স্তন ক্যান্সার হলেই অপারেশন নয় by আতাউর রহমান কাবুল

কটি স্তনে ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর তা অপরটিতে ছডিয়ে পড়তে পারে—এই ভয়ে অনেকেই তাদের সুস্থ স্তনটিকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এমনকি ক্যান্সার একেবারে প্রাথমিক স্তরে শনাক্ত হলেও জীবনের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তারা। কথায় বলে, ক্যান্সার—নো আন্সার!

আর এখন দেখা যাচ্ছে, সেই উত্তরের সঠিক খোঁজ না পেয়ে নিজেদের ইচ্ছাতেই সুস্থ স্তনটিকেও অস্ত্রোপচার করে বাদ দিচ্ছেন অনেক নারীই। সাম্প্রতিক একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে, দুটি স্তন বাদ দেয়ার ঘটনা বেড়ে গেছে আশ্চর্যজনকভাবে। অথচ মেডিকেল সায়েন্সে একটি স্তনে ক্যান্সার হলে শুধু সে স্তনটি অপারেশন করাই যথেষ্ট। ক্যান্সার যদি অপর স্তনটিতে ছড়িয়ে না যায়, তবে অন্যটিকে বাদ দেয়ার কোনো প্রয়োজনই সাধারণত পড়ে না। কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত স্তনটিকে সারিয়ে তোলা আদৌ যাবে কি-না অথবা অপর স্তনটিতে যে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়বে না—ডাক্তাররা এ গ্যারান্টি দিতে না পারায় আজকাল আগেভাগে দুটি স্তনেই অস্ত্রোপচার করাচ্ছেন নারীরা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে পরিচালিত ওই সমীক্ষায় অবশ্য এ কথাও বলা হয়েছে যে, প্রোফিল্যাকটিক ম্যাসটেকটমি অর্থাত্ সুস্থ স্তনকে অপারেশন করে বাদ দেয়ার যে পদ্ধতি তাতে স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। একটু ভেবে দেখলে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যদিকে সুস্থ স্তনটিতে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি না থাকলে এ ধরনের অপারেশনের কোনো প্রয়োজন যে নেই তা বলাই বাহুল্য। অথচ প্রোফিল্যাকটিক ম্যাসটেকটমি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের অভাবে অনেক নারীই আজকাল দুটি স্তনই কেটে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বাফেলো রাজ্যের রসওয়েল পার্ক ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. স্টেফেন এজ ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে নিউইয়র্কের সব তথ্য ঘেঁটে দেখেন এ সময় প্রায় ৬ হাজার ২৭৫ জন মেয়ে তাদের ক্যান্সার নেই এমন স্তনটির অপারেশন করিয়েছেন। অবাক করার বিষয়, তাদের মধ্যে শুধু ৮১ শতাংশের অপর স্তনটিতে ক্যান্সার শনাক্ত করা হয়েছিল। বাকি ১৯ শতাংশ নারীর কিন্তু কোনো স্তনেই কোনো ধরনের ক্যান্সার ছিল না। এমনকি তাদের পরিবারের মধ্যেও ক্যান্সারের কোনো রকম ইতিহাস ধরা পড়েনি। ড. এজ জানান, পরিবারে স্তন ক্যান্সার বা ক্যান্সারের সমস্যা না থাকলে শুধু ঝুঁকি এড়াতে প্রোফিল্যাকটিক ম্যাসটেকটমির মতো অপারেশনের মধ্য যাওয়া উচিত নয়। তাছাড়া কোনো নারীর যদি একটি স্তনে ক্যান্সার শনাক্ত হয়, তবে এই অপারেশনে যাওয়ার আগে তাকে একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এর কুফল এবং অপারেশন না করালে সম্ভাব্য ঝুঁকির ব্যাপারে বিস্তারিত পরামর্শ নেয়া উচিত। (ইন্টারনেট অবলম্বনে)

কী করে বুঝবেন স্তন ক্যান্সার
স্তন ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনও জানা যায়নি। তাই একাধিক কারণকে স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয় :
জেনিটিক ফ্যাক্টর : যেমন—মা-খালার থাকলে সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* অবিবাহিত বা সন্তানহীনা মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি।
* একইভাবে যারা সন্তানকে কখনও স্তন্য পান করাননি, তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হয়।
* ৩০ বছর পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন, তাদের স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা একজন কম বয়সী মা হওয়া মহিলার থেকে অনেক বেশি।
* বয়স যত বাড়ে, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও তত বৃদ্ধি পায়।
* অল্প সময়ে বাচ্চা নিলে, দেরিতে মাসিক শুরু হলে, তাড়াতাড়ি মাসিক বন্ধ হলে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেড়ে যায়।
* একাধারে অনেক দিন জন্মনিরোধক বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
উপরোক্ত কারণগুলো ব্রেস্ট ক্যান্সারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এগুলোই একমাত্র কারণ নয়।
কী করে স্তন ক্যান্সার বুঝবেন
* সাধারণত ৩০ বছরের আগে এই রোগ কম হয়।
* বেশিরভাগ রোগী বুকে চাকা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।
* বুকে চাকা, সেই সঙ্গে কিছু কিছু রোগী ব্যথার কথাও বলে থাকে।
* কখনও কখনও বুকে চাকা এবং বগলেও চাকা নিয়ে রোগী আসতে পারে।
* নিপল ডিসচার্জ এবং নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়াও এ রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
* কিছু কিছু রোগী বুকে ফুলকপির মতো ঘা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে।
* অনেক সময় যে বুকে ব্যথা, সেদিকের হাত ফোলা নিয়েও আসতে পারে।
* এগুলো ছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সার দূরবর্তী কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে এমন উপসর্গ নিয়ে আসে; যেমন— হাড়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জণ্ডিস ইত্যাদি।

No comments

Powered by Blogger.