সোনালী ব্যাংক পর্ষদের সদস্যরা পূর্ণ মেয়াদ কাটাবেন

পূর্ণ মেয়াদকাল পর্যন্ত পদে বহাল থাকছেন সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্যই। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এ সিদ্ধান্তই হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।


তসভা শেষে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, 'কম্পানি আইন অনুযায়ী বার্ষিক সাধারণ সভায় পর্ষদের এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের পদত্যাগ করার নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম মেনে চার সদস্য পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। কিন্তু পর্ষদের অন্য সদস্যদের সম্মতিতে তাঁদের পূর্ণ মেয়াদকাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।' জানা গেছে, ওই চার সদস্য হলেন- পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম, শহিদুল্লাহ মিয়া, কাশেম হুমায়ুন ও সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায়।
প্রদীপ কুমার বলেন, 'কোনো কোনো সদস্যদের মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কয়েক দিনের মধ্যে তাঁদের মেয়াদ শেষ হবে। ওই সদস্যদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা ঠিক করবে সরকার।'
তবে পর্ষদের শেষ সময়ে এসেও ঋণ কেলেঙ্কারির দায় নিতে নারাজ ব্যাংকটির পর্ষদ সদস্যরা। তবে তাঁরা এ বিষয়ে অনুতপ্ত বলে মন্তব্য করেছেন প্রদীপ কুমার। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'পর্ষদ যখন থেকে জেনেছে তখন থেকেই এ বিষয়ে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথমবারের মতো ফাংশনাল অডিট করা হয়েছে। ওই অডিটে জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে যে কর্মকর্তারা জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে, তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'
হাতছাড়া হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধারে আশাবাদ ব্যক্ত করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'এই টাকা উদ্ধারে আমরা এখনো পুরোপুরি আশাবাদী। পার্টি তো টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়নি। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা প্রায় ৪৭ একর জমি বন্ধক দিয়েছে। আরো ১৩ একর জমি বন্ধক নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সম্প্রতি আমরা পার্টিদের চিঠিও দিয়েছি।'
সোনালী ব্যাংকের একাধিক শাখায় সংঘটিত অনিয়মের ফলে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা হাতছাড়া হওয়ার ঘটনায় ব্যাংকিং কার্যক্রমে প্রভাব পড়বে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ব্যাংকিং কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে কি না তা এখনই বলা যাবে না। প্রভাব পড়তেও পারে, আবার নাও পড়তে পারে। তবে কিভাবে এই সংকট ভালোভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি।'

রেমিট্যান্স ছাড়া সব খাতেই প্রবৃদ্ধি অর্জন!
গতকাল ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভায় পরিচালনা পর্ষদের উপস্থিতিতে ব্যাংকটির ২০১১ সালের আর্থিক বিবরণী অনুমোদন হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম। সভা শেষে এমডি প্রদীপ কুমার সাংবাদিকদের জানান, আলোচ্য বছরে সোনালী ব্যাংক রেমিট্যান্স ছাড়া সব খাতেই প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
আর্থিক বিবরণী উপস্থাপনকালে প্রদীপ কুমার জানান, ২০১১ সালে সোনালী ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে এক হাজার ২৩৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ২০১০ সালে এই মুনাফা ছিল ৮৪৮ কোটি ৮২ কোটি টাকা। ২০১১ সালে ব্যাংকটি নিট মুনাফা করেছে ৯৯৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর আগের বছর (২০১০ সাল) লোকসানে ছিল। লোকসানের পরিমাণ ছিল ৯৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া আমানত ও অগ্রিম, আমদানি-রপ্তানিসহ সব খাতেই প্রবৃদ্ধি করেছে ব্যাংকটি। কেবল রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় কমেছে। ২০১১ সালে রেমিট্যান্স (ইনওয়ার্ড) আহরণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ১৫৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ছিল ১০ হাজার ৪৩৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
যেখানে প্রতিটি ব্যাংকই রেমিট্যান্স আহরণে ভালো করছে সেখানে সোনালী ব্যাংকের পিছিয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে প্রদীপ কুমার বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে পাঠানো অধিকাংশ রেমিট্যান্সই আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। তা ছাড়া রেমিট্যান্স আহরণে প্রচার প্রয়োজন। এতে বেশ খরচও আছে। আমরা এখনো এ খাতে তেমন ব্যয় করতে পারিনি।'
সোনালী ব্যাংকের দেওয়া ২০১১ সালের আর্থিক হিসাবের তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১১ সালে ব্যাংকটির সম্পদের পরিমাণ ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬৯ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ৫১ কোটি টাকা। আমানত ১১.৫২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। ২০১০ সালে এর পরিমাণ ছিল ৪৭ হাজার ৮১৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ২০.৯৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ২০১০ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৬০৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এ ছাড়া আলোচ্য বছরে ব্যাংকটির লোকসানি শাখার সংখ্যা ৯১ থেকে কমে ৬৬-তে নেমে এসেছে।
ব্যাংকটির শ্রেণীকৃত বা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০১০ সালে ছিল ছয় হাজার ৮৩১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। গত বছর এর পরিমাণ কমে ছয় হাজার ১৫৮ কোটি ৮২ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।

অর্থমন্ত্রীর অপসারণ দাবি বাম মোর্চার
সোনালী ব্যাংকের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা 'আত্মসাৎকারীদের পক্ষাবলম্বন করার' অভিযোগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অপসারণ দাবি করেছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা। গতকাল রাজধানীর তোপখানা রোডে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মোর্চার বর্তমান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, হলমার্কের বিপুল পরিমাণ অর্থ কেলেঙ্কারিকে ছোট ঘটনা বলে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর করা মন্তব্য প্রমাণ করে অর্থমন্ত্রী তাঁর দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। অবিলম্বে অর্থমন্ত্রীর অপসারণসহ ব্যাংক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম ও রেলের ভাড়া বৃদ্ধির পদক্ষেপ বাতিল করতে হবে। এই দাবিতে মোর্চার পক্ষ থেকে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের সামনে ও ১৮ সেপ্টেম্বর জেলায় জেলায় বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও কেন্দ্রীয় নেতা বহ্নিশিখা জামালী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.