পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে আয়কর আইন সংশোধন

পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে আয়কর আইন সংশোধন করেছে সরকার। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেয়ারবাজারসহ অন্যান্য লাভজনক ব্যবসায় বিনিয়োগে যে বিধিনিষেধ রয়েছে তা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।


কেউ এ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার এমন বিধান স্মরণ করিয়ে দিয়ে শিগগির একটি আদেশ জারি করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে যারা পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে বলা হচ্ছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ মর্মে আদেশ জারি
করার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দু'একদিনের মধ্যেই এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হতে পারে। প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে অস্থিরতার তদন্তে গঠিত খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের কমিটি গত বছর তাদের দেওয়া প্রতিবেদনে বাজারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধের সুপারিশ করেছিল।
গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সভায় শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করতে বিদ্যমান আয়কর আইনের বেশ কিছু সংশোধনী এনে তা অনুমোদন করা হয়। পুঁজিবাজার চাঙ্গা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিদ্যমান আইন সংশোধন করেছে সরকার। যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে তার মধ্যে সেকেন্ডারি মার্কেটে কর রেয়াত সুবিধা, বিদেশি বিনিয়োগে অর্জিত আয় করমুক্ত, মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রাপ্ত আয় করমুক্ত ও ব্রোকার কমিশন কর হার কমানো উল্লেখযোগ্য। সিদ্ধান্ত আগে নেওয়া হলেও গতকাল আইনের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করা হয়।
এদিকে অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত আয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা যাবে না_ সরকারের এমন সিদ্ধান্তের জের হিসেবে গতকাল দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। সূচক আবারও ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে। গতকাল প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ১৬৭ পয়েন্ট খোয়া গেছে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ২৩৫ পয়েন্ট হারিয়েছে। বড় ধরনের দর পতনের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল মতিঝিলে ডিএসই কার্যালয়ের সামনে ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন। তারা রাস্তা অবরোধ করলে শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর দেড়টায় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাদের দাঁড়াতে দেয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ আজ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
আয়কর আইন সংশোধন : পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে আয়কর আইনের বেশ কিছু সংশোধন করছে সরকার। বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শুধু আইপিওতে কর রেয়াতি সুবিধা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সেকেন্ডারি মার্কেটে কর সুবিধা বাতিল করা হয়। বাজার চাঙ্গা করতে এখন প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি উভয় বাজারে কর সুবিধা নিশ্চিত করা হলো। অন্যান্য সংশোধনীর মধ্যে রয়েছে_ বিদেশি বিনিয়োগে অর্জিত মুনাফা আয়করমুক্ত, মিউচুয়াল ফান্ডে প্রাপ্ত আয় করমুক্ত ও ব্রোকার কমিশনের কর হার কমানো। এসব সিদ্ধান্ত আগে নেওয়া হলেও গতকাল মন্ত্রিসভায় আইনের মাধ্যমে তা অনুমোদন করে নেওয়া হয়।
আগে বিদেশিরা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে মুনাফা করলে তার ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হতো। বিদেশিরা যাতে আরও বেশি করে এ দেশে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসেন সে জন্য তাদের বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর করমুক্ত সুবিধা দিয়েছে সরকার। আগে ব্রোকার ফার্মগুলো শেয়ার ব্যববসা লেনদেন করে যে কমিশন পেত তার ওপর দশমিক ১০ শতাংশ হারে কর কেটে নিত সরকার। এখন কর হার কমিয়ে অর্ধেক অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে আয়কর আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, পুঁজিবাজার গতিশীল এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিদ্যমান আইন সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে আশা করা যাচ্ছে পুঁজিবাজার চাঙ্গা হবে এবং আস্থা ফিরে আসবে বিনিয়োগকারীদের।
বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকদের মত : অব্যাহত দরপতনের প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্যসহকারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। ডিএসইর সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, অপরাধের টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক_ এমন দাবি আমরা কখনও করিনি। কেবল অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের দাবি করেছিলাম। সরকার আমাদের দাবির মুখে সেই সুবিধা প্রদান করেছে এবং এখনও বহাল রয়েছে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অপরাধমূলক বা দুর্নীতি থেকে আয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে সাদা করার সুযোগ