ভারতে কয়লা ব্লক কেলেঙ্কারি-১০ শহরের ৩০ স্থানে সিবিআইয়ের অভিযান-পাঁচটি মামলা দায়ের

ভারতে কয়লা ব্লক বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার ১০ শহরের প্রায় ৩০টি স্থানে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)। আগের দিন সোমবার তিন মাসের তদন্ত শেষে আদালতে পাঁচটি মামলা করে সংস্থাটি।
ব্লক বরাদ্দ পাওয়া কয়েকটি সংস্থার কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে।
সিবিআই জানায়, চলতি বছরের জুনে তারা কয়লা ব্লক বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত (পিই) শুরু করে। সে অনুযায়ী, 'স্বচ্ছতার অভাবের' অভিযোগে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) প্রতিবেদন দাখিলের আগেই এ তদন্ত শুরু হয়েছে। সিএজির সম্প্রতি ওই প্রতিবেদন দাখিল করে।
বিবিসি জানিয়েছে, গতকাল সকালেই ব্লক বরাদ্দ পাওয়া পাঁচ সংস্থার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করে সিবিআই। এরপর তল্লাশি অভিযান শুরু করে তারা। দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, পাটনা, হায়দরাবাদ, ধানবাদ ও নাগপুরসহ ১০টি শহরের ৩০ স্থানে এ অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে ব্লক বরাদ্দ পাওয়া ওই পাঁচ সংস্থার কার্যালয়ও রয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) সিবিআইয়ের মামলা দায়েরের দিন সোমবার বলে জানিয়েছে। সিবিআইয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটি জানায়, মামলায় নাম উল্লেখ করা সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে_বিনি আইরন অ্যান্ড স্টিল, নব ভারত স্টিল, জেএলডি ইয়াবাতমাল, জেএএস ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং এএমআর আয়রন অ্যান্ড স্টিল। এর মধ্যে জেএলডি ইয়াবাতমালের সঙ্গে কংগ্রেস এমপি বিজয় দারদার পরিবারের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সিবিআই জানিয়েছে, গত জুনে এসব সংস্থার বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করা হয়। তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতিসহ তথ্য গোপনের সত্যতা পাওয়া যায়। কয়েকটি সংস্থা ব্লক বরাদ্দ পাওয়ার জন্যই গড়ে উঠেছিল। বরাদ্দ পাওয়ার পর লাভে তা অন্য সংস্থার কাছে বিক্রি করে দেয় তারা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের সক্ষমতা নেই এসব সংস্থার। কিন্তু বরাদ্দ পেতে তারা এ ব্যাপারে মিথ্যার আশ্রয় নেয়।
গতকাল বৈভব তুলসিয়ান নামের একজনের বাড়ি ও কার্যালয়ে অভিযান চালায় সিবিআই। তাঁর সঙ্গে বিনি আইরন অ্যান্ড স্টিলের যোগসাজশ আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে বৈভব বলেন, 'আমি জানি না কেন আমার বাড়ি ও কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হলো। ব্লক বরাদ্দ দেওয়ার পাঁচ মাস আগেই আমি আমার সংস্থাটিকে বিক্রি করে দিই। আমি বরাদ্দও পাইনি। আমার একমাত্র অপরাধ, আমি ব্লক বরাদ্দ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম।'
প্রসঙ্গত, সিএজির প্রতিবেদনের জেরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের পদত্যাগের দাবিতে সপ্তাহকালেরও বেশি সময় ধরে পার্লামেন্ট কার্যত অচল করে রেখেছে বিরোধীরা। এ দাবিতে অনড় প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা দলের (বিজেপি) সদস্যরা বরাদ্দ দেওয়া ১৪২টি ব্লকেরই বরাদ্দ বাতিলসহ তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত পার্লামেন্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। সূত্র : দ্য হিন্দু, বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.