ভয়াবহ আকার নিচ্ছে গ্যাস সঙ্কটঃ বিকল্প না খুঁজে কূপ খননের ব্যবস্থা নিন

কাগজে পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নেয়ায় দেশে গ্যাস সঙ্কট ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। সঙ্কট মোকাবিলায় গৃহীত রূপকল্পের বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সরকার। গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে নতুন কোনো কূপ খনন করা হয়নি গত তিন বছরে। স্বভাবতই এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে। শিল্প, বাণিজ্য ও বিদ্যুৎ খাতকে দিতে হচ্ছে খেসারত। উপায়ান্তর না পেয়ে কর্তৃপক্ষ গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে একের পর এক সঙ্কোচনমুখী সিদ্ধান্ত নিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।
এর মধ্যে গ্যাসনির্ভর একাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার ফলে উৎপাদনে ধস নেমেছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের গ্যাস সংযোগ বন্ধ ঘোষণা দেয়ায় মুশকিলে পড়েছে বিপুলসংখ্যক শিল্প মালিক ও আবাসিক লোকজন। কবে নাগাদ এই সমস্যার সমাধান হবে সে সম্পর্কেও নিশ্চিত কেনো আশার বাণী শোনাতে পারছে না সরকার।
গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে এর আগে যে রূপকল্পের খসড়া করা হয় তাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১০ কোটি ঘনফুট উত্পাদন বাড়ার কথা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, এ সময়ের মধ্যে বড়জোর ৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হতে পারে। মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় ২০১১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ অন্তত ১২টি নতুন কূপ থেকে দৈনিক ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের কথা বলা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ১শ’ কোটি ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে লিজের প্রক্রিয়াধীন সমুদ্রবক্ষের ক্ষেত্রগুলোসহ অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে এ গ্যাস উত্তোলন করা হবে। কিন্তু এই কাগুজে পরিকল্পনা তথা পেট্রোবাংলার আশার বাণী বর্তমানের স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেই মনে হচ্ছে। বর্তমানে ৭৯টি কূপ থেকে কমবেশি গ্যাস উত্পাদন হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৮টি দেশের তিনটি উত্পাদন কোম্পানির, বাকিগুলো আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির অধীনে সক্রিয়। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, বিগত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার সময় কূপের সংখ্যা ছিল ৬৮টি। ওই সরকারের আমলেই তা বেড়ে ৭৯টিতে দাঁড়ায়। অথচ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বর্তমান সরকারের তিন বছরে নতুন কোনো কূপ খননের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এ অবস্থায় সময়োপযোগী পদক্ষেপের অভাবে বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, সরকারের সঙ্কোচনমুখী সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে গত ১০ নভেম্বর চট্টগ্রামে গ্যাসনির্ভর ৩টি বিদ্যুত্ কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে বিদ্যুত্ উত্পাদনে ধস নেমেছে। ফলে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে লোডশেডিং, জনজীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। এখন ন্যাশনাল গ্রিডের ধার করা বিদ্যুত্ দিয়ে কোনোমতে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু এটা কোনো সমাধান নয়। সারাদেশের অবস্থাও তথৈবচ। এর মধ্যে গ্যাস সঙ্কটে বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক টেক্সটাইল মিলসহ বহু শিল্পকারখানা। গ্যাসের চাপ কম থাকায় উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে, এমনকি সার কারখানাও চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র বসানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের খরচ বেড়ে যাবে এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দিতে হবে মোটা অংকের ভর্তুকি। বস্তুত এভাবে জোড়াতালি দিয়ে এধারকা মাল ওধারে সরিয়ে সমস্যার মৌলিক কোনো সমাধান হবে না। সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে নতুন নতুন কূপ খনন করে গ্যাস উত্তোলনের পরিমাণ বাড়িয়ে। সরকারের নেয়া স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনাতেই কূপের সংখ্যা বাড়ানোর কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। তা না হলে কেবল আশাবাদী রূপকল্পের খসড়া করে কোনোই ফায়দা হবে না। বলা দরকার, দেশে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের বিপুল মজুত রয়েছে। অভাব শুধু কূপ খনন করে উত্তোলন। তা করা না হলে কেবল বিকল্প উপায় এবং বহুমুখী সঙ্কোচনমুখী সিদ্ধান্ত উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না।

No comments

Powered by Blogger.