শাহবাগ মোড় নিরাপদ করা হোক- একটি প্রাণ ও ভাঙচুর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখ শাহবাগ একদিকে হয়ে দাঁড়িয়েছে মৃত্যুফাঁদ, অন্যদিকে নৈরাজ্যের অভয়ারণ্য। মঙ্গলবার শাহবাগে বাস চাপা পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র নিহত হন। এর প্রতিবাদে পুরো এলাকায় অজস্র গাড়ি ভাঙচুর চলে, আগুন দেওয়া হয় পুলিশ বক্সে এবং যান চলাচল বন্ধ হয়ে ভোগান্তির মুখে পড়ে বাড়িফেরতা হাজার হাজার যাত্রী।


প্রশ্ন হচ্ছে, কেনই বা এভাবে অকাতরে ছাত্রের জীবন যাবে আর কেনই বা তাঁর সহপাঠীরা নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিবাদ করবেন?
শাহবাগ মোড় রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা। শাহবাগ মোড়ের চারদিকে রয়েছে বারডেম-বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক, জাতীয় জাদুঘর ও আজিজ সুপার মার্কেট। এই মোড়টিকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক লাইব্রেরি, চারুকলা অনুষদ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশদ্বার বলা যায়। এই মোড়ে দুটি ফুটওভারব্রিজ থাকলেও সেগুলো পথচারীদের জন্য সুবিধাজনক স্থানে নেই। ফলে রাস্তা পারাপারের জন্য ট্রাফিক সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করা কিংবা চলন্ত গাড়িকে পাশ কাটানোই হলো প্রধান তরিকা। এই সার্বিক নৈরাজ্যের মধ্যে গাড়ি চাপা পড়ে প্রাণহানির আশঙ্কাও কম নয়। কিছুদিন পরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন দিয়েই কর্তৃপক্ষের অবহেলার খেসারত দিতে হচ্ছে। এভাবে কারও জীবন যেতে পারে না, এভাবে একের পর এক পরিবার সন্তানহারা হতে পারে না।
কিন্তু এর প্রতিবাদে ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন যানবাহন-দোকানপাট ভাঙচুর কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ হতে পারে না। একে মোটেই শোকের বা প্রতিকারের উপায় বলা যায় না। এটা হচ্ছে, তরুণদের একাংশের এবং কিছু সুযোগসন্ধানীর ধ্বংস-উৎসব। তাঁরা যদি শাহবাগ মোড়কে নিরাপদ করার জন্য সরকারের কাছে যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করতেন, তার জন্য আন্দোলন করে যেতেন, তা হলে সবার সমর্থন তাঁদের প্রতি থাকত। কিন্তু একটি দুর্ঘটনার জন্য নিরীহ দশজনের জানমালের ক্ষতি করার কোনো অধিকার তাঁদের নেই। সড়ক বিভাগ, গাড়িচালক এবং ঢাবির শিক্ষার্থীদের বোধোদয় হোক। শাহবাগ মোড়ের মতো জনসমাগম এবং যানবহুল একটি মোড়ের নিরাপদ ব্যবস্থাপনা কী হতে পারে, তা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে মনোযোগ দিয়ে সমাধান বের করতে হবে। এ মোড়ের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যে যথাযথ নয়, তা উপলব্ধি করে সেখানেও পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু পারাপারকারী পথচারীদেরও সচেতনতা ও সংযম প্রয়োজন।
তৃতীয় কর্তব্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনায় সরকার পুলিশ দিয়ে নৈরাজ্য মোকাবিলা করেনি। বাছবিচারহীনভাবে গাড়ি ভাঙা যে বীরত্ব নয়, তা যে মারাত্মক বালখিল্য—এই উপলব্ধি পুলিশ বা আইন প্রয়োগ করে আসবে না। এর জন্য প্রয়োজন যুক্তি-বুদ্ধি ও বিবেচনাবোধের জাগরণ।
ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র তৌহিদুজ্জামানের শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য আমাদের সমবেদনা।

No comments

Powered by Blogger.