ইমরান খানের উপলব্ধি-শান্তি কি ফিরবে পাকিস্তানে?

পাকিস্তানে কি আবারও বিপন্ন হতে চলেছে গণতন্ত্র? আবারও কি সেনাশাসন আসছে সেখানে? সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পর এসব প্রশ্নই এখন ঘুরেফিরে আসছে। পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও সরকার এখন অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে। দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। এ অবস্থায় নতুন করে বোমা ফাটিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক ও তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রধান ইমরান খান। ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ ইমরান খান বলেছেন, একাত্তর থেকে পাকিস্তান কোনো শিক্ষা নেয়নি।


একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। তিনি আরো বলেছেন, ওই সময় পাকিস্তানের অধিবাসীদের বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। ইমরান খান এমন একসময় এই উক্তি করলেন, যখন পাকিস্তান একটি সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। একই সময়ে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়াও চলছে।
পাকিস্তান রাষ্ট্রটির দুর্ভাগ্য এই যে সেখানে গণতন্ত্র কখনো স্থায়ী হয়নি। সেনাবাহিনী সেখানে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে দেয়নি। দীর্ঘ সেনাশাসনের কু-প্রভাব দেশটিতে ভালোভাবেই পড়েছে। গণতন্ত্রের জন্য অনেক রক্ত ঝরেছে পাকিস্তানে। কিন্তু গণতন্ত্র সেখানে স্থায়ী হতে পারে না। বেনজির ভুট্টোর মৃত্যু ও ইউসুফ রাজা গিলানির সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ধারণা করা হয়েছিল, পাকিস্তানে গণতন্ত্র আবার ফিরল। কিন্তু কয়েক দিনের ঘটনায় ধারণা করা হচ্ছে, গণতন্ত্র নতুন সংকটের মুখে। সেখানে সেনাবাহিনী ও সরকার নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়াতেই এ আশঙ্কা। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী গিলানি বলেছেন, তিনি কোনো ব্যক্তিকে কোনো বিষয়ে জবাব দিতে বাধ্য নন। তিনি একমাত্র পার্লামেন্টের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। মন্ত্রিসভার প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে সেনাপ্রধান কায়ানির মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। সেখানে দেশের সমস্যা মেটাতে গিলানি সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন। কিন্তু তাতে দ্বন্দ্ব খুব একটা মিটছে না। এ অবস্থায় সাবেক পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার বিষয়টিও তিনি স্পষ্ট করেছেন। সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড সমর্থনের পাশাপাশি তিনি ইমরান খানের দলের সঙ্গে জোট করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন। এদিকে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে অযোগ্য ঘোষণার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিশনে অচিরেই সাক্ষ্য দেবেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যবসায়ী মনসুর ইজাজ।
আপাতত পাকিস্তানে যে বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, সেটা হচ্ছে আস্থার সংকট। সরকার, প্রশাসন, আদালত ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোটাই এখন প্রথম ও প্রধান কাজ হয়ে দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বিচার বিভাগের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বেড়েছে। সেখানেও আস্থায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পাকিস্তান অচিরেই রাজনৈতিক পঙ্গুত্ব বরণ করতে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পাকিস্তানকে অবশ্যই অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। বর্তমান অবস্থায় রাজনৈতিক শক্তির ভুল পদক্ষেপ দেশটিকে এক গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একাত্তর সম্পর্কে ইমরান খান যে উক্তি করেছেন, তা যথার্থই ইঙ্গিতবহ। পাকিস্তানের আজকের যে রাজনৈতিক সংকট, বারবার সেখানে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার যে ইতিহাস_তা থেকে মুক্তির সহজ উপায় যেটা ইমরান খান বলেছেন তা যথার্থ। অতীতেও নিজেদের ক্ষমতা সংরক্ষণ করতে গিয়ে সেখানে রাজনীতিকরাই গণতন্ত্রকে সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। সেই সংকট পাকিস্তানে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা বারবার বাধাগ্রস্ত করেছে। আজকের সংকট তারই ধারাবাহিকতা।
সংকট কাটাতে পাকিস্তান সরকার এখন কোন পথে হাঁটে সেদিকেই সবার দৃষ্টি।

No comments

Powered by Blogger.