রাঙামাটিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আটক ৭- পার্বত্য তিন জেলায় হরতাল প্রত্যাহার

তিন পার্বত্য জেলায় পাঁচটি বাঙালি সংগঠনের ডাকা আজ বৃহস্পতিবারের হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সারা দিন শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হলেও সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রাঙামাটির ভেদভেদী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে হরতালকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ সাতজনকে আটক করে।


নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
রাঙামাটি: পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে পুলিশ বিভাগ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে গতকাল বুধবার থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেওয়া হয়। আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোর দাবি, পুলিশ বিভাগ হস্তান্তর না করার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে। অপর দিকে পুলিশ বিভাগ হস্তান্তরের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর কামাল হরতাল প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জাহাঙ্গীর কামাল বলেন, রাঙামাটি পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে। রাঙামাটি পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুদ-উল হাসান আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছি।’ রাঙামাটিতে গতকাল হরতালের সময় সড়ক ও নৌপথে যান চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ ছিল। তবে সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ে লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম। বিকেল পাঁচটার দিকে প্রায় সব এলাকা থেকে অবরোধ তুলে নেয় হরতালকারীরা। তবে সন্ধ্যা ছয়টার পরও শহরের প্রবেশমুখ ভেদভেদীতে অবরোধ অব্যাহত রাখা হয়। এ সময় পুলিশ অবরোধ তুলে দিতে চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে হরতাল-সমর্থকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় কমপক্ষে সাতজনকে আটক করে পুলিশ।
পার্বত্য চুক্তি ও পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান এবং পুলিশ বিভাগের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) থেকে নিম্নপদের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরের শর্ত রয়েছে। সেই শর্ত অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে পুলিশ বিভাগ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।
পুলিশ বিভাগ হস্তান্তরে কর্মশালা অনুষ্ঠানের খবর জানাজানি হলে গত সোমবার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন, পার্বত্য গণপরিষদ, বাঙালি ছাত্র পরিষদ, বাঙালি ছাত্র ঐক্য পরিষদ ও বাঙালি যুব পরিষদ যৌথভাবে তিন পার্বত্য জেলায় দুই দিনের হরতালের ঘোষণা দেয়।
বান্দরবান: হরতালে গতকাল সকাল থেকে বান্দরবান জেলা শহরে কোথাও যানবাহন চলাচল করেনি। বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কে সকালে বান্দরবানের প্রবেশমুখে হরতাল-সমর্থকেরা যানবাহন আটকে দেয়। শহরের দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তবে অফিস-আদালত খোলা ছিল। দুপুরে বাঙালি ছাত্র পরিষদ ট্রাফিক চত্বরে সমাবেশ করে।
খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। খাগড়াছড়ি থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি। শহরে কিছু রিকশা চলাচল করলেও কোনো ধরনের যান চলাচল করেনি। পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের নেতা মাসুদ রানা ও সোহেল প্রধান অভিযোগ করেন, বুধবার হরতালের সমর্থনে পিকেটিং শুরু করলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাঁদের ধাওয়া করেন। পরে তাঁরা হরতালবিরোধী মহড়া দেন। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম বলেন, ‘এ জেলায় যারা হরতালের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করবে, তাদের প্রতিহত করা হবে।’

No comments

Powered by Blogger.