দোয়েল ল্যাপটপ

কারিগরি ত্রুটি দূর করে দোয়েল ল্যাপটপ আবার বাজারে ছেড়েছে টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস)। এটা খুবই আশার কথা। সরকার স্বল্পমূল্যে মানুষের হাতে ল্যাপটপ পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে বর্তমান মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের জুন মাসে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ল্যাপটপ তৈরির ঘোষণা দেয়।


এরপর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ জন্য ১৪৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। বুয়েটের পরামর্শ এবং সহযোগিতায় মালয়েশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান ও কয়েকজন বিদেশি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় এই আশা জাগানো প্রকল্পের কাজ। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে এটি বাজারে আসে।
এদেশের প্রযুক্তিবিদদের নিজস্ব দক্ষতা ও নৈপুণ্যে দেশে সংযোজিত ল্যাপটপ ‘দোয়েল’-এর বিতরণ ও বাজারজাতকরণ উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের অক্টোবরে জাতীয় পাখির নামে নামাঙ্কিত দোয়েলের উদ্বোধন করে তিনি বলেছিলেন, তাঁর সরকার ২০২১ সালের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার যে অঙ্গীকার করেছে তা তারা পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ প্রযুক্তিক্ষেত্রে দোয়েলের সংযোজন নিঃসন্দেহে সরকারের সেই অঙ্গীকার পূরণে আরেক ধাপ অগ্রগতি। শুরু থেকেই এই ল্যাপটপ নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে দামে অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা খুব আকৃষ্ট হয়। ল্যাপটপ বাজারজাত করার পর এটি সংগ্রহ করার জন্য রীতিমতো হৈহুল্লোড় পড়ে যায়। প্রাইমারী মডেলের দোয়েলের দাম রাখা হয় মাত্র ১০ হাজার টাকা, যা বাজার চলতি অন্যান্য ল্যাপটপের মূল্যের তুলনায় অনেক কম। সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে অনেকেই এই ল্যাপটপ সংগ্রহের জন্য আগ্রহী হন। সরকার তিন ধরনের ল্যাপটপ বাজারে ছাড়ে। এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা মূল্যের প্রাইমারী মডেলটি বাজারে ছাড়ার পর এতে ত্রুটি ধরা পড়ে। এরপর এর উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়। অবশেষে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সব ত্রুটি দূর করে আবার দোয়েল বাজারে এসেছে। গুণগত মানসম্পন্ন এই ল্যাপটপের দাম ১০ হাজার ৫শ’ টাকা রাখা হয়েছে। একটি পূর্ণাঙ্গ ল্যাপটপ হিসাবেই ব্যবহার করা যাবে প্রাইমারী মডেলের এই ল্যাপটপ। এতে ল্যাপটপ ব্যবহারকারীদের সব ধরনের প্রত্যাশাই পূরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেদিক থেকে দেশীয় প্রযুক্তির দোয়েল ল্যাপটপের সংযোজন এক বিরাট অগ্রগতি। ল্যাপটপ এখন কোন বিলাসপণ্য নয়। দৈনন্দিন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ল্যাপটপ স্থান করে নিয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের কাছে ল্যাপটপ অন্যতম আকর্ষণীয় প্রযুক্তি। আর তাই দেশীয় প্রযুক্তির ল্যাপটপ সহজলভ্য করতে পারলে তা প্রজন্মের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। জ্ঞানে ও প্রযুক্তিতে নিজেকে এবং দেশকে সমৃদ্ধ করতে তারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

No comments

Powered by Blogger.