বিরোধী দলের সম্পৃক্ততা প্রত্যাশিত-ইসি গঠনে অনুসন্ধান কমিটি

তুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান অনুসন্ধান কমিটি গঠনে যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা সংবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। বিএনপির তা নীতিগতভাবে অবশ্যই মেনে নেওয়া উচিত। কারণ, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আওতায় একটি পূর্ণাঙ্গ আইন তৈরির শর্তপূরণ দর-কষাকষির বিষয় হতে পারে না।


অনুসন্ধান কমিটির গঠনপ্রণালি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট করা ছাড়াও নবগঠিত ইসি কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, সে বিষয়েও আইন থাকা দরকার। এখন তো সংবিধান অনুযায়ী অনধিক পাঁচ সদস্যের ইসি গঠনের সুযোগ আছে। ভারতীয় আইনে স্পষ্ট লেখা আছে, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে ইসির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়েও এমন নির্দেশনা এসেছে। সুতরাং, রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে একটি ‘আইন বা প্রজ্ঞাপন’ জারির যে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে, তাতে আমরা দ্বিধান্বিত। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী একটি পূর্ণাঙ্গ আইন করার বিকল্প বেছে নেবেন।
সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক, পিএসসির চেয়ারম্যান প্রমুখের সমন্বয়ে যে বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতি করেছেন, তার একটি অন্তর্নিহিত দুর্বলতা আছে। সেটি হলো, সাংবিধানিক ওই পদধারীদের নিয়োগে একইভাবে আইন করার বিধান থাকলেও সেটি উপেক্ষিত থাকছে। তাঁরা বাছাই-প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে নিয়োগপ্রাপ্ত। এ ছাড়া আরেকটি দিক হলো, বাংলাদেশকে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থেকে বেরোতে হলে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা অর্জনের দিকে যেতে হবে। সে কারণে রাষ্ট্রপতি কমিটিতে ‘উপযুক্ত ব্যক্তি’ নিয়োগের যে প্রস্তাব করেছেন, সেখানে বিরোধীদলীয় নেতার মনোনীত প্রতিনিধির নাম অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি চিন্তায় আনা উচিত। বিরোধীদলীয় প্রতিনিধি আপাতত অনুপস্থিত থাকলেও তাতে অনুসন্ধান কমিটির কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটবে না। কিন্তু সবচেয়ে বেশি কাম্য যে দ্বিদলীয় উদ্যোগ, তার প্রতি সরকারের সংকল্প ব্যক্ত করা হবে।
অনুসন্ধান-প্রক্রিয়ায় টিআইবির সুপারিশ অনুযায়ী, প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের নাম জনসমক্ষে নিয়োগের যথেষ্ট আগে প্রকাশ করতে হবে। বাছাই কমিটি গঠন করে কোনো নিয়োগ দেওয়া হলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে শক্তিশালী হতে পারে না। একই ধরনের তিনটি বাছাই কমিটি বর্তমানে আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। কমিশনের সদস্যদের নাম প্রকাশ-সংক্রান্ত কোনো বিধান সেখানে গরহাজির। এসব কমিটিতে কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারকসহ সাংবিধানিক পদধারীরাও রয়েছেন। বর্তমান সরকারের আমলেই তাঁদের মাধ্যমে দুদক, তথ্য কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পুনর্গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু গত তিন বছরে তাদের দুর্বল কার্যক্রম সাক্ষ্য দেবে, তারা দলীয় সরকারের প্রভাব-বলয়ের বাইরে বেরোতে পারেনি।
বিএনপিকে বিরোধিতার জন্য বিরোধিতার নীতি পরিত্যাগ করতে হবে। নতুন ইসি গঠন একটি অনিবার্য সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। এই প্রক্রিয়ায় তারা সহায়তা দিলেই তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করার কারণ নেই। সংলাপের সূত্রেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম রাষ্ট্রপতির কোনো ভবিষ্যৎ সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়েও আলোচনা করার একটা আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। এটা অর্থপূর্ণ হলে তা আশাব্যঞ্জক।

No comments

Powered by Blogger.