রাজধানীর গণপরিবহন

রাজধানীর গণপরিবহনের ক্ষেত্রে নৈরাজ্য বিরাজ করছে। সম্প্রতি একটি বিদেশী সাময়িকীর জরিপে ঢাকা শহরকে বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য নগরসমূহের তালিকার একেবারে শীর্ষে স্থান দেওয়া হয়েছে। যেসব কারণে ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য তার মধ্যে অন্যতম পরিবহন ব্যবস্থা।


প্রায় দেড় কোটি মানুষ অধ্যুষিত ঢাকায় একটি পরিকল্পিত ও কার্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। অথচ নগরীর জনসংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে; কিন্তু এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেই। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। প্রতিদিন কর্মব্যস্ত মুহূর্তে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার বাসস্টপেজে যাত্রীসংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। প্রয়োজনের তুলনায় বাসের সংখ্যা খুবই কম। দু’একটি বাস যখন আসে, সেগুলো মানুষের ভিড়ে গাদাগাদি। ধাক্কাধাক্কি করে যাত্রীদের বেশির ভাগই বাসে উঠতে পারে না। মহিলা ও শিশুদের পক্ষে রাজধানীর বাসে ওঠা রীতিমতো যেন অসাধ্য । কেউ কেউ বেশি ভাড়ায় রিকশায় ওঠেন। কিন্তু রিকশাও সব পথ দিয়ে বেশি দূরে যেতে পারে না।
মহাজোট সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, তখন অনেকেই আশা করছিলেন নগরীর পরিবহন সমস্যার সমাধান হয়ত হবে এবং দুঃসহ যানজটের কবল থেকে মানুষ মুক্তি পাবে। গত কয়েক বছর পরিবহন খাতে ভয়াবহ চাঁদাবাজি, যানজট, দুর্নীতি ও অব্যবস্থার চিত্র সকলের কাছে দৃশ্যমান। কয়েক দফায় ভাড়া বেড়েছে; অনেক ক্ষেত্রেই নিয়মনীতি মানা হয়নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন নীরব। অথচ যাত্রীসেবার মান বাড়েনি; বরং নগরের পরিবহন খাতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে, তবে ঢাকা শহরে জনজীবনে দুর্ভোগ থেকেই যাবে। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরী।
ঢাকার মতো জন-অধ্যুষিত শহরে মেট্রো রেল বা পাতাল রেলের কোন বিকল্প নেই। এ শহরে প্রয়োজনের তুলনায় সড়ক খুব কম। রাজধানীর গণমানুষের স্বার্থে ঢাকায় মেট্রো রেল স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা নেয়া দরকার। পরিবহন খাতে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ দরকার। বিআরটিসির বাস সার্ভিসকে আরও সচল করা প্রয়োজন। বাস ভাড়াকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। রাজধানীসহ সারাদেশে পরিবহন খাতে সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.