পুরনো লেখা নিয়ে নতুন কিছু ভাবনা by প্রকৌশলী এস এম ফজলে আলী

বিগত তিন বছর যাবত আমার দেশ পত্রিকায় নিয়মিত লিখে যাচ্ছি। আমার লেখার বিষয়বস্তু মূলত জাতীয় সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে। আমি আমার লেখার একটু মূল্যায়ন করতে চাই যে এ লেখা আসলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গোচরে আসে কিনা এবং তার ওপর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা। পাঠককে সে ব্যাপারে অবহিত করাই আমার উদ্দেশ্য। এতে অল্প ক’টি বিষয়ই উল্লেখ করা হলো।

১. দেশের খনিজ সম্পদের নিরাপত্তা ও পরিমিত ব্যবহার : এ প্রসঙ্গটি ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট প্রকাশিত হয়। আমাদের গ্যাস ও কয়লা জাতীয় স্বার্থে উত্পাদনের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থলভাগের গ্যাস অনুসন্ধানে আমাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে হবে। তাকে যথেষ্ট জনবল ও যন্ত্রপাতি দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। দেশে-বিদেশে বহু গ্যাস ক্ষেত্রে বাংলাদেশী অভিজ্ঞ লোক আছেন, তারা দেশের মায়ায় কাজ করতেও আগ্রহী। অবশ্য তাদের বেতন কাঠামো আমলাদের মতো হলে চলবে না। তথাকথিত বিদেশি বিশেষজ্ঞদের যে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় তার এক-চতুর্থাংশ পেলেও তারা কাজ করতে রাজি হবেন। ভারত এবং কম্যুনিস্ট চীনেও বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ও টেকনোক্রাটদের অনেক বেশি বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ দিয়ে আমেরিকা ও ইউরোপে চাকরিরত অবস্থা থেকে ছাড়িয়ে এনে নিজ দেশে কাজে লাগানো হচ্ছে। আমাদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আমলে না এনে উপযুক্ত বাঙালিকে টেকনিক্যাল কাজে লাগালে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে। এ কাজে কোনো সরকারই সাহসী উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই ফলও শূন্যের কোঠায়। গ্যাসের অভাবে আজ সার ও বিদ্যুত্ উত্পাদন শতকরা ৪০ ভাগ কমে গেছে। বাপেক্স স্থলভাগের কাজ ভালোভাবেই করতে পারত। কিন্তু সে কাজ সরকার আজও বিবেচনা করেনি। তারা ভরসা করে আছে বিদেশি কোম্পানির ওপর। বিদেশি কোম্পানি কোনো দিনই আমাদের মঙ্গল দেখবে না। তারা শুধু আমাদের টাকা লুট করবে। আর আমাদের সম্পদ ধ্বংস করবে। টেংরাটিলা ও মাগুরছড়া তার বড় উদাহরণ। তাদের এ অপকর্মের জন্য তাদের কাছ থেকে কোনো অর্থদণ্ড আদায় করা যায়নি চুক্তির দুর্বলতার জন্য। এতে প্রায় ২০০০ কোটি টাকার গ্যাস নষ্ট হয় এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন হয়। ভূখণ্ডে যে গ্যাস জমা আছে তা উত্তোলন করতে পারলেও আগামী ১০ বছরে গ্যাসের কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।
ওদিকে আমাদের যে উন্নতমানের কয়লা আছে, তা যদি সঠিকভাবে উত্তোলন করা যায় তাহলে গ্যাস না থাকলেও ৫০ বছরে জ্বালানির অন্য কোনো চিন্তা করতে হবে না। স্থানীয় লোকের সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখা হয়েছে—কয়লা উত্তোলনে উন্মুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, না সুড়ঙ্গ পথে তা উত্তোলন করা হবে এ ব্যাপারটি সম্পূর্ণ টেকনিক্যাল। তাই বিশেষজ্ঞদের হাতে বিষয়টি ছেড়ে দিতে হবে। আর্থিক বিবেচনায় যেখানে সুড়ঙ্গ পদ্ধতি কার্যকর, তাই করা হবে। আর যেখানে উন্মুক্ত পদ্ধতির প্রয়োজন হবে সেখানে তাই করতে দিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কয়লা উত্পাদনে আর দেরি করা জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতি। চীন তার মোট জ্বালানির শতকরা ৭০ ভাগ পায় কয়লা থেকে। আর এ কয়লা তুলতে গিয়ে চীনে প্রতি বছর ৫/৭ হাজার শ্রমিককে প্রাণ দিতে হয়। