পবিত্র কোরআনের আলো-বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের গাভির কাহিনী

৬৭. ওয়া ইজ কালা মুসা লিকাওমিহি ইন্নাল্লাহা ইয়ামুরুকুম আন তাজবাহু বাকারাতান; কালু আতাত্তাখিজুনা হুজুওয়া; কালা আউজুবিল্লাহি আন আকুনা মিনাল জাহিলিন।৬৮. কালুদউ' লানা রাব্বাকা ইউবায়্যিল্লানা মা হিয়া। কালা ইন্নাহু ইয়াকুলু ইন্নাহা বাকারাতাল্লা ফারিদ্বুওঁ ওয়ালা বিকরুন; আওয়াতুম বাইনা জালিকা ফাফআলু-মাতুমারুন।
৬৯. কালুদউ' লানা রাব্বাকা ইউবায়্যিল্লানা মা লাওনুহা; কালা ইন্নাহু ইয়াকুলু ইন্নাহা বাকারাতুন ছাফরা-উ; ফাকিউল লাওনুহা তাছুর রুন্নাজিরিন (সুরা বাকারা, আয়াত ৬৬-৬৯)।
৭০. কালুদউ' লানা রাব্বাকা ইউবায়্যিল্লানা মা হিয়া, ইন্নাল বাকারা তাশাবাহা আলাইনা; ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু লামুহতাদুন। (সুরা বাকারা, আয়াত ৬৭-৭০)

অনুবাদ : ৬৭. যখন মুসা তার জাতিকে বলল, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের একটি গাভি জবাই করার আদেশ দিচ্ছেন; তারা বলল, হে মুসা আপনি কি আমাদের সঙ্গে তামাশা করছেন? তিনি বললেন, আমি জাহেলদের দলে শামিল হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।
৬৮. তারা মুসা (আ.)-কে বলল, আপনি আপনার প্রভুর কাছে বলুন, তিনি যেন আমাদের সুস্পষ্ট করে বলে দেন তা কেমন হবে। তখন মুসা (আ.) বললেন, অবশ্যই তা হবে এমন যেটা বুড়ো নয় আবার বাচ্চাও নয়, এর মাঝামাঝি বয়সের। অতএব যা তোমাদের বলা হচ্ছে তা-ই করো।
৬৯. তারা বলল, আপনি আপনার প্রভুকে জিজ্ঞেস করে নিন। তিনি আমাদের যেন বলে দেন এর রং কেমন হবে। তিনি বললেন, অবশ্যই বলে দেওয়া হয়েছে এর রং হবে হলুদ আর রং এত আকর্ষণীয় হবে যে যারা দেখবে তারাই পরিতৃপ্ত হবে।
৭০. তারা বলল, আপনি আপনার প্রভুকে জিজ্ঞেস করে নিন আসলে তা কী ধরনের হবে; আমাদের কাছে তো সব গাভি একই ধরনের মনে হয়; আল্লাহ চাইলে আমাদের সঠিক পথ দেখাতে পারেন।

ব্যাখ্যা : এখানে বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের একটি গাভি-সংক্রান্ত কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। বর্তমান সুরাটির নাম 'আল বাকারা', মানে গাভি বা গরু। এ কাহিনীর নামানুসারেই সম্ভবত সুরাটির নামকরণ করা হয়েছে। হজরত মুসা (আ.)-এর আমলে তাঁর বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ে এক ব্যক্তি খুন হয়েছিল। ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, সেই ব্যক্তির সুন্দরী কন্যার পাণিপ্রার্থী ছিল এক যুবক। কিন্তু সে ওই যুবকের সঙ্গে কন্যার বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছিল না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যুবকটি সেই ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ ছিল না। এ ঘটনা নিয়ে সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ চলছিল। এ অবস্থায় আল্লাহর নির্দেশে মুসা (আ.) তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের ডেকে বললেন, তোমরা একটি গাভি জবাই করো, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের একটি গাভি জবাই করার নির্দেশ দিয়েছেন। তখন সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের স্বভাবসুলভ জটিল মানসিকতার কারণে গাভিটা কেমন হবে সে ব্যাপারে পেঁচাতে থাকল। ৬৭ থেকে ৭১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত তাদের সেই পেঁচানোর বিবরণ হুবহু উদ্ধৃত করা হয়েছে। তাফসিরকাররা বলেছেন, তারা যদি বিষয়টাকে এভাবে না পেঁচিয়ে একটা গাভি জবাই করত, তবেই উদ্দেশ্য সফল হয়ে যেত। কিন্তু গাভির যে বর্ণনা তারা পেল তাতে এ রকম একটি গাভি জোগাড় করতে তাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। শেষে গাভি জবাই করা হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছিলেন গাভির এক টুকরো গোশত মৃত ব্যক্তির দেহে স্পর্শ করাতে। এতে আল্লাহর কুদরতে সেই মৃত ব্যক্তি ক্ষণিকের জন্য জীবিত হয়ে তার হত্যাকারীর নাম বলে দিয়েছিল। এটিও হজরত মুসা (আ.)-এর একটি মোজেজা। মৃত মানুষ জীবিত হয় না এটা আল্লাহর প্রকৃতি। এ কাহিনীতে উলি্লখিত মৃত ব্যক্তিও প্রকৃত অর্থে জীবিত হয়নি। তার মুখ দিয়ে আল্লাহ সত্যটা ব্যক্ত করেছেন মাত্র। আমরা জানি, সাধারণ বিচারব্যবস্থায় ও তৃতীয় পক্ষের সাক্ষীর চেয়ে ভিকটিমের অন্তিম জবানবন্দি অধিকতর গ্রহণযোগ্য। মৃত্যুর আগমুহূর্তে মানুষ বানোয়াট কিছু বলতে পারে না। এখানে আল্লাহ তায়ালা তাঁর কুদরতের মাধ্যমে মৃত্যুর পরও অন্তিম জবানবন্দিটি প্রকাশ করার সুযোগ দিয়েছেন। এভাবেই বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া একটি ঘোরতর সমস্যার সমাধান হয়েছিল।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.