ফিরে দেখা- চাঁদাবাজি ঠেকানোর কৌশল by শরীফুল ইসলাম

টঙ্গী-সদরঘাট রুটে চলাচলকারী সুপ্রভাত নামের একটি বাস বাড্ডা সুবাস্তু শপিংমলের সামনে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য থামে। বাসে বসেই দেখা যায়, সুবাস্তু শপিংমলের গেটে একটি ব্যানারে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে অস্থায়ী ক্যাম্প র‌্যাব-১। বাসে বসা এক যাত্রীর প্রশ্ন, এখানে র‌্যাব-১-এর অস্থায়ী ক্যাম্প কেন?


সঙ্গে সঙ্গে বাসের আরেক যাত্রী বলেন, র‌্যাব-১-এর অস্থায়ী ক্যাম্প লেখা থাকায় এখানে চাঁদাবাজরা আসতে চাইবে না। তাই এটা হলো ঈদ মার্কেটে চাঁদাবাজি ঠেকানোর কৌশল। এর পর বাসটি সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় দেখা গেল আরও ক'টি মার্কেটের গেটে র‌্যাব-১-এর অস্থায়ী ক্যাম্প লেখা ব্যানার শোভা পাচ্ছে। তা দেখে মনে হলো সত্যিই, এটি ঈদ মার্কেটে চাঁদাবাজি ঠেকানোর কৌশল।
আবুল কেন পারলেন না?

রশিদ মামুন॥ সম্প্রতি খুলনা গিয়েছিলাম ট্রেনে। এর আগেও আমি অন্তত ১০ থেকে ১২ বার ট্রেনে ঢাকা থেকে খুলনা গিয়েছি। ইতোপূর্বে আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, কোনদিন সময়ের ট্রেন সময়ে ছাড়েনি। কিন্তু এবার নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছাড়ল। ট্রেনে উঠে জানতে চাইলাম, ট্রেন কি এখন এভাবে নির্ধারিত সময়ে ছাড়ছে কি-না। ট্রেনে কর্মরত এক ব্যক্তি জানালেনÑহ্যাঁ, এখন মোটামুটি সময় মেনে ট্রেন চলছে। ঠিক একই কথা গত বছর যখন জানতে চেয়েছিলাম তখন এই রকমÑকেউ ইঞ্জিন পুরাতন, ইঞ্জিন নেই, জনবল নেই এমন হাজারটা অভিযোগ দাঁড় করিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও এসব সমস্যা আছে তা হলে এখন কেন সময় মেনে চলছে। জানতে পারলাম, স্বল্প সময়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলের দীর্ঘদিনের এই বদঅভ্যাস বদলে দিয়ে গেছেন। এখন ওবায়দুল কাদেরও বিষয়টি ধরে রেখেছেন। এখন প্রশ্ন আসে, একই সরকারের আরেক মন্ত্রী আবুল হোসেন কেন পারলেন না?
দেখাও হবে কথাও হবে

রাসেল রানা॥ গত মাস থেকে আমাকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিট করার দায়িত্ব দেয়া হয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে পেশাগত কাজে আমার প্রথম পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয় নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজের সঙ্গে। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে ইসি সচিবালয়ে মোঃ শাহনেওয়াজের কক্ষে প্রবেশ করেই আমি দেখলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন। সালাম দিতেই আমাকে বললেন, চেয়ার তো ফাঁকা নেই। আপনি ওই সোফাতেই বসুন (দূরে রাখা সোফা দেখিয়ে)। তখন পর্যন্ত তিনি জানেন না আমি কোন গণমাধ্যমে কাজ করি। তবে গণমাধ্যমে কাজ করি এটি তিনি বুঝেছেন (আমার মনে হয়েছে, আগে থেকে ওই কক্ষে বসা সাংবাদিকদের মধ্যে আমার পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে আমার ইশারায় ভাববিনিময় দেখেই তিনি বুঝেছেন)। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শেষ হলে সাংবাদিকরা কক্ষ ত্যাগ করলে আমি সোফা থেকে উঠে তাঁর সামনে গেলাম। আমার পরিচয় দিলাম। বললাম এখন থেকে আমি এই বিট করব। তিনি আমাকে হাসিমুখে বললেন, বেশ তো, বিট যেহেতু করবেন, আসতে তো হবেই। আর আসবেন যখন সেহেতু দেখাও হবে। আর দেখা যেহেতু হবে, কথাও হবে।



বিনা অপরাধে জেল


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে, সেখানেও তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে