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের কারণে সেখানে কোনো হৈ চৈ নেই। অবশ্য কয়লার জন্য অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও বহুতল ভবন করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। জাতীয় স্বার্থে কাজ করার মনোভাব থাকলে সরকারের এসব কাজে কেউ বাধা দিতে পারে না। কয়লার ব্যাপারে চীন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। শেখ হাসিনা চীন সফর করে এলেন সম্প্রতি। তার উচিত ছিল এ ব্যাপারে চীন সরকারের সঙ্গে একটা সমঝোতা স্মারকে সই করা। জ্বালানি সমস্যার সমাধান না করতে পারলে দেশে তেমন বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না।
২. জিডিপিতে কৃষির অবদান কমে যাচ্ছে : এ প্রবন্ধটি আমার দেশ পত্রিকায় ২৭ আগস্ট, ২০০৭ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, কৃষির উত্পাদন বাড়াতে হলে দেশের ১ কোটি ৫০ লাখ প্রান্তিক চাষীকে প্রচুর কৃষি ঋণ ও ভর্তুকি দিতে হবে। আমাদের প্রান্তিক চাষীরাই দেশের কৃষি উত্পাদন বাড়িয়ে চলছে। কিন্তু তাদের সময়মত সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচ সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ পত্রিকায়ই ২১ জানুয়ারি ২০০৯ সালে একটি খোলা চিঠি দেই। তাতে কৃষির ওপর জোর দিতে বলি। কৃষকদের ১০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিন এবং তাদের ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিন। তাদের দাদন ব্যবসায়ী ও রক্তচোষা এনজিওদের দ্বারস্থ করবেন না। ওই দুই ধরনের সুদি ব্যবসায়ীরা দরিদ্র কৃষককে আরও দরিদ্র করে ছাড়ে। এনজিওদের আলিশান দালান-কোঠা ও নানা ব্যবসার দিকে লক্ষ্য করলেই এর প্রমাণ মিলবে। অথচ তারা বিদেশ থেকে টাকা আনে গরিবদের সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে ক্ষুদ্রঋণ দেবে বলে। তাদের ঋণের সুদের হিসাব করলে তারা শতকরা ৩৫ থেকে ৪৫ ভাগ সুদ আদায় করে থাকে। তাদের চাপে পড়ে কৃষকরা তার উত্পাদিত ফসল পানির দরে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। ওদিকে চাতালের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃষকদের ঠকিয়ে যাচ্ছে। সরকার আজ পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান কিনতে পারল না। তাই অসহায় চাষী তার ঘরের খোরাক পর্যন্ত বিক্রি করে এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হয়। তাই তাদের ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিলে অসময়ে তাদের ফসল কম দামে বিক্রি করতে হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, এই প্রান্তিক চাষীরাই তাদের ঋণের টাকা শতকরা ৯৭ ভাগ পর্যন্ত পরিশোধ করে থাকে। তাদের ভয় থাকে সময়মত ঋণ পরিশোধ না করলে সামনে ঋণ পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে দেশের বড় বড় শিল্পপতি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা শিল্প গড়ার কথা বলে নিয়ে তা আদৌ সে কাজে না খাটিয়ে বিদেশে আলিশান বালাখানা ও জৌলুসপূর্ণ জীবনযাপন করে। আর ঋণ শোধ করতে গড়িমসি করে। তাদের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মোতাবেক প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে। আদায়ের তেমন সম্ভাবনা নেই। আরেকটি সমস্যা, আমাদের ব্যাংকাররা প্রান্তিক চাষীদের লোন না দিয়ে গ্রামাঞ্চলের জোতদার ও বড় কৃষককেই দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কারণ এতে টুপাইস পাওয়া যায়। আর ঘরে ঘরে কৃষককে ব্যাংক ঋণ দিতে বেশ মেহনত করতে হয়। তাতে তারা অভ্যস্ত নয়। তারা অফিসে ফ্যানের তলায় বসে কাজ করতেই অভ্যস্ত। তবে আনন্দের কথা, আমার প্রস্তাব উচ্চ মহলে গিয়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিয়ার রহমান ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি নিজে মাঠপর্যায়ে ঘুরে ঘুরে দেখছেন ঋণ ঠিকমত বিতরণ হচ্ছে কিনা।
আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য আমাদেরই উত্পাদন করতে হবে। বিশ্ববাজার থেকে মহামন্দার সময় যে সস্তায় খাবার ক্রয় করা গেছে, সে সুযোগ আর নেই। বিশ্ববাজারে আজ খাদ্যশস্যের মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে খাদ্যশস্য ক্রয় করে ১৫ কোটি মানুষ বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। খাদ্য উত্পাদন বাড়ানোর জন্য উত্পাদন বহুমুখী করতে হবে। শুধু চাল ব্যবহার অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মানুষকে আলু, তরকারি, শাক-সবজি বেশি খাওয়ায় উত্সাহিত করতে হবে। কৃষি থেকে উত্পাদন বাড়ানোর এখনও অনেক সুযোগ আছে। দরকার সমন্বিত প্রচেষ্টা। কৃষিবিদদের কাজের পরিধি এখন অনেক বেশি। দেশীয় হাইব্রিড জাতের ফসল ও ফলের উত্পাদন বাড়াতে হবে।
৩. বেশি আলু খেতে দোষের কী : এ প্রবন্ধটি ২৩ এপ্রিল, ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশে ২০০৮ সালে আলুর বাম্পার উত্পাদন হয় (৯০ লাখ টন)। সে আলু হিমাগারে রাখার কোনো সুযোগ নেই। মাত্র ১৭ লাখ টন আলু হিমাগারে রাখা যায়। তাই উত্তরাঞ্চলের কৃষক আলু রাখার কোনো ব্যবস্থা না করতে পেরে রাস্তার পাশে স্তূপ আকারে জমা করে রাখে। আলু কৃষকের জন্য গলার ফাঁস হিসেবে দেখা দিল। সরকারের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো ফল হচ্ছে না। তাই বিবেকের তাগিদে জাতিকে অবহিত করা প্রয়োজন মনে করলাম। গরিব লোক, তথা সর্বস্তরের লোক যে হারে চালের ওপর নির্ভর করছে, তাদের উচিত ভাতের পরিমাণ কমিয়ে আলু বেশি করে খাওয়া। প্রস্তাব করেছিলাম খাদ্য দফতর থেকে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে যে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়, তার পরিবর্তে ১০ কেজি চাল ও ২০ কেজি আলু দেয়া হোক। এভাবে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বিতরণ করলে আলু সঠিকভাবে ব্যবহার হয়ে যেত। কার্ডধারীরাও উপকৃত হতো। বিশ্বে উন্নত দেশে চালের ব্যবহার নেই বললেই চলে। তাদের সব খাদ্যে আলু থাকবেই। তাই আমাদের বিলাসিতা ছেড়ে অধিক পরিমাণে আলু খাওয়া উচিত। দেশের যে জমি আছে তাতে শুধু চাল উত্পাদন করলে খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা যাবে না।
এ বছরও আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারকে এর উত্পাদন আরও বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। সঙ্গে চাষীরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় তার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ সে বছর জুলাই মাসে আলু খাওয়ার আন্দোলন করেন হোটেল রেডিসন ও রোডমার্চে, যখন কৃষকের হাতে কোনো আলু নেই। ব্যয়বহুল ওই নামি-দামি স্থানে আসল আলু খাওয়া অভাবী লোক যায় না। সাধারণ মানুষের কাছেও এ মেসেজ পৌঁছাতে হলে হাট-বাজারে, গ্রামগঞ্জে ও প্রত্যেক সাধারণ হোটেলকে আলু ব্যবহারে উত্সাহিত করতে হবে। কিছু খাদ্য প্রসেসিং শিল্প প্রতিষ্ঠান করে আলুর বিবিধ আইটেম বাজারজাত করা যায়। শুধু পটেটো চিপই যথেষ্ট নয়—এর হালুয়া, ফুলঝুরি, পায়েশ, সন্দেশ ইত্যাদি তৈরি করে বাজারজাত করতে হবে। সামনে সরকারের কাছে খাদ্য সমস্যা দেখা দেবেই। তা প্রতিহত করতে এখনই আলু ব্যবহারে জোর দিতে হবে, যাতে চালের ওপর চাপ কম পড়ে।
