বুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নাহিদের বৈঠক-উপাচার্যকে সরানোর 'পরোক্ষ' আশ্বাস

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে গতকাল বুধবার দীর্ঘ বৈঠকের পর বুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল বলেছে, তারা মন্ত্রীর কাছ থেকে উপাচার্যকে অপসারণের ব্যাপারে পরোক্ষ আশ্বাস পেয়েছে। মন্ত্রী তাদের এই বলে আশ্বাস দিয়েছেন, বুয়েটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে যা যা করার দরকার তা-ই করবেন।


তবে এর আগে তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে বলেছেন। ১৬ জনের প্রতিনিধিদলটি বলেছে, মন্ত্রীর কথায় তারা আশ্বস্ত হলেও ক্লাসে যাবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবেন ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীরা। তারা ক্যাম্পাসে ফিরে তাদের আলোচনার অগ্রগতি জানাবে।
অন্যদিকে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীর বক্তব্যে উপাচার্যকে অপসারণ করার ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, বুয়েটে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ যাতে বজায় থাকে এবং কেউ যাতে প্রশাসনিকভাবে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, বুয়েটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং উপ-উপাচার্যকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আর দেরি না করে ক্লাসে ফিরে যাবেন।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাতে বুয়েট শিক্ষকদের সঙ্গে মন্ত্রীর বৈঠকে উপ-উপাচার্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। শিক্ষকরা এরপর জানান, তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় আশ্বস্ত হয়েছেন, তবে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকে সরে যাচ্ছেন না এবং তাঁর প্রতি অনাস্থা নিয়েই তাঁরা ক্লাসে যোগ দেবেন। ওই বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের অপসারণের এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
সূত্র জানায়, গতকাল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী তাঁদের ক্লাসে ফিরে যেতে বারবার আহ্বান জানান। শুরুতেই শিক্ষার্থীরা মন্ত্রীকে বুয়েটের সর্বশেষ পরিস্থিতি বর্ণনা করেন এবং উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অপসারণের জন্য মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। কিন্তু মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের বলেন, 'সব দাবি মানা হবে। আগে ক্লাসে যাও।' যুক্তি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, 'ইতিমধ্যে উপ-উপাচার্যের অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মামলাও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ অবস্থায় তোমরা আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারো।' তখন শিক্ষার্থীরা মন্ত্রীকে বলেন, 'উপাচার্যকে না সরালে আমাদের ক্ষতি হবে।' কী ক্ষতি হবে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বলেন, 'উপাচার্য প্রতিহিংসার বশে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিতে পারেন, হলে আমাদের ওপর শারীরিক নির্যাতনসহ নানা জটিলতায় ফেলতে পারেন। এ কারণে আমরা উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছি না।' তখন মন্ত্রী বলেন, 'কোনো শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও একাডেমিকভাবে হয়রানি করা হবে না। তোমাদের সব দাবি বাস্তবায়ন হবে।' এরপর শিক্ষার্থীরা বলেন, 'আমরা বুয়েটে গিয়ে সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচনা করব। তাঁরা যদি আপনার (মন্ত্রী) এই আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারেন তাহলে ক্লাসে ফিরতে সমস্যা নেই।'
বুয়েট সংকট সমাধানে শিক্ষার্থীরা গত মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসার দাবি জানিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রী বুয়েট শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বিকেল থেকে শুরু হওয়া এ বৈঠক চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। বৈঠকে শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ছাড়াও বুয়েটের দুজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সংকট কিন্তু থেকেই গেল। বৈঠকে মন্ত্রী ও সচিব শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য জোর দিচ্ছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবির বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি।'
আরেকজন শিক্ষক অধ্যাপক ড. এহেসান বলেন, 'সংকট সমাধানে একটি ফাঁকি রয়েছে। মন্ত্রীর আশ্বাস যদি সত্যি হয় তাহলে এই ফাঁকি থাকবে না। নতুবা বুয়েট আবার অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে।'
বৈঠক শেষে সোয়া ৭টায় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বুয়েটে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ যাতে বজায় থাকে এবং কেউ যাতে প্রশাসনিকভাবে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো পরীক্ষার্থীর যাতে ফল পরিবর্তনও না হয় সেদিকেও নজর দেওয়া হবে। নজর থাকবে হলের নিরাপত্তার দিকেও। মন্ত্রী বলেন, "বুয়েট আমাদের গর্বের প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। আমরা চাই বুয়েটের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিরাপদে অব্যাহত থাকুক। এ জন্য সব বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকব এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে 'অ্যাকশন' নেওয়া হবে।"
বৈঠকে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি অভিপ্রিয় চক্রবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'আমরা মন্ত্রীর কাছে ক্ষোভ ও হতাশার কথা বলেছি। মন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, বুয়েটের সামগ্রিক শিক্ষার পরিবেশ ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবেন। আমরা ১৬ জন আশ্বস্ত হলেও মন্ত্রীকে বলেছি, বুয়েটে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।' এক প্রশ্নের জবাবে অভিপ্রিয় বলেন, 'আমরা উপাচার্যের অপসারণে পরোক্ষ নিশ্চয়তা পেয়েছি। এখন সবার সঙ্গে আলোচনা করব।'

No comments

Powered by Blogger.