একের পর এক বন্ধ হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ by অভি মঈনুদ্দীন

সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর, ধর্মপাশা তথা ভাটি এলাকার সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের কাছে প্রায় চল্লিশ বছর আগে একমাত্র বিনোদন বলতে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের সিনেমা হল ‘দিলশাদ’ আর ‘মিতালী’কেই বোঝাত। মধ্যনগর, ধর্মপাশাসহ ভাটি এলাকার বিভিন্ন পরিবারের সদস্যরা দল বেঁধে মোহনগঞ্জে এসে সিনেমা দেখতেন।


কিন্তু সময়ের পালাবদলে এখন এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। ‘দিলশাদ’ আর ‘মিতালী’ হলের সামনে এখন আর সেই দর্শককে তো খুঁজে পাওয়াই যায় না, বরং কিছুদিন হল বন্ধ রেখে আবার চালু করা হয় দর্শকের হলে ফেরার প্রত্যাশায়। ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত ‘মিতালী’ সিনেমা হলটি ‘অনির্বাণ’ ছবি প্রদর্শনের মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু করে। আর ‘লালু কসাই’ ছবিটি প্রদর্শনের মধ্যদিয়ে চিরতরে বন্ধ করে দেয়া হলো হলটি। এই সিনেমা হলের মালিক ছিলেন আব্দুল আজিজ খান। ২০০৫ সালে তার মৃত্যুর পর থেকেই এর পরিচালনা নিয়ে নানা সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে গত বছর তার ছেলেরা সিনেমা হলটি বন্ধ করে দেয়। মিতালী হলের মালিকের ছেলে আসাদুজ্জামান খান লাভলু বলেন, ‘সিনেমা ব্যবসায় এখন আর আগের দিন নেই। তাই বন্ধ করে দিয়েছি। খুব শিগগিরই এখানে ভিন্ন কিছু করার চিন্তা-ভাবনা চলছে।’ মোহনগঞ্জের প্রথম সিনেমা হল হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘কংস টকিজ’। ‘হীরামন’ ছবি প্রদর্শনের মধ্যদিয়ে ১৯৭৪ সালে এর যাত্রা শুরু হলেও ১৯৭৭ সালে এর মালিকানা মো. সিরাজ মিয়া ও আব্দুল আজিজ খানের কাছ থেকে চলে আসে কাচু মিয়ার কাছে। তখনই এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘দিলশাদ’। ১৯৮৭ সালে কাচু মিয়ার মৃত্যুর পর তার তিন ছেলে আসলাম, সালাম ও লিয়নের তত্ত্বাবধানে চলে হলটি। কিন্তু ব্যবসায়িকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় গত রমজান মাসের পুরোটা সময় ‘দিলশাদ’-এ সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধ ছিল। ঈদের দিন থেকে শাকিব খান, সাহারা অভিনীত ‘চ্যালেঞ্জ’ ছবিটি দিয়ে আবারও এর প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। তবে এর ম্যানেজার দীলিপ কুমার দত্ত মিলন বলেন, ‘মালিকপক্ষ হয়তো আগামী ঈদ পর্যন্ত হলটি চালু রাখবেন। এর পরপরই বন্ধ হয়ে যেতে পারে দিলশাদ সিনেমা হলটি।’ একই মালিকানায় মোহনগঞ্জে ‘কংকন’ সিনেমা হলটি চালু থাকলেও এর ভবিষ্যতও নড়বড়ে বলে জানালেন ম্যানেজার মিলন। মোহনগঞ্জের বসুন্ধরা প্লাজার চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ মঞ্জু ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল আহমেদ রনি এলাকার সচেতন নাগরিক হিসেবে হল প্রসঙ্গে বলেন, ‘আগে পরিবার নিয়ে আমরাই সিনেমা হলে যেতাম। এখন সত্যিই সেই পরিবেশ আর নেই। তাছাড়া তেমন ভালো কোন ছবিও এখন নির্মিত হয় না। এ কারণে এক সময় এই ব্যবসায় নিজেদের জড়িয়ে পড়ার ইচ্ছা জাগলেও সেখান থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে এসেছি।’ তবে ঘটনা যাই হোক না কেন মিতালীর চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া, দিলশাদের বন্ধের পথে অগ্রযাত্রা আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য সত্যিই খুব দুঃখজনক ঘটনা। চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে দ্রুতই সরকারকে হল রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.