৪. বাজার অর্থনীতির নামে রমরমা সিন্ডিকেট ব্যবসা : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্য যখন হু হু করে বেড়েই যেতে থাকে, সে সময় ৯ এপ্রিল এই লেখাটি প্রকাশিত হয়। ফখরুদ্দীন-মইন উ আহমেদের স্বৈর-সামরিক সরকার প্রথম অবস্থায় দুর্নীতির দোহাই দিয়ে ঢালাওভাবে যে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধের পর্যায়ে নিয়ে গেল, তখন বাজারের অবস্থা অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। ব্যবসায়ীরা আমদানি-রফতানি বন্ধ করার কারণে মালামালের ঘাটতি পড়ল। এ সুযোগে একদল মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী বাজারে চোরাই পথে অতি উচ্চমূল্যে দ্রব্যাদি বিক্রি করতে শুরু করে। ফখরুদ্দীন-মইন উ আহমেদ তখন বেহাল অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণের হাল ছেড়ে দেয়ায় সিন্ডিকেটওয়ালারা আরও মজবুত হয়ে সাধারণ মানুষের বাজার করা বন্ধ করে দেয়ার পর্যায়ে নিয়ে যায়। আশা করা গিয়েছিল, গণতান্ত্রিক সরকার এসে সঠিক হাল ধরবে। কিন্তু তাও ছিল শুধু আশা। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা আমার খোলা চিঠিতে পরামর্শ দিয়েছিলাম সিন্ডিকেট ব্যবসা ভাঙতে হলে টিসিবিকে সক্রিয় করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ৫/৭টি আইটেম টিসিবি খোলা বাজারে ছাড়তে পারলে সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে। এতে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী যথেষ্ট আগ্রহ দেখালেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে একেবারে নির্বিকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেসব খোড়া যুক্তি দেখাল তা ধোপে টেকে না। যাকে দিয়ে ভূত তাড়ানো হবে, তাকেই যদি ভূতে পায় তাহলে ভূত বিতাড়ন কীভাবে সম্ভব। তিনি তো নিজের ব্যবসা খুবই ভালো বোঝেন। শেয়ারবাজারে তার এক কোম্পানির শেয়ার অবৈধভাবে ছেড়ে একদিনেই ১২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এরূপ লোক দ্বারা সমাজের মঙ্গল করা যায় না। ১০ টাকা দামের চাল খাওয়ানোর কথা বলে গরিব লোকের ভোট আদায় করে আজ তারা তাদের সে ওয়াদার কথা ভুলে গেছেন। মানুষ এখন ১০ টাকা দরে চাল পান না, তারা ২০ টাকায় কিনতে পান। কিন্তু সে চাল যদি ৩০/৩৫ টাকায় কিনতে হয় তা হলে গরিব-অসহায় বস্তিবাসীরা বাঁচবে কেমনে? ১৯৭৪ সালে যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল তা আবার ফিরে আসবে না তো? তখন বাজারে খাদ্য ছিল কিন্তু তা বহু লোকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে ছিল বলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। এবার দেশে খাদ্য-শস্য প্রচুর আছে, কিন্তু চাতালের মালিক, মধ্যস্বত্বভোগী রক্তচোষারা, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা ও আড়তদাররা একাট্টা হয়ে বাজারকে তাদের ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রণ করছে। ফ্রি মার্কেটের দোহাই দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। কিন্তু বাজার যে সময় সময় সরকারকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তার প্রমাণ প্রতিবেশী বিশাল দেশ ভারত। তার নিজস্ব ৫টি প্রতিষ্ঠান আছে, যার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আর আমাদের একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান টিসিবিকে ইচ্ছাকৃতভাবে অকার্যকর করে রেখেছে অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থে।
