ব্রায়ান হোয়াইটেকার-আরব দেশগুলোতে এনজিও

চিন্তা করুন, আপনি বাস করছেন সৌদি আরবে। এবং কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে একটি ডিসকাশন গ্রুপ শুরু করতে চাচ্ছেন। এর একমাত্র বৈধ উপায় হলো, আপনাকে এ জন্য অবশ্যই বাদশাহর অনুমতি নিতে হবে। মুসা আল কারনি আইন মেনে একটি চিঠি লেখেন বাদশাহ বরাবর। সেই চিঠির কোনো উত্তর তিনি পাননি। সুতরাং তিনি তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে থাকলেন।


কয়েক মাস পর গোয়েন্দা পুলিশ তাঁর বাড়িতে হানা দিল এবং কয়েকজন বন্ধুসহ 'সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের পক্ষে কাজ করার জন্য' মিটিং করার দায়ে তিনি গ্রেপ্তার হলেন। তাঁকে জেলখানায় প্রেরণ করা হলো।
বেশির ভাগ আরব দেশেই সামাজিক সংগঠন করতে, এমনকি একেবারেই সাদামাটা, এমনকি স্ট্যাম্প সংগ্রহের মতো সংগঠন করতেও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। যদি কর্তৃপক্ষের সামান্য অপছন্দ হয়, তাহলে তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে এবং অনেক সময় কোনো আবেদনের ব্যাপারে কর্ণপাতই করে না। আবেদনকারীর আবেদন আঁস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। তবে বাহরাইন এবং ওমানে কর্তৃপক্ষ অনুমতি প্রদান বাতিল করতে পারে সংগঠনটি অপ্রয়োজনীয় বলে। ওমানের বেলায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় 'অন্য যেকোনো কারণে' বাতিল করতে পারে। কাতারে কোনো সংগঠন যদি কোনো বিদেশিকে সদস্য করতে চায়, তাহলে অবশ্য প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগবে।
জনগণের একত্রিত হওয়া এবং বিভিন্ন স্বার্থ নিয়ে মতামত আদান-প্রদান করা স্বাধীনতারই একটি অপরিহার্য অংশ। সুশীল সমাজের সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য এ অধিকার অপরিহার্য। একটি বিকশিত সুশীল সমাজ ছাড়া আপনি বিকশিত গণতন্ত্র আশা করতে পারেন না। আর এ কারণেই কর্তৃত্ববাদী শাসকরা এনজিও এবং অন্যান্য সামাজিক সংগঠন নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ কারণেই তারা এসব সংগঠনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করতে চায়। এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে মনে করা হয় নাশকতামূলক। কারণ তারা মনে করে কর্তৃপক্ষই সব কিছু সবচেয়ে ভালো জানে। এমনকি দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তারা বিপজ্জনক মনে করে, যদি সেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের মৌলিক সেবা প্রদানে ব্যর্থতাগুলোকে ধরিয়ে দেয়। এসব প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিয়ন্ত্রণের বেশ কিছু কৌশল রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানকে শ্বাসরুদ্ধ করা হয় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে অথবা একই নাম দিয়ে, একই বিষয়ে তার পাল্টা সংগঠন তৈরি করে। ইয়েমেনে প্রচলিত এই কৌশলকে বলা হয় ক্লোনিং।
সিরিয়া, জর্দান এবং কাতারে (হোসনি মুবারকের সময়ের মিসরে) দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে খবরদারি করে থাকেন শাসকদের স্ত্রীরা। উপসাগরীয় দেশগুলোতে এনজিও ধরনের সব সংগঠন চালিয়ে থাকে সরকার। যেমন_বাহরাইনে রয়েছে তিনটি সরকারচালিত মানবাধিকার সংগঠন। স্বভাবতই এগুলো সরকারের অনুকূলে কাজ করে থাকে। অত্যন্ত অস্পষ্ট আইনের অধীনে এনজিওগুলোকে কাজ করতে হয় এবং কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে এগুলোকে দুর্বহ করে তোলার কৌশল অবলম্বন করে। মিসর হলো এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভয়াবহ। তারা যদি কোনো সংগঠনকে বিচারের অধীনে আনতে চায় বা বন্ধ করে দিতে চায় তাহলে যেকোনো সময় এনজিওগুলোর মধ্যে ফাঁক খুঁজে পায়। উত্তরোত্তর আরব সরকারগুলো বাইরের তহবিলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে। দরিদ্র দেশগুলোতে এনজিওগুলোর জন্য এটি একটি বড় বাধা। যেমন_জর্দানে ২০০৮ সালে একটি আইন পাস করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিদেশি তহবিল সংগ্রহে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে। এ অনুমোদনের জন্য সুস্পষ্ট কোনো ক্রাইটেরিয়া না থাকায় সম্পূর্ণই নির্ভর করে মন্ত্রীর চিন্তা আর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর।
এসব বিবেচনায় গত বৃহস্পতিবার মিসরে যে এনজিও অফিসগুলোতে হানা দেওয়া হয়েছে, তা মোটেই অবাক করার মতো নয়, যদিও মিসরের বিপ্লব হয়েছিল এবং বিপ্লবের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান। কিন্তু এভাবে একযোগে ১৭টি এনজিওতে কর্তৃপক্ষের হামলা মিসরে অভূতপূর্ব এমনকি হোসনি মুবারকের শাসনামলেও কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি।

লেখক : লন্ডনের দি গার্ডিয়ানের 'কমেন্ট ইজ ফ্রি' সেকশনের সম্পাদক। একযোগে দি গার্ডিয়ান এবং পাকিস্তানের দি ডন পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধটি ভাষান্তর করেছেন মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.