ওসিসহ আহত অর্ধশত রূপগঞ্জে অগ্রিম বেতন দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

ঈদ উপলক্ষে চলতি মাসের হাফ বেতনের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে রূপগঞ্জের আউখাবো এলাকার হারভেস্ট রিচ গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে। উত্তেজিত শ্রমিকরা গার্মেন্টসের ভেতরে ভাংচুর চালায়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘন্টাব্যাপী অবরোধ করে রাখে।


ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে রাস্তা থেকে শ্রমিকদের সরে যেতে বললে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে কয়েকদফা ধাওয়া পাল্টাধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে রূপগঞ্জ থানার ওসিসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে। পরে কয়েক প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৯ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ২৬ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়লে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অবরোধ চলাকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয় দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ, শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে শ্রমিকরা চলতি মাসের হাফ বেতনের দাবি জানিয়ে আসছে। শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে গার্মেন্টসের ম্যানেজার রতন বাবু বৃহস্পতিবার হাফ বেতন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ম্যানেজারের কথা অনুযায়ী শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার বিকালে বেতন দাবি করে। এ সময় রতন বাবু শ্রমিকদের বেতন দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়। এছাড়া শুক্রবার থেকে গার্মেন্টস ছুটি ঘোষণা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকরা মিলের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল করে। উত্তেজিত শ্রমিকরা গার্মেন্টসে ভাংচুর চালায়। বিকেল ৪টার দিকে শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নেয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা ১০/১৫টি গাড়ি ভাংচুর করে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বললে শ্রমিকরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে রূপগঞ্জ থানার ওসি আতিকুর রহমান খান, শ্রমিক আছিয়া বেগম, রহিমা খাতুন, কল্পনা সরকার, হযরত আলী, রেদোয়ান মিয়া, রিগেল মিয়া, জান্নাতুল ফেরদৌস, লিটন মিয়া, শারমীন খাতুন, রুবেল মিয়াসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। পরে আরও অতিরিক্ত পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ এসে আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়।
এদিকে, আশ্বাসের পরও শ্রমিকদের দাবি আদায় না হওয়ায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শ্রমিকরা আবারও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে কয়েক প্লাটুন পুলিশ, আর্মড পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের উপড় লাঠিচার্জ করে। এ সময় পুলিশ ৯ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ২৬ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে। পরে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। শ্রমিক মামুন মিয়া, তানিয়া সুলতানা, মামুদা বেগম জানান, দেশের সব গার্মেন্টসে চলতি মাসের হাফ বেতন দিয়েছে। আমাগো মালিকও কইছে বিশুদবারে (বৃহস্পতিবার) দিব। অহন কয় দিব না। আরও কয় শুক্রবার থেইক্যা বন্ধ। গার্মেন্টসের ম্যানেজার রতন বাবুর সঙ্গে তার সেলফোনে বহুবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গার্মেন্টস এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মহাসড়ক বন্ধ ছিল। পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

No comments

Powered by Blogger.