সংসদে দুই এমপি-হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের শাস্তি না দিলে দায় সরকারের

সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ দুই সংসদ সদস্য বলেছেন, তা না হলে সরকারকেই এর দায়িত্ব নিতে হবে। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁরা আরো বলেন, ঘটনার সঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক সব মিলিয়ে বড় একটি চক্র কাজ করেছে।


তারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম এই দাবি করেন। ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর সভাপতিত্বে শেখ সেলিম পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিষয়টির অবতারণা করেন।
শেখ সেলিম তাঁর বক্তৃতায় বলেন, গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে সরকার জড়িত নয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার দায়দায়িত্ব সরকার নেবে না। তিনি বলেন, 'এত বড় একটা কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটল, বাংলাদেশ ব্যাংক কী করল? ২০১০ সালে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। দুই বছর হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নীরবতার পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কোনো কর্মকর্তা জড়িত আছে বলে মনে হয়। হলমার্কের এমডি তানভীর কোনো নামকরা ব্যবসায়ী নন। চার হাজার কোটি টাকা লোন দিতে হলে পরিশোধিত মূলধন কত লাগে? সোনালী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৯০০ কোটি টাকা। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হলো না। শুধু দুদকে পাঠানো হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জবাব দিয়ে তারা চলে আসছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আমি অর্থমন্ত্রীকে বলব, দুদকে না পাঠিয়ে এদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে ব্যবস্থা নিন। এই চক্র যত বড়ই হোক, এদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।'
অর্থমন্ত্রীর অতিকথনের সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, 'জানি অর্থমন্ত্রীর বয়স হয়েছে। তবে, কম কথা বলা ভালো। তিনি বলছেন, তিন-চার হাজার কোটি টাকা কোনো বড় অঙ্কের অর্থ নয়। এটা কেমন কথা! উনার কাছে তিন-চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকা না হতে পারে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটা অনেক বড় বিষয়। এ ধরনের কথা বলে সরকারকে বিব্রত করা হচ্ছে।'
তোফায়েল আহমেদ বলেন, একজন ব্যক্তি উদ্যোক্তাকে এত পরিমাণ ঋণ দেওয়া হলো। এলসির নামে বেনামে অনেকগুলো ব্যাংককে এর মধ্যে জড়িয়ে ফেলা হলো। অর্থ মন্ত্রণালয়, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও বাংলাদেশ ব্যাংক এ দায় এড়াতে পারে না। তিনি বলেন, 'সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখার একজন ম্যানেজার ওইখানে পাঁচ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন ব্যক্তিকে এতগুলো টাকা ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। তাঁকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে সরকারকে এ দায় থেকে অব্যাহতি পেতে হবে।'
সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক কারণে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের ফল সব সময় ভালো হয় না। হলমার্ক কেলেঙ্কারি তার প্রমাণ। ব্যাংকিং খাতে যাদের সামান্যতম অভিজ্ঞতা নেই, তাদের দায়িত্ব দেওয়া হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটবেই। তিনি বলেন, 'সোনালী ব্যাংকের এমডি দুদকে গিয়ে কিছু লোকের কথা বলেছেন। আমি একটা দলকে ভালোবাসি, সরকারে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করি। তাই অনেক কথা বলতে পারি না। উপদেষ্টাদের নাম পত্রপত্রিকায় এসেছে। পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, সরকারের ব্যর্থতায় আমাদেরও দায়িত্ব আছে বসে থাকলে হবে না। জনপ্রতিনিধি হিসেবে গ্রামেগঞ্জে গিয়ে এর জবাব আমাদেরকেই দিতে হয়।'

No comments

Powered by Blogger.