ইচ্ছা পূরণের প্রস্তুতি by শাহ আহমদ রেজা

চারদিনের সফর শেষে ৯ নভেম্বর ভুটান থেকে ফিরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার এই সফরকালে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলপথে যোগাযোগ স্থাপন করতে ‘সম্মত’ হয়েছে ভুটান। সুখবরটি জানিয়ে দু’দেশের যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এর ফলে বাংলাদেশ ও ভুটানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও জনগণের পর্যায়ে যোগাযোগ অনেক বাড়বে।
খবরটুকু এমন কৌশলে প্রচার করা হয়েছে যা পড়ে মনে হতে পারে যেন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারই ভুটানের সঙ্গে স্থলপথে যোগাযোগ স্থাপনের ব্যাপারে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফরে যাওয়ার ফলেই সানন্দে ‘সম্মত’ হয়েছে ভুটান। অন্যদিকে সত্য কিন্তু অন্য রকম। ভুটানের সঙ্গে এই যোগাযোগ স্থাপনের প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ ও ভুটান ১০ বছর মেয়াদি একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু মাঝখানে যথারীতি বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল ভারত। দেশটি তার সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়েছিল। কারণ ভুটান দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব থেকে ভারত দ্বারা বেষ্টিত। সুতরাং ভুটানে যাতায়াত করতে হলে ভারতের ভূমি ও সড়ক ব্যবহার করতে হবে। এখানেই সুযোগ নিয়েছিল ভারত। নিজের ভূমি ও সড়ক ব্যবহার করতে দেয়ার বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশের কাছে করিডোর সুবিধা চেয়ে বসেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ রাজি হয়নি। ফলে ঢাকা-থিম্পুর যোগাযোগও কাগজপত্রেই রয়ে গেছে। এই ভারতের কারণে আরেক প্রতিবেশী নেপালের সঙ্গেও বাংলাদেশের যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এবার বিশেষ ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। শোনা যাচ্ছে, ভারত নাকি ভুটান এবং নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের পথে আর বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। দৃশ্যত ভারতের এই মনোভাবেরই সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কথা শুধু এটুকুই নয়। এত বছর পর ভারত হঠাত্ কেন এতটা উদারতা দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে—সঙ্গত কারণেই সে প্রশ্ন উঠেছে। এর উত্তরও পাওয়া গেছে সঙ্গে সঙ্গেই। ভারতের এবং সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারেরও উদ্দেশ্য এখানে অন্য রকম। ভারত আসলে বাংলাদেশের কাছ থেকে করিডোর আদায় করার কৌশলের অংশ হিসেবেই উদারতা দেখানোর অভিনয় শুরু করছে। বাংলাদেশকে নেপাল ও ভুটানে যাতায়াতের সুযোগ দেয়ায় আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে বলতে পারবে, ভারত যেহেতু আমাদের সুযোগ দিয়েছে, সেহেতু আমাদেরও উচিত ভারতকে করিডোর দেয়া। বলা দরকার, এশিয়ান হাইওয়ের আড়ালে সরকার অনেক আগেই ভারতকে করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। কিন্তু দেশপ্রেমিকদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজে সম্ভব হচ্ছে না। এমন এক অবস্থার মধ্যেই ভারত আওয়ামী লীগ সরকারের কাজকে সহজ করে দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। নয়াদিল্লি ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশকে ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল ও ভুটানে যাতায়াত করতে দেয়া হবে। এর পরপরই থিম্পু সফরে বেরিয়ে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভুটানকেও ‘সম্মত’ করিয়ে এসেছেন তিনি।
বিশ্লেষণের এই দৃষ্টিকোণ থেকেই দেশপ্রেমিকদের মধ্যে ভবিষ্যত্ সম্পর্কেও চিন্তা বাড়ছে। কারণ বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে ভারতের উদারতা সত্প্রতিবেশীসুলভ, সুতরাং প্রশংসনীয় মনে হতে পারে। অন্যদিকে অভিজ্ঞতা অতি তিক্ত বলেই সম্ভাবনার অন্য দিকটি প্রাধান্যে এসেছে। দেশপ্রেমিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, নেপাল ও ভুটানে যাওয়ার পথ খুলে দেয়ার ডামাডোলের মধ্যে ভারত প্রথমে করিডোর আদায় করে নেবে। করিডোরের বিষয়টি বাংলাদেশের জনগণের গা সওয়া হয়ে যাওয়ার পর শুরু হবে নতুন পর্যায়ে ভারতের সেই পুরনো খেলা। নিজের নিরাপত্তাসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে ভারত বাংলাদেশের জন্য নেপাল ও ভুটানে যাতায়াত বন্ধ করে দেবে। তারও আগে সময় কাটাবে সড়ক নির্মাণ ও মেরামতের নাম করে। এ ব্যাপারে জটিলতা সৃষ্টি করতেও ভারত পিছিয়ে থাকবে না। ফলে কয়েক মাসের ব্যবধানেই বাংলাদেশের নেপাল ও ভুটানে যাতায়াত করার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ক্ষুদ্র ও দুর্বল প্রতিবেশী বলে তিন দেশের কারও পক্ষেই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। কোনো সরকার প্রতিবাদ করবেও না। আওয়ামী লীগ সরকার তো বটেই। বড়জোর মাস কয়েকের জন্য বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটানে যাতায়াত করার সুবিধা পাবে। মাঝখানে ভারত পেয়ে যাবে চিরস্থায়ী করিডোর। পরবর্তী হসপড অন্য কোনো দল ক্ষমতায় এলেও সে সরকারের কিছুই করার থাকবে না। কারণ, একদিকে ভারত নিজেই এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শক্তি, অন্যদিকে ভারতের পক্ষে লাফিয়ে এসে যাবে এসকাপসহ বিভিন্ন সংস্থা। আসবে জাতিসংঘও।
