রোমানার বাহার

নাটক-সিনেমার মানুষগুলোর কাছে ব্যক্তিগত লাইফ ব্যাপারটা অনেকটা সোনার হরিণের মতো; যার পিছে নিরন্তর শুধুই ছুটে বেড়ানো, কিন্তু ছোঁয়া মেলে না। কথাটা শুনতে খুব নির্মম হলেও সেলিব্রেটিরা এ ভাগ্যটাই হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন। বলা চলে, এক রকম সংসার পাতিয়ে নিয়েছেন লাইট, ক্যামেরা, এ্যাকশনের মাঝে।


দর্শকরাই তাদের পরিবার। তবে এ কথা তো ঠিক, পর্দা আর বাস্তবতা দুটোকে সামলে চলা অভিনয়ের চেয়ে কম নিহায়ত কিছু নয়। টিভি নাটক আর বিজ্ঞাপনের চেয়ে বড় পর্দার তারকাদের ক্ষেত্রে এ ব্যস্ততা আরও অনেক বেশি। কিন্তু যারা সিনেমার পাশাপাশি নিয়মিত টিভি নাটক করে যাচ্ছেন, ক্যারিয়ারের ব্যস্ততার ধরনটা তাদের ক্ষেত্রে কেমন হতে পারে? রোমানার সাথে ফোনালাপে তার বেশ একটা আঁচ পাওয়া গেল। গত ঈদটাও তার ভাগ্যে জোটেনি, বাহরাইনে একটি স্টেজ শো শেষ করে যতক্ষণে তিনি দেশে ফেরেন ততক্ষণে ঈদ-উল-ফিতরের আগমন বার্তা নিয়ে আসা সূর্যটা ডুবে আঁধার নেমে এসেছে বাংলাদেশে। এর আগে ঈদের নাটকের শূটিং নিয়েও একটানা ব্যস্ততা গেছে। বড় পর্দার কাজও একসাথে চলায় হাঁফ ছাড়ারও অবকাশ ছিল না প্রায়। তার ভেতরে সাংসারিক টুকিটাকি আছে, বন্ধুদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে রেস্তরাঁতেও ঢুঁ মারতে হয়। উপরন্তু বেশ খানিকটা বিরক্ত করিয়ে ছাড়ে আমাদের মতো বিনোদন বিট করা সাংবাদিকরা, তাদের ‘সিডিউল আবদার’ পূরণ না করলে চলে না। দীর্ঘ এ ফিরিস্তি শুনে বলতেই পারেনÑ “এতসব কিভাবে পারেন রোমানা? আমি হলে সবকিছু গুলিয়ে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসতাম।” কিন্তু আপনার মতো এমন পরিস্থিতি রোমানা তৈরি করেননি; বরং ‘মিস’ হয়ে যাওয়া ঈদের আড্ডাটাও ঠিকই একফাঁকে সেরে নিয়েছেন বন্ধু সজল আর কনাদের সাথে। বেশ মজা করে ডিনারে সময় কাটিয়েছেন সবাই। এখন পরিকল্পনা আঁটছেন যুক্তরাষ্ট্রে বড় ভাইয়ের বাড়ি থেকে কিছুদিন ঘুরে আসার। তার জন্য কেনাকাটাও সেরে নিয়েছেন ইতোমধ্যেই। তা পারেন বটে রোমানা! বলতেই হবে। এসব গেল তো ব্যক্তিগত খবর, কিন্তু আম জনতা যে খবরের জন্য অপেক্ষা করে আছে অর্থাৎ নাটক-সিনেমার কি অবস্থা? গেল ঈদে রোমানার কোন ছবি রিলিজ না হলেও বিভিন্ন চ্যানেলে একগাদা নাটক প্রচারিত হয়েছে। দর্শকনন্দিত এ নাটকগুলোর পরিসংখ্যানই জানান দিচ্ছে, ছোটপর্দাকে কখনোই অবহেলা করেন না রোমানা। টিভি নাটকের আলাদা একটা গ্রহণযোগ্যতা বরাবরই ছিল। গত কয়েক বছরে এ ট্রেন্ডটা বেড়েছে কয়েকগুণ। এ ক্ষেত্রটিতে রোমানার নিজস্ব একটা ইমেজ আছে। কিন্তু ছোটপর্দা আর বড়পর্দাÑ এ রকম পার্থক্যে মোটেই সমর্থন নেই তার। সবই কাজ। ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের বিষয়। প্রত্যেক নাটক-সিনেমাতেই তাই সমান মনোযোগের সাথে অভিনয় করতে দেখা যায় রোমানাকে। প্রসঙ্গ উঠতেই তিনিও সায় দিয়ে একই কথা শোনালেন।
