পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ!-বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে

বাংলাদেশের জন্য আরো একটি দুঃসংবাদ- বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশ ১০ ধাপ নিচে নেমে গেছে। ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১১৮তম। আগের বছরগুলোতেও বাংলাদেশ দু-এক ধাপ করে নিচে নেমেছিল। তা সত্ত্বেও সে সময় বাংলাদেশের প্রাপ্ত মোট নম্বর বাড়ছিল।


অন্য কিছু দেশ আরো বেশি নম্বর পেয়ে বাংলাদেশের ওপরে উঠে গিয়েছিল। এ বছর বাংলাদেশ নম্বরও কম পেয়েছে, নেমেছেও একবারে ১০ ধাপ। ২০০৪ সালের পর এটাই সবচেয়ে বড় অবনতি। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ একবারেই ২৪ ধাপ নিচে নেমে গিয়েছিল। অবশ্য এ বছর শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশই পিছিয়েছে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ২০১১ সালের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়, প্রতিবেদনটির মতামত কেবল ব্যবসায়ীদের এবং এটা কোনোভাবেই জাতীয় মতামত নয়। তা সত্ত্বেও প্রতিবেদনটি আমাদের সার্বিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই মূল্যায়ন যথেষ্ট গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। সক্ষমতা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সামান্য এগিয়েছে। এর মধ্যে আছে সন্ত্রাসবাদের হুমকি ও সংগঠিত অপরাধ হ্রাস, কর-কাঠামোর ইতিবাচক পুনর্বিন্যাস, স্বাস্থ্য ও প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি এবং বাজারের আকারের সূচকে দুই ধাপ অগ্রগতি। অন্যদিকে রাজনীতিবিদদের নৈতিকতার ওপর আস্থা, আয়-বৈষম্য কমাতে সরকারের চেষ্টা, পুলিশের সেবা, রাস্তার অবস্থা, ব্যবসায়ীদের ইন্টারনেট ব্যবহার, বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রযুক্তির আগমন, বিনিয়োগ মূলধনের প্রাপ্যতা, পুঁজিবাজারের তদারকি, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নৈতিকতা, বিচারব্যবস্থায় ঘুষ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয় অথবা এ দেশ পিছিয়ে পড়েছে।
আগের বছর বিশ্ববাজারের তুলনামূলক অস্থিরতা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি'স-এর রেটিংয়ে বাংলাদেশ তার আগের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছিল। আমাদের আশা ছিল, অন্যান্য রেটিংয়েও বাংলাদেশ তার অবস্থান ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে আমাদের সে আশার প্রতিফলন ঘটেনি। বরং কিছুটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এ কারণে যে এত দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ দু-এক ধাপ নিচে নামলেও মোট নম্বরের দিক থেকে নিজের মতো করে এগিয়ে যাচ্ছিল। এবার সেই মোট নম্বর কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ তার আগের ধারা থেকেও পিছিয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাঁরা আছেন, তাঁরা যথাযথভাবে উদ্যোগী হবেন- এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। বিরোধী দলে থাকা রাজনীতিবিদদেরও দেশের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট হতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে রাজনীতির সংস্রব তৈরি হয়েছে বলে জনগণের মধ্যে আস্থার যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, রাজনীতিবিদদের সেই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যবসায়ীদেরও নৈতিকতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রশ্নে আরো আন্তরিক হতে হবে। একসময় আন্তর্জাতিক নানা রেটিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি বড় সমালোচনা ছিল যে দেশটির রপ্তানি অতিমাত্রায় পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে পরিস্থিতির সামান্য হলেও পরিবর্তন হয়েছে। ইতিমধ্যে পোশাকের বাইরেও ওষুধসহ বেশ কিছু পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক। জাহাজ নির্মাণ শিল্পেও বাংলাদেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। বিদেশি বিনিয়োগও আসছে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিক থেকে আমাদের অগ্রগতি যথেষ্ট সন্তোষজনক না হওয়ায় অনেক উদ্যোগই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা চাই, বাংলাদেশ সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্তভাবে বিশ্ব পরিসরে নিজের ভাবমূর্তি ক্রমান্বয়ে এগিয়ে নিক। এই লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের কাছ থেকে আরো বেশি আন্তরিকতা আমাদের কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.