সিন্ডিকেট ব্যবসা ভাঙতে গেলে টিসিবিকে অবশ্যই শক্তিশালী করতে হবে। তাকে সরকারের বাধা ধরা নিয়মে চালানো যাবে না। তাকে চলতে হবে একজন সফল ব্যবসায়ীর মতো। যেখানে সস্তায় জিনিস পাওয়া যায় তা টেন্ডার ছাড়াই কেনার অধিকার দিতে হবে। বিদেশি সরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা সরকার স্বীকৃত নামকরা কোম্পানি থেকে কিনতে হবে। অবশ্যই তা সাধারণ বাজার দর থেকে কম হতে হবে।
৫. সীমিত বিদ্যুতের ব্যবহার কোথায় বেশি প্রয়োজন : এ প্রবন্ধটি লেখি ১৬ জানুয়ারি ২০০৮। তখনও বিদ্যুতের সঙ্কট চলছিল। সামনে বোরো মৌসুম। সরকার হঠাত্ করে বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়াতে পারবে না। সরকারকে সরাসরি প্রস্তাব দিলাম ইরি-বোরোর জল-সেচের জন্য যে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ লাগবে তা থেকে এক কিলোওয়াট বিদ্যুত্ কম দেয়া যাবে না। প্রয়োজন বোধে প্রেসিডেন্ট হাউস থেকে সেনানিবাস, মন্ত্রীপাড়াসহ সারা দেশের শহরগঞ্জে লোডশেডিং বাড়িয়ে হলেও তা করতে হবে। সরকার এ ব্যবস্থা কার্যকর করার ফলেই ২০০৮ সালে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। আনন্দের বিষয়, সরকার এবারও সে পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে আমরা শহরবাসী লোডশেডিং-এর কারণে কিছুটা কষ্ট পাব, কিন্তু ১৫ কোটি লোকের খাদ্য উত্পাদন জল সেচের অভাবে ব্যাহত হলে সারা জাতিকে তার মাশুল দিতে হবে।
তবে সরকারকে দ্রুত বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কিছু বিদ্যুত্ কেন্দ্র তৈরি করলেই চলবে না। বিদ্যুত্ উত্পাদনের কাঁচামাল গ্যাস ও কয়লা দ্রুত উত্পাদনের চেষ্টা যুগপত্ভাবে চালাতে হবে।
৬. শেখ হাসিনাকে লেখা খোলা চিঠি : এ চিঠিটি শেখ হাসিনার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ২১ জানুয়ারি, ২০০৯ সালে লেখা। ওই চিঠিতে ১৩টি বিষয় উল্লেখ করেছি। তাতে কৃষি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে টিসিবিকে সক্রিয় করার পরামর্শ ছিল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল প্রশাসনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। প্রশাসনে নীতি-নির্ধারণে প্রকৌশলী, টেকনোক্র্যাট, বিশেষজ্ঞ খুবই কম আছে, যা ছিটেফোটা আছে তারাও কোণঠাসা হয়ে আছে। চীনের উদাহরণ দিয়ে বলেছিলাম, সেই বিরাট দেশটিতে মাত্র ৯ জন লোক প্রশাসনিক কাজ চালাচ্ছেন। তার ৭ জনই হচ্ছেন প্রকৌশলী ও টেকনোক্র্যাট। প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও একজন দক্ষ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তাই সেখানে কোনো লাল ফিতার দৌরাত্ম্য নেই। সে দেশের নীতি-নির্ধারণের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে টেকনোক্র্যাটদের প্রাধান্য। আমাদের ফাইল চালাচালি বন্ধ করতে হলে দক্ষ প্রকৌশলী, টেকনোক্র্যাট ও বিশেষজ্ঞদের যথাস্থানে বসাতে হবে। তাদের কর্মকাণ্ডে বাধা দেয়া যাবে না, তবে তাদের জবাবদিহিতা থাকবে। অর্থমন্ত্রী এ বছরের বাজেট মোতাবেক উন্নয়ন কাজ করা গেল না বলে আক্ষেপ করেছেন। তাই বাজেটকে অনেক কাটছাঁট করে ছোট করা হচ্ছে। ছোট্ট ঘটনা বলি। আমি নীলফামারী টেক্সটাইল মিলের জেনারেল ম্যানেজার। মিলটি জমি নেয়া থেকে উত্পাদনে যেতে ২ বছর ৬ মাস লাগে। দ্রুত কাজ শেষ করায় তার ব্যয় ১৫ কোটি টাকার জায়গায় ১২.৫ কোটি টাকায় শেষ হয়। অন্যান্য প্রজেক্টে টাকা খরচ না করতে পারায় বিটিএমসিকে সে টাকা আমার প্রজেক্টে ডাইভার্ট করতে বলি। বিটিএমসি তা করায় আমার পক্ষে এটা করা সম্ভব হয়। আমার বার্ষিক বাজেটের খর

No comments

Powered by Blogger.