সোনালী ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তাকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ- স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ব্যাংক শাখায় যেতেন

সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কর্মকর্তারা হলেন: সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মীর মহিদুর রহমান ও ননীগোপাল নাথ, রূপসী বাংলা হোটেল শাখার ঋণপত্র (এলসি) বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিহির চন্দ মজুমদার, ওয়াহিদুজ্জামান ও কনিষ্ঠ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান।


দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমি একজন জুনিয়র অফিসার, কেরানি হিসেবে এখানে কাজ করি। কোনো বিল-ভাউচার বা কাগজে স্বাক্ষর করার ক্ষমতা আমার নাই। আমি কীভাবে জড়িত থাকব। হলমার্ক ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে উপরের দিকে লোকেরা জড়িত। যাঁরা বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর করেছেন, তাঁদের জড়িত থাকার প্রমাণ তো দুদকের কাছেই আছে।’
সাইদুরের কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চান, ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় কাজ করা অবস্থায় হলমার্কের ব্যাপারে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি যেতেন কি না। অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে কোনো প্রভাবশালী জড়িত কি না—প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী মাঝে মাঝে শাখায় আসতেন। ডিজিএমের কক্ষে যেতেন। ওই শাখার এক নারী কর্মী তাঁর আত্মীয়। উপদেষ্টা তাঁর কাছে আসতেন।’
সাইদুর রহমানের এই বক্তব্যের ভিডিও কপি প্রথম আলোর কাছে সংরক্ষিত আছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর এলাকার মানুষ হিসেবে পরিচিত সোনালী ব্যাংকের ওই নারী কর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। এ ছাড়া দুদক মোদাচ্ছের আলীর সঙ্গেও কথা বলবে বলে জানা গেছে।
দুদকের দেওয়া নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই পাঁচ কর্মকর্তা গতকাল বুধবার হাজির হলে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপপরিচালক মীর জয়নুল আবেদিন। আজ বৃহস্পতিবার একই ব্যাংকের আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রী একই গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামকে ২ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
অনুসন্ধানসংশ্ল্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে ওই কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ঋণ বিতরণের সময় তাঁদের ভূমিকা ও কী ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল। তবে পাঁচ কর্মকর্তাই এই ঋণ জালিয়াতিতে তাঁদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জিএম মীর মহিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে নিষেধ করা হয়েছে।
জানা গেছে, দুদকের কর্মকর্তারা এ পর্যন্ত রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান, উপমহাব্যবস্থাপক সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার ধর, কর্মকর্তা উকিল উদ্দিন আহমেদ, কর্মকর্তা তুষার কান্তি দাস, মেহেরুননেসা ও তসলিমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ ছাড়া হলমার্ক গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত চার প্রতিষ্ঠান—আনোয়ারা স্পিনিং মিলের প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম, ম্যাক স্পিনিং মিলের মীর জাকারিয়া, সেঞ্চুরী ইন্টারন্যাশনালের জিয়াউর রহমান ও স্টার স্পিনিং মিলের আবদুল বাছিরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।

No comments

Powered by Blogger.