিশালী। তিনি বলেন, 'আমরা বেশ খোলাখুলিভাবে সমঝোতা ও ভিন্নমতের দিকগুলো চিহ্নিত করতে পারি। আমার মনে হয় এর মাধ্যমেই আমাদের সম্পর্কের পূর্ণতা প্রকাশ পায় এবং বিষয়টি এই সম্পর্ককে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।'
ইন্দোনেশিয়া সফরের সময় হিলারি ক্লিনটন দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের সঙ্গে বিরোধ মেটাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ানের সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। আসিয়ানভুক্ত চারটি দেশ দক্ষিণ চীন সাগরে কয়েকটি দ্বীপের মালিকানা দাবি করছে। স্প্রাটলি ও প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনসহ আরো কয়েকটি দেশের সঙ্গে চীনের বিরোধ রয়েছে। আর পূর্ব চীন সাগরের কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে বিরোধ রয়েছে জাপানের সঙ্গে। বিরোধকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ চীন সাগরে চলাচলের ব্যাপারে চীন ভীতি প্রদর্শন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে এই দ্বীপগুলো ঐতিহাসিকভাবেই চীনের অংশ বলে দাবি চীনা নেতাদের। হিলারি বলেন, আলোচনার ভিত্তিতে চীন ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আচরণবিধি প্রণয়ন করা দরকার। চীন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং জিয়েচি বলেন, 'দক্ষিণ চীন সাগরের ওই দ্বীপগুলো ঐতিহাসিক ও আইনসম্মতভাবে চীনের মালিকানাধীন।' তবে আঞ্চলিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে চীন আচরণবিধি অনুমোদন করতে রাজি আছে বলে জানান তিনি। ইয়াং আরো বলেন, 'মূল স্বার্থ ও প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলোতে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধভাবে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে।' হিলারি বেইজিংয়ে পেঁৗছানোর আগে ইয়াং বলেন, আঞ্চলিক বিরোধের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষ ভূমিকা আশা করবেন তাঁরা। প্রেসিডেন্ট চিনথাওয়ের সঙ্গে বৈঠক হলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট জি জিনপিংয়ের সঙ্গে হিলারির বৈঠক অজ্ঞাত কারণে বাতিল হয়ে যায়। জিনপিংকে চীনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বিবেচনা করা হচ্ছে।
হিলারি বেইজিংয়ে সিরিয়া, উত্তর কোরিয়াসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে সিরিয়ার ব্যাপারে চীন ও রাশিয়ার অবস্থানে হতাশ, তা গোপন কোনো বিষয় নয়। তবে চীন সিরিয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.