মিডিয়া বোদ্ধারা রোমানার আরও একটা ইমেজ দাঁড় করাতে চান ব্যতিক্রমী এক কারণে। অনেকটা সময়জুড়ে দর্শকনন্দিত তিনি অথচ খুব বেশি হৈচৈ ফেলে দিয়ে মিডিয়াপাড়া গরম করতে দেখা যায়নি; অন্যদিকে আলোচনার বাইরেও থাকেননি কখনো। জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে সব সময় একটা মাত্রা বজায় রেখে চলেছেন। কারণটা কি? প্রশ্নের উত্তর বোধকরি আগে থেকেই প্রস্তুত করে রেখেছিলেন রোমানা, “আসলে খুব বেশি উত্থান-পতন হলে মানুষ হারিয়ে যায়। ক্যারিয়ারে তাই সবসময় একটা লেভেল অনুসরণ করি।” বোঝাই যাচ্ছে, হারিয়ে যাবার ভয় তার প্রবল। সেটাই বা কেন থাকবে না? অভিজ্ঞতার দীর্ঘ সময়টাতে তিনি ছিটকে পড়তে দেখেছেন অনেক তারকাকে। যাদের অনেকের নামও দর্শক এখন ভুলতে বসেছে। নিজের ক্ষেত্রে এমনটা হোক সেটি কখনোই চাইবেন না রোমানা, এটিই স্বাভাবিক। দীর্ঘ ক্যারিয়ারকে আরও দীর্ঘতর এবং শক্তিশালী করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যাবেন তা বোঝাই যায়। কথাটা শুনে অনেকে ভ্রƒ কুঁচকে হিসাব কষতে বসবেন, ঠিক কত বছর ধরে দর্শক ‘রোমানা’ নামটি শুনছেন? সহজ হিসাব তার কাছ থেকেই পাওয়া গেল। প্রথম যখন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টিভি পর্দায় মুখ দেখানোর সুযোগ পান, তখন রোমানা সবে নার্সারীর ছাত্রী। সেটি গুনলে মিডিয়াতে তার অবস্থান ১৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে। বুঝে নিতে কারও বাকি থাকার কথা নয় অনেক শক্ত একটা ভিতের ওপর ক্যারিয়ারকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন চিরউজ্জ্বল এই অভিনেত্রী।
ঈদের পরে বেশ কয়েক দিনের একটা অবকাশ পেয়েছেন রোমানা। এরই ফাঁকে ব্যক্তিগত সব কাজকর্ম সেরে মোটামুটি সামলে নিয়েছেন তিনি। তবে এমন খোলা হাওয়া গায়ে মেখে বেশিদিন ঘোরার সুযোগ মোটেই নেই। শুক্রবার থেকেই একটা নাটকের শূটিং শুরু হওয়ার কথা। হাতে আছে মনতাজুর রহমান আকবরের ‘সবুজ কেন অপরাধী’, সৈয়দ আওয়ালের ‘কাছের শত্রু’, এফআই মানিকের ‘স্বামীভাগ্য’সহ বেশকিছু চলচ্চিত্রের কাজ। এগুলোর শূটিংয়ের ডেট পড়লেই দিনরাত সব একাকার হয়ে যাবে তার। সামনে যুক্তরাষ্ট্র বেড়াতে যাবেন, তবে তার আগে কোরবানীর ঈদের নাটকগুলোর কাজ শেষ করে ফেলতে হবে। সব মিলিয়ে টানা একটা পরিশ্রম। নিশ্চিত পার হয়ে যাবেন ভালভাবে। সামনের ঈদে চলচ্চিত্রও রিলিজ হতে পারে। তবে এভাবে আর কতদিন? ‘ভালবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ চলচ্চিত্রের মতো রোমানার ক্যারিয়ারে এই মুহূর্তে আরও একটা টার্ন দরকার। মনে পড়ছে, এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই তিনি পেয়েছিলেন ন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। ক্যারিয়ারের একটা বৈপ্লবিক টার্নের জন্য নিজেকে কতটুকু প্রস্তুত করে রেখেছেন ঢালিউডের প্রথম সারির এই অভিনেত্রী?

খায়রুল বাসার নির্ঝর

No comments

Powered by Blogger.