বাহান্ন বাজার তেপান্ন গলি by মোরসালিন মিজান

ঈদ আসন্ন। প্রতিবারের মতো এবারও মহা উৎসবে মাতবে দেশ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পোশাক কেনাকাটা অনেকেই শেষ করেছেন। তবে শেষ কি আর হয়? তাই গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটা। দোকানের পণ্য শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কেনাকাটা শেষ হচ্ছে না। বরং পুরো কাজটা আনন্দ নিয়ে করছেন অসংখ্য মানুষ।


নিজের জন্য যতটা, তারও বেশি কিনছেন আত্মীয় পরিজনের জন্য। ঈদের এ দিকটি সত্যিই খুব চমৎকার।
তবে কেনাকাটা শেষ করে গ্রামের বাড়ির পথ ধরা মানুষের সংখ্যা এখন সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছেন। ট্রেনে বাসে লঞ্চে করে ছুটছেন পরিজনের কাছে। তবে এ ক্ষেত্রে ঝক্কি অনেক। পরিবহনের চেয়ে যাত্রী সংখ্যা এখন বহুগুণ বেশি। ফলে পদে পদে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। সবার আগে আসে রেল পথের কথা। এ পথে ভিড় সবচেয়ে বেশি। বিড়ম্বনাও। টিকিট সংগ্রহের ঝক্কি একরকম শেষ হয়েছে। বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন যাত্রীরা। কিন্তু এরই মধ্যে একাধিক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে গেছে। রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেস বুধবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে চারঘাট উপজেলার সারদা স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনাকবলিত হয়। ফলে রাজশাহীর সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ প্রায় ২০ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। রাজশাহীর দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা-রাজশাহী-লালমনিরহাট, ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-দিনাজপুর-নিলফামারী লাইনের প্রতিটি ট্রেন দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিলম্বিত হয়। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম- নোয়াখালী, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ লাইনের ট্রেনগুলো বিলম্বিত হচ্ছে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা করে। সামনের দিনগুলোতেও ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হবে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদেরÑ এমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যাত্রীদের বড় একটি অংশ বাড়ি ফিরছে বাসে করে। মিনিটে মিনিটে রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন পরিবহনের বাস। গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলাবাগান, আরামবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন গাড়ির জন্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিডিউল ঠিক রাখতে পারছে না কোম্পানিগুলো। তবে একটু আগে পড়ে হলেও বাড়িতে ফিরবেন, পরিজনের সঙ্গে ঈদ করবেন- এই আনন্দ তাঁদের প্রত্যেকের চোখে মুখে। বাসের পাশাপাশি বহু যাত্রী ঢাকা ছাড়ছেন লঞ্চে করে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে তাই মানুষের উপচে পড়া ভিড়। গায়ে গা লেগে যায়। আর হই হুল্লোড় চিৎকার চেচামেচি তো আছেই। এরই মাঝে সদরঘাটে দুই লঞ্চের মধ্যে পড়ে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। অর্ধাৎ দুর্ঘটনা ইতোমধ্যে সঙ্গী হয়েছে যাত্রীদের। এর পরও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে গ্রামে ফিরছে মানুষ। এদিকে ঘরমুখো যাত্রী আর কেনাকাটায় ব্যস্ত মানুষের চাপে যানজট একদমই দূর হচ্ছে না। প্রধান প্রধান সড়ক গ্যারেজের রূপ ধারণ করেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে পড়ে থাকছে গাড়ি। বৃহস্পতিবার আসাদ গেট থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত পৌঁছতে আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। একইভাবে জাহাঙ্গীর গেট, ফার্মগেট, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, পল্টন এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে আর মাত্র কয়েকটি দিন। এ অবস্থা আমূল পাল্টে যাবে। ফাঁকা হবে রাজধানী। শহরজুড়ে ফুরফুরে বাতাস বইবে। কয়েক মিনিটে গোটা শহর চক্কর দেয়া যাবে। সে দৃশ্যটি কল্পনা করতেই অন্যরকম ভাললাগা এসে ভর করে মনে। তবে এ আনন্দের সঙ্গী হবেন কেবল তারাই যারা বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় ঈদ করবেন।

No comments

Powered by Blogger.