বিনা অপরাধে ৪ বছর ৯ মাস জেল খাটার পর নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার জাকিরকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালত বিনা অপরাধে জেল খাটানোর দায়ে আড়াইহাজার থানার সেই সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং দুই এসআইকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। মঙ্গলবার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। একই সঙ্গে আদালতের আদেশের ৬ মাসের মধ্যে জরিমানার টাকা জাকিরকে দেয়ার জন্য ওই তিন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ভুল কিংবা দুর্নীতির কারণে অনেক সময় নিরাপরাধ ব্যক্তিকে ‘অন্যের অপরাধের সাজা’ ভোগ করতে হয়। এ ধরনের খবর ইতোপূর্বে পত্রিকায় আরও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এর পুনরাবৃত্তি বন্ধ হয়নি। এ বিষয়টি আমাদের ব্যবস্থার ত্রুটিকেই সবার সামনে উন্মোচিত করে।
জানা গেছে, শুধু নামের মিল থাকায় নারায়ণগঞ্জের জাকির হোসেনকে কারাগারে যাবজ্জীবনের ৪ বছর ৯ মাস সময় কাটিয়ে দিতে হয়েছে। এমন ঘটনা মোটেই কাক্সিক্ষত নয়।
গত ২১ জুন ঢাকার একটি দৈনিকে ‘একজনের যাবজ্জীবন খাটছেন অন্যজন’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলে তা অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সুপ্রীমকোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে এবং জাকিরকে হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে আসামির নাম ঠিকানা যথাযথভাবে যাচাই না করে চার্জশিট দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে, সেখানেও তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে।
আদালত তার রায়ে বলেছে, সংশ্লিষ্ট সব প্রতিবেদন ও নথি যাচাইয়ের পর এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই জাকির নিরপরাধ; অন্য এক জাকিরের ‘অপরাধের সাজা’ সে ভোগ করেছে।
আদালতের রায়ে সত্যের জয় হয়েছে। কিন্তু তার জীবন থেকে যে মূল্যমান ৪ বছর ৯ মাস ঝরে গেছে, তার কী হবে? এই মূল্যবান সময়টি তো সে ফিরে পাবে না। সে যখন বিনা অপরাধে কারাগারে দ- ভোগ করেছে, তখন তার পরিবার অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট ভোগ করেছে।



বাসযোগ্য নগর



৩০টি মানদ-ের বিবেচনায় ১৪০টি শহর নিয়ে ব্রিটেনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের চালানো জরিপ অনুযায়ী ঢাকার অবস্থান সর্বনিম্নে




পরিকল্পিত নগর বলতে বুঝায় একটি পরিকল্পিত জনবসতি। যার সবই হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। কোথায় স্কুল কলেজ হাসপাতাল হবে, অফিস আদালত কোথায়, কোথায় বসবাসের জায়গা সবই হবে পরিকল্পনামাফিক। পরিকল্পনামাফিক সব হলে প্রত্যেক নগরেই মানুষ শৃঙ্খলাপূর্ণ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। এতে তার নাগরিক জীবন হয় মর্যাদাপূর্ণ, গ্রাম কিংবা মফঃস্বলের তুলনায় উন্নততর, স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এই নগরই আবার পরিকল্পনাহীনভাবে বেড়ে উঠলে তাতে নাগরিকদের জীবন অস্বস্তিকর হয়ে হঠে। জনজীবনকে তা বিপর্যস্ত করে ফেলে। মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকে না।
সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে রাজধানী ঢাকা গড়ে উঠেছে একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অনেকই এখানে অনুপস্থিত। আন্তর্জাতিক একটি জরিপ সংস্থার মতে বিশ্বের বসবাসের উপযোগিতার বিবেচনায় সবচেয়ে অযোগ্য শহর ঢাকা। ৩০টি মানদ-ের বিবেচনায় ১৪০টি শহর নিয়ে ব্রিটেনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের চালানো জরিপ অনুযায়ী ঢাকার অবস্থান সর্বনিম্নে। ‘বৈশ্বিক বসবাস উপযোগিতা’ শীর্ষক এ জরিপ অনুযায়ী সবচেয়ে বসবাস উপযোগী শহর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন।
ব্রিটেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ২০১২ সালের এ জরিপ প্রতিবেদন মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়। জরিপ অনুযায়ী দ্বিতীয় বাসযোগ্য শহর অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা এবং তৃতীয় কানাডার ভ্যানকুভার। এছাড়া প্রথম ১০টি শহরের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে কানাডার টরন্টো, ক্যালগ্যারি, অস্ট্রেলিয়ার এ্যাডিলেড,সিডনি,পার্থ, ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিও নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড। এ প্রতিষ্ঠানের গত বছরের জরিপ অনুযায়ী ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৯তম। অর্থাৎ এ বছর ঢাকার অবস্থা আরও একধাপ নিচে নেমে গেছে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে! এই অবস্থা যে আমাদের জন্য গৌরবজনক নয় সেটি কি বলার অপেক্ষা রাখে। জরিপকারী ওই প্রতিষ্ঠানটি শহরের বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এর মান নির্ণয় করে। এর মধ্যে রয়েছেÑ নগরীতে বসবাসের সুযোগ-সুবিধা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা, অপরাধের হার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামোর গুণগতমান, পানি সরবরাহের মান, খাদ্য, পানীয়, ভোক্তাপণ্য এবং সেবা, সরকারী বাসগৃহের প্রাপ্যতা ইত্যাদি। এছাড়া ঢাকা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোপূর্বে অন্য এক জরিপে প্রকাশ পেয়েছে ঢাকা বিশ্বের দূষিত নগরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর করুণ অবস্থায়ই এই জরিপের সত্যতা প্রমাণে যথেষ্ট। এছাড়া যানজট, যানবাহন এবং কলকারখানার কালো ধোঁয়া, খাদ্যে ভেজাল, সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিম্নমানও ঢাকার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অধিক জনসংখ্যার চাপে ন্যুব্জ এই শহরে নেই পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা। জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি-ঘোড়া। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তাঘাট, হাসপাতাল স্কুল-কলেজ, গ্যাস, বিদ্যুত, পানি ইত্যাদি নাগরিক সেবা অপ্রতুল। সবকিছুতেই যেন পরিকল্পনাহীনতার ছাপ।

No comments

Powered by Blogger.