নকল টাকা-অপরাধী চক্র নির্মূল হোক

রাজধানী ঢাকার একটি বাসায় শুক্রবার নকল টাকা তৈরি কারখানার সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ফ্ল্যাট বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এক হাজার ও পাঁচশ' টাকার নকল নোট তৈরির সরঞ্জামও পুলিশ উদ্ধার করে। এর আগের দিন পুলিশ কমলাপুরের একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে ২১ হাজার টাকার নকল নোটসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। এ দুটি ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, জাল বা নকল নোট তৈরিতে যেমন একটি চক্র তৎপর, তেমনি তাদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর


অভিযানও চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অর্থ তোলার সময় আসল নোটের সঙ্গে নকল নোট পাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের যদি একটি ঘটনাও থাকে তা গুরুতর এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সবার দায়িত্ব এর প্রতিকারে সম্ভাব্য সব কিছু করা। কারণ এর সঙ্গে এটিএম সিস্টেমের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন জড়িত।
জাল ও নকল নোটের ব্যাপক বিস্তার ঘটলে আসল টাকার মূল্য কমে যায়। মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি এবং দেশের মুদ্রার ওপর আস্থা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। নকল ও জাল নোটে বাংলাদেশ সয়লাব, সেটা হয়তো বলা যাবে না। কিন্তু পরিস্থিতিতে উদ্বেগ যথেষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফে আসল ও নকল নোট চিহ্নিত করার কৌশল জনগণকে অবহিত করার জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পশুর হাটগুলোতে যে বিপুল অর্থ লেনদেন হয় তার সুযোগে কেউ যেন আসলের বান্ডিলে নকল নোট চালান করে দিতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব আরও বেশি। তাদের অভিযানে কিছু অপরাধী ধরা পড়ছে। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে যেভাবে নকল নোট তৈরির বিষয়টিকে 'কুটির শিল্প' পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে তাতে পুলিশি তৎপরতা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। নকল নোট তৈরির সঙ্গে একাধিক লোক জড়িত থাকে। একদল তৈরি করে এবং আরেক দল তা ছড়িয়ে দেয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চক্রের একজন পাকড়াও করতে পারলে অন্যদের নাগাল অপেক্ষাকৃত সহজেই পেতে পারে। নোটের উৎপাদক বা বাহক কাউকে ধরার পর যথাযথ অনুসন্ধানে যেন ঘাটতি না থাকে, সেটা নিশ্চিত করা চাই। এক হাজার বা পাঁচশ' টাকার ১০০টি নোটের মধ্যে একটি নোট ঢুকিয়ে দিলে তা ধরা অপেক্ষাকৃত কঠিন। কিন্তু এ কাজটিই অর্থনীতির স্বার্থে করা চাই। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সবার কাজ হচ্ছে বান্ডিলভর্তি জাল নোট যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখা। সীমান্তে বিশেষ নজরদারিও অপরিহার্য। এ ধরনের অপরাধে একাধিক দেশের নাগরিকরা কখনও কখনও সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। বাংলাদেশের কোরবানির হাটে নগদ অর্থের প্রচুর লেনদেন হয় এবং এ সময়ে গবাদিপশুর বিক্রেতাদের কারও পক্ষেই একটি একটি করে নোট পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। কিন্তু অপরাধীরা যদি বুঝতে পারে যে হাটের ওপর বিশেষ নজরদারি রয়েছে তা হলে তাদের পক্ষেও এ কাজটি করা সহজ হবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টিতে তৎপর থাকবে, এটাই কাম্য।
 

No comments

Powered by Blogger.