শাবি উত্তপ্ত, ভিসি’র সরে যাওয়ার ঘোষণায় তোলপাড়

সিলেট অফিস: ইউজিসির চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরীর সফরের পর থেকে ভেতরে ভেতরে আগুন জ্বলছে    পৃষ্ঠা ৫ কলাম ১
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিসি প্রফেসর ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ এখন নিজ দায়িত্ব থেকে ইচ্ছা করেই সরে যেতে চাইছেন। সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসসহ সিলেটে তোলপাড় চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষকদের অনেকে ইতিমধ্যে হুমকি দিয়েছেন, ভিসি পদত্যাগ করলে তারাও পদত্যাগ করবেন। এতসব ঘটনার মূল কারণ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ভিসিকে ইউজিসি চেয়ারম্যানের ‘মিথ্যাবাদী’ বলা। ওই সময় দু’জনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ঘটে। এরপর থেকে মানসিকভাবে ভিসি নিজ দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বাম ঘরানার শিক্ষকদের বড় অংশটি তাকে যে কোন মূল্যে ক্যাম্পাসে রাখতে চাইছে। ওদিকে দৃশ্যমান ঘটনা ইউজিসি চেয়ারম্যান ও ভিসি দ্বন্দ্ব হলেও এর ভেতরে রহস্য অনেক। আর এ কারণেই এখন ভেতরে ভেতরে আগুন জ্বলছে ক্যাম্পাসে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। আয়োজক ছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক। ইউজিসি চেয়ারম্যান আজাদ চৌধুরী ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। কিন্তু ভিসি প্রফেসর ড. সালেহ উদ্দিনকে অনুষ্ঠানে অতিথিই করা হয়নি। এমনকি আমন্ত্রণপত্রে ভিসির নাম রাখা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান হওয়ায় অতিথি না করা সত্ত্বে ভিসি সেখানে যান। অনুষ্ঠান চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটি কয়েক ছাত্র মঞ্চে উঠে ‘মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষার্থী’র নামে ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেয়। তাতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যায়িত করে। অনুষ্ঠানে ইউজিসি চেয়ারম্যানের আগে বক্তব্য রাখেন ভিসি ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ। এ সময় তিনি ইউজিসি চেয়ারম্যানকে বলছেন, বিগত দুই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে অর্ধডজন চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু তাতে আপনি সাড়া দেননি। ইউজিসি চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে ভিসিকে আক্রমণ করেন। এক পর্যায়ে তিনি ভিসিকে মিথ্যাবাদী হিসেবে উল্লেখ করেন। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। এ ঘটনার পর ভিসি ইউজিসি চেয়ারম্যানকে চা খাওয়ার দাওয়াত দিলেও কথা না বলে তিনি ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে গুঞ্জন ওঠে অভিমান করে ভিসি ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ার। এ সময় ভিসি কয়েক জন সিনিয়র শিক্ষককেও জানান পদত্যাগ করবেন। এ নিয়ে সোমবার সকাল থেকে ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন মুক্তিযুদ্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকরা। তারা ভিসিকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ জানান। অবস্থান ধর্মঘট চলার সময় ভিসি তার কার্যালয় থেকে নিচে নেমে শিক্ষকদের সান্ত্বনা দেন। এ সময় শিক্ষকদের একটি অংশ ভিসিকে পদত্যাগ না করার দাবি এবং ইউজিসি চেয়ারম্যান ভিসিকে মিথ্যাবাদী বলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে। দুপুরে ভিসির কার্যালয়ের সামনেই তারা মানববন্ধন করেন। এ সময় পদার্থ বিজ্ঞানের প্রফেসর ড. সুশান্ত কুমার দাস ওখানে আসেন এবং অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. হাসানুজ্জামানকে মানববন্ধন করতে নিষেধ করেন। পরে ড. সুশান্ত সবার সামনেই ড. শ্যামলকে মারধর করতে এগিয়ে যান। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর পরে অবস্থান ধর্মঘট চলাকালে সিনিয়র শিক্ষক হাসানুজ্জামান শ্যামল বলেন, ইউজিসি চেয়ারম্যানের আচরণে ভাল ভিসি আমরা হারাতে চাই না। তিনি হুমকি দেন ভিসি পদত্যাগ করলে ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষকরাও চলে যেতে পারেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না হলে ক্যম্পাসে আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে ভিসি প্রফেসর ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমি ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাবোই। তবে এখনই নয়। শিক্ষকদের মুখের দিকে তাকিয়ে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে কিছুদিন পরে চলে যাবো। তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক শিক্ষকের ইন্ধনে ক্যম্পাসে আমাকে হেনস্তা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো আমার গায়েও হাত তোলা হতে পারে। এদিকে, সোমবারের ঘটনার পর রাতে ড. সাইফুল ও ড. ইউনূসসহ ৩ শিক্ষক ইউজিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠক নিয়ে ক্যাম্পাসে তোলপাড় চলছে। এদিকে পুরো ঘটনাকে সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নারাজ প্রফেসর ড. ইউনূস। তবে শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এসব ঘটনার হোতা প্রফেসর ড. ইউনূস। বিগত তিন বছর তিনি ভিসির কাছের লোক ছিলেন। প্রো-ভিসির দৌড়ে পিছিয়ে পড়ায় তিনি কয়েক জন শিক্ষক নিয়ে এখন ভিসির বিরুদ্ধে ওঠেপড়ে লেগেছেন। অথচ ড. ইউনূসের কারণেই ভিসির ধারেকাছে যান না আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকরা। এদিকে ভিসির পদত্যাগের ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসে বৈঠকের পর বৈঠক হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শিক্ষকরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। এ দ্বন্দ্ব সংঘাতে অগ্রসর হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
১০১ বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মীর নিন্দা
সিলেটবাসীর বহুদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও আন্দোলনের ফসল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঘিরে সারা দেশবাসীর অনেক স্বপ্ন, অনেক প্রত্যাশা। অথচ বেশ কিছুদিন ধরে কিছু কুচক্রী মহল নানা কৌশলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ অশান্ত ও অস্থিতিশীল করার অব্যাহত পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১লা জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান বানচালসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মো. সালেহ উদ্দিনকে অপমানিত ও হেয় করার অপচেষ্টা চালানো হয়- যাতে সৎ ও ব্যক্তিত্ববান উপাচার্য অপমানিত হয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এটাই ছিল কুচক্রীদের গোপন বাসনা, যা দেশবাসীর কাছে আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এ দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দেশবাসীর মতো আমরাও উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। শাবিপ্রবির ভিসির উদ্দেশে নিবেদন, সারা দেশের মানুষের মতো আমরাও আপনার পাশে আছি। আমরা চাই আপনার নেতৃত্বে এ বিশ্ববিদ্যালয় একটি আদর্শ বিদ্যাপীঠ হিসেবে গড়ে উঠুক এবং বরাবরের মতো সেশনজটহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কুচক্রীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি এবং সঙ্গে সঙ্গে চক্রান্তকারীদের মুখোশ উন্মোচনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। বিবৃতিদাতারা হচ্ছেন- প্রবীণ গণসংগীতশিল্পী চন্দ্রাবতী রায় বর্মন, উদীচী সিলেটের সাবেক সভাপতি ব্যরিস্টার মো. আরশ আলী, লেখক-অনুবাদক ডক্টর সুরেশরঞ্জন বসাক, কবি-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শুভেন্দু ইমাম, কবি-শিশু সাহিত্যিক তুষার কর, সম্মিলিত নাট্যপরিষদের পরিচালক ভবতোষ রায়বর্মন, খেলাঘর সিলেটের সভাপতি পুরঞ্জয় চক্রবর্তী বাবলা, সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক সামসুল আলম, বিশিষ্ট আবৃত্তিকার অম্বরীষ দত্ত, আবৃত্তিকার মোকাদ্দেস বাবুল, অঙ্গীকার বাংলাদেশের পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য আইনজীবী মইনুদ্দিন আহমদ জালাল, জাসদ সিলেট মহানগরের সভাপতি আইনজীবী জাকির আহমদ, আইনজীবী তাপস ভট্টাচার্য, আইনজীবী ইশফাক বখত চৌধুরী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ কে এম সমিউল আলম, আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক গোলাম রাজ্জাক চৌধুরী জুবের, নাগরিক মৈত্রী সিলেটের আহ্বায়ক আইনজীবী সমরবিজয় সী শেখর, সম্মিলিত নাট্যপরিষদ সিলেটের সভাপতি আইনজীবী সৈয়দ মনির হেলাল, শাহ আবদুল করিম পরিষদের সভাপতি গীতিকার শাহ নূরজালাল, কবি ডক্টর জফির সেতু, সিলেট কমার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ কবি ডক্টর মোস্তাক আহমাদ দীন, যুব ইউনিয়নের সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি আইনজীবী রমেন্দ্রকুমার চন্দ, সাধারণ সম্পাদক বিএইচবি আবির, বাউল আবদুর রহমান, বাউল বশিরউদ্দিন সরকার, সোনার তরী সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি প্রবীর দেবনাথ, প্রারম্ভিকা প্রকাশের প্রধান ধ্রুব গৌতম, কবি সঞ্জয় নাথ সঞ্জু, চিত্রশিল্পী সুভাষ চন্দ্র নাথ, কবি কাজী সাইফুল আসফিয়া, ছড়ার ছোটকাগজ ছন্দালাপ সম্পাদক বশির আহমদ জুয়েল, চিত্রশিল্পী সুভাষ চন্দ্র নাথ, কবি কাজী সাইফুল আসফিয়া, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি প্রশান্ত চন্দ্র চন্দ, সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, সাংবাদিক ছামির মাহমুদ, আইনজীবী মনির উদ্দিন, নৃত্যাশ্রমের সহযোগী পরিচালক শ্রাবণী দাস, কবি নজরুল ইসলাম রানা প্রমুখ।
সুনামগঞ্জ: মহিলা পরিষদ সুনামগঞ্জের সভানেত্রী শিলা রায়, বরুণ রায় স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক নিরঞ্জন চৌধুরী, প্রবীণ শিক্ষাবিদ ধূর্যটি কুমার বসু, জাসদ সভাপতি আ ত ম সালেহ, সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি বজলুর মজিদ চৌধুরী খসরু, সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবীর জাহানূর, সিপিবি সভাপতি অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন আচার্য, সাধারণ সম্পাদক রহমান মিজান, সুনামগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আইনুল ইসলাম বাবলু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন হিলু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সুনামগঞ্জের সাধারণ সভাপতি আইনজীবী রুহুল তুহিন, সম্মিলিত সামাজিক জোটের সভাপতি শাহ আবু নাসের, তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির সুনামগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক বোরহান উদ্দিন দোলন, উদীচী সভাপতি বিজন সেন রায়, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, যুব ইউনিয়নের সভাপতি মোজাম্মেল হক মুনিম, সাধারণ সম্পাদক এনাম আহমদ, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নরেন ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক রুহুল হুদা কনক প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.