এভাবেই চমত্কার কৌশলে সরকার ভারতের স্বার্থে ভূমিকা পালন করে চলেছে। এশিয়ান হাইওয়ের আড়ালে সরকার আসলে যে ইন্ডিয়ান হাইওয়ে বানানোর আয়োজনে সম্মতি দিয়েছে, সেকথা এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মূলত ভারতের স্বার্থেই সরকার গণচীনের দেয়া ত্রিদেশীয় মহাসড়কের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। ভারতকে করিডোর দেয়ার বিরুদ্ধে আপত্তির কারণ নিয়ে বিভিন্ন উপলক্ষে আলোচনা করা হয়েছে বলে এখানে পুনরাবৃত্তিতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু একটি কথা বিশেষভাবে জানিয়ে রাখা দরকার। সেটা হলো, ভারতকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রেন ও যানবাহন চলাচল করার সুবিধা দেয়া হলে দেশের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। কারণ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টারস’ নামে পরিচিত রাজ্যগুলোতে বহু বছর ধরে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে। পাঁচ লাখের বেশি ভারতীয় সেনা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত রয়েছে। করিডোর দেয়া হলে ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পণ্যের সঙ্গে তার সেনাবাহিনী এবং অস্ত্রশস্ত্রও আনা-নেয়া করবে। এর ফলে বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে। তেমন অবস্থায় বাংলাদেশকে ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় তথা সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হবে। পরিণতিতে হুমকির মুখে পড়বে বাংলাদেশ।
কথাগুলো অকারণে বলা হচ্ছে না। ভারতকে করিডোর দেয়ার আগেই এ সংক্রান্ত কিছু অনুমান সত্য হতে শুরু করেছে। একটি উদাহরণ হিসেবে আসামের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত সংগঠন উলফা’র দুই নেতার গ্রেফতারকেন্দ্রিক সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের উল্লেখ করা যায়। ভারত সরকার দাবি জানিয়েছে, উলফার পররাষ্ট্র বিষয়ক সম্পাদক শশধর চৌধুরী এবং অর্থ সম্পাদক চিত্রাবন হাজারিকা নাকি গত ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ত্রিপুরার বিএসএফ আউটপোস্টে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন! সেখান থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে আসামের রাজধানী গৌহাটিতে নিয়ে যাওয়ার পর ৭ নভেম্বর দুজনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নেয়ার ছবিও আমার দেশসহ বাংলাদেশের কয়েকটি দৈনিক প্রকাশ করেছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কারণ হলো, আগের কয়েকদিন ধরেই উলফার এই দুই নেতাকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক খবরে বলা হয়েছিল, রাজধানী ঢাকার উত্তরা এলাকার একটি বাসা থেকে ১ নভেম্বর তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। উলফার পক্ষ থেকেই গ্রেফতারের খবরটি জানানো হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে তত্পর হয়ে উঠেছিলেন সাংবাদিকরা। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি ও র্যাবের ডিজি পর্যন্ত প্রত্যেকে একই সুরে বলেছেন, তারা নাকি এ ব্যাপারে ‘কিছুই’ জানেন না! অন্যদিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, বাংলাদেশই দুই উলফা নেতাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করেছে। কিন্তু অনুপ্রবেশ ছাড়া বাংলাদেশে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি। বাংলাদেশ সরকার ভারতে তাদের ‘পুশ ব্যাক’ করেছে! ভারতীয় সূত্রের বরাত দিয়ে ৭ নভেম্বর এ সংক্রান্ত খবর প্রচার করেছে বিবিসি। সেই থেকে উলফার দুই নেতাকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং পুলিশ ও র্যাব অস্বীকার করায় প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে বাংলাদেশ থেকে তাদের গ্রেফতার করেছে কে বা কারা? প্রশ্ন ওঠার কারণ, উলফা জানিয়েছে এবং অন্য কিছু সূত্রেও জানা গেছে, দু’জনকে ঢাকাতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। ধরে নিয়ে গেছে ‘সাদা পোশাকধারী’ কয়েকজন। প্রশ্ন হলো, এই ‘সাদা পোশাকধারী’রা যদি বাংলাদেশের কোনো বাহিনীর বা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য না হয়ে থাকে তাহলে তারা কারা? নাকি সত্যিই উলফার দুই নেতা ‘আত্মসমর্পণ’ করেছেন? আত্মসমর্পণের বিষয়টিকে সচেতন কেউই অবশ্য বিবেচনায় নিচ্ছেন না। কারণ, উলফার মতো সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত সংগঠনের এত উচ্চ পর্যায়ের দু’জন নেতার আত্মসমর্পণ করার প্রশ্নই উঠতে পারে না। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যেহেতু বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই, সেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করতে পারেনি। ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে অলিখিতভাবে, ভারত যাকে ‘পুশ ব্যাক’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এটা যদি সত্য না হয় তাহলে ধরে নিতে হবে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর লোকজন এসে তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। কিন্তু অন্য দেশ বলে ‘র’ সেকথা জানান দিচ্ছে না।
সত্য যেটাই হোক না কেন, সচেতন মানুষ মাত্রই উদ্বিগ্ন না হয়ে পারছেন না। কারণ, সরকার যদি গ্রেফতার করে ভারতের হাতে তুলে দিয়ে থাকে এবং উলফা যদি সেকথা জানতে পারে তাহলে উলফার গেরিলা যোদ্ধারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও অবস্থান নেবে। ফলে বাংলাদেশকে অযথাই ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে হবে। কারণ, আগেই বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টারস’ নামে পরিচিত রাজ্যগুলোতে বহু বছর ধরে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে। আসাম এই ‘সেভেন সিস্টারস’-এর অন্যতম এবং বাংলাদেশের সঙ্গে রাজ্যটির সীমান্ত রয়েছে। উলফা এতদিন বাংলাদেশকে শত্রু মনে করেনি। কিন্তু দু’জন শীর্ষ নেতার গ্রেফতার ও হস্তান্তরে সরকারের ভূমিকা থেকে থাকলে উলফা বাংলাদেশের প্রতি এতদিনকার মনোভাবে পরিবর্তন আনবে। তেমন অবস্থায় একদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উলফা অভিযান শুরু করতে পারে, অন্যদিকে উলফার আক্রমণ প্রতিহত করার অজুহাত দেখিয়ে ভারতের সেনাবাহিনী বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। বলা দরকার, এ ধরনের উদ্দেশ্য নিয়েই কি ভারত বহুদিন ধরে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে? সরকার সত্যিই উলফার দুই নেতাকে গ্রেফতার ও হস্তান্তর করে থাকলে বাংলাদেশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঢুকে পড়া সময়ের বিষয়ে পরিণত হতে পারে। ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে তার সেনাবাহিনী এবং অস্ত্রশস্ত্রও আনা-নেয়া করবে। এর ফলে আসামের তো বটেই, বাংলাদেশ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিটি রাজ্যের চোখেই শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে। বাংলাদেশকে তখন ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে হবে।
এখানে অন্য একটি দিকও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা দরকার। আগেই বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার যদি উলফা’র দুই নেতাকে গ্রেফতার ও হস্তান্তর না করে থাকে তাহলে বুঝতে হবে, ‘র’-এর গোয়েন্দারা তাদের ধরে নিয়ে গেছে। বিষয়টি ভয়ঙ্কর হলেও একে একেবারে অসম্ভব ভাবার সুযোগ নেই। কারণ মালদ্বীপ, ভুটান ও নেপালে বহুবার ‘র’ এ ধরনের অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে সমর্থন না পাওয়ায় অতীতে ‘র’-এর গোয়েন্দারা বাংলাদেশে প্রকাশ্যে বড় ধরনের কোনো অভিযান চালাতে পারেনি। এবার তারা চাইবে সে অবস্থায় পরিবর্তন ঘটাতে। কোনো কোনো সূত্র মনে করে, ‘র’-এর গোয়েন্দারাই উলফার দুই নেতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে ভেবে শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণের নাটক সাজানো হয়েছে। সত্য যেটাই হোক না কেন, এর দায়দায়িত্ব সর্বতোভাবে এসে পড়েছে সরকারের ওপর এবং বাংলাদেশকে সেভেন সিস্টারসের প্রতিপক্ষ বানিয়েছে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। দেশপ্রেমিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, প্রকাশ্যে সাফল্যের প্রচারণা চালানো হলেও সরকার আসলে ভারতের ইচ্ছা পূরণের পদক্ষেপই নিয়েছে। সেদিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। ক্ষুদ্র প্রতিবেশীদের নিয়ে ভারতের যে দূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে, তার বাস্তবায়নকেও সরকার অনেক সহজ করে দিয়েছে। একে এক কথায় ভারতের ইচ্ছা পূরণের প্রস্তুতি বলা যায়।
লেখক : সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.