কুমিল্লায় ‘হাইটেক’ নির্বাচন

হাসান শাফিঈ: ভোট গ্রহণে আধুনিক পদ্ধতি (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম) ব্যবহারের পাশাপাশি ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায়ও সর্বাধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ হতে যাচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে। দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এ প্রথম কোন একটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণে প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যবহার হচ্ছে ইভিএম। একই সঙ্গে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় রাখা হচ্ছে ‘ওয়েবক্যাম’। কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন শাখা জানিয়েছে, একই   পৃষ্ঠা ২০ কলাম ১
নির্বাচনে দু’-দু’টি অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার হওয়ায় কুসিক নির্বাচনকে অবলীলায় ‘হাইটেক’ নির্বাচন বলে অভিহিত করা যায়। কমিশন সচিবালয়ের এ শাখা আরও জানায়, কুসিক নির্বাচনকে অতীতের যে কোন নির্বাচনের চেয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু করতেই কমিশন ওইসব ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ওয়েবক্যাম থাকায় নির্বাচন চলাকালে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে। ওয়েবক্যাম ব্যবহার করে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষা কাজ সম্পাদনের জন্য এরই মধ্যে ১৩০ জন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট নিয়োগ দিয়েছে কমিশন। গতকাল তাদের একদিনের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। এর আগে গত রোববার এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে পাঠানো হয়। কমিশন পাঠানো এ সংক্রান্ত একটি চিঠিতে বলা হয়েছে,  কুসিক নির্বাচন চলাকালে ভোট গ্রহণের পুরো প্রক্রিয়া ওয়েবক্যামের মাধ্যমে ধারণ করা হবে। এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য ১৩০ জন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। ৩রা জানুয়ারি (গতকাল) তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। সূত্র জানায়, কুসিক নির্বাচনের আগের দিন (আজ), ভোট গ্রহণের দিন এবং নির্বাচনের পরের দিন- এ তিনদিন নিরাপত্তার তিন স্তরবিশিষ্ট চাদরে ঢেকে ফেলা হবে। নিরাপত্তা রক্ষায় বাড়তি পদক্ষেপ হিসেবে এবারই প্রথম এ নির্বাচনে কেন্দ্রে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরেও কেন্দ্র প্রতি ৫ জন করে অ্যাকশন ফোর্স রাখা হচ্ছে। প্রতি কেন্দ্রের আশপাশে ৮ জনের একটি র‌্যাব টিম টহল দেবে। এছাড়া ওয়ার্ড প্রতি থাকছে একজন করে নিজস্ব পর্যবেক্ষক। প্রতি ওয়ার্ডে গোপন পর্যবেক্ষক রাখার ঘটনাও এ প্রথম। কুসিক নির্বাচনের নিরাপত্তা বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সবই নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে দায়িত্বে গাফিলতি, অবহেলা বা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠলে তাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে। কোন প্রার্থী নির্বাচনী বিধিবিধান অমান্য করলে তাকে গ্রেপ্তার এবং প্রার্থিতা বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন এবং সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবেন। এছাড়া কেন্দ্রের বাইরের পরিস্থিতি দেখভালে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন এসআই’র নেতৃত্বে থাকছে ৫ জনের অ্যাকশন ফোর্স। প্রতি তিনটি কেন্দ্রের জন্য পুলিশের একটি মোবাইল টিম সক্রিয় থাকবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক শাস্তি প্রয়োগে দায়িত্ব পালন করবেন। সংরক্ষিত ৯টি ওয়ার্ডে ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। কুসিক নির্বাচনে ৬৫টি ভোট কেন্দ্রে বুথ সংখ্যা ৪২১টি। ২৭ ওয়ার্ডে এক জন করে ২৭ জন গোপন পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা। কমিশনকে নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় রিপোর্ট দেবেন তারা। কোথাও অনিয়ম দেখলে গোপন পর্যবেক্ষক দল তাৎক্ষণিকভাবে তা রিটার্নিং অফিসারকে জানাবেন। কোথাও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা বন্ধে র‌্যাব-পুলিশের ৫০ জন রিজার্ভ ফোর্স রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে উপস্থিত থাকবেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)দের কর্মকাণ্ড দেখভালে কমিশনের দু’জন পর্যবেক্ষক সার্বক্ষণিকভাবে তাদের সঙ্গে থাকবেন। কুসিক নির্বাচনের ১২ নম্বর পরিপত্রে ফলাফল সংগ্রহ ও প্রকাশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচিত প্রার্থীদের বেসরকারি ফলাফল ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের জন্য কমিশন সচিবালয়ে ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ফলাফল সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সব কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এ দু’টি বুথ খোলা থাকবে। রিটার্নিং অফিসার বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করবেন। প্রিজাইডিং অফিসারের কাছ হতে ভোট গণনার বিবরণী প্রাপ্তির পর প্রার্থীর এজেন্টদের সম্মুখে শুধুমাত্র মেয়র পদের ফলাফল পড়ে শোনাবেন। নির্বাচন কমিশন এসব ফলাফল টেলিফোন ও ফ্যাক্সের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে। এজন্য নির্ধারিত ফরম রয়েছে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) বিধিমালা ২০১০-এর ৪১ বিধি অনুসারে ফলাফল একত্রীকরণের জন্য অবশ্যই একটি নোটিশ দিতে হবে। বিধি ৪২ অনুসারে ফলাফল একত্রীকরণ করে নির্বাচিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে হবে। সত্যায়িত কপি উপস্থিত প্রার্থী বা নির্বাচনী এজেন্টকে দিতে হবে। এছাড়া মেয়র প্রার্থীর জন্য বিশেষ ফরমে সব প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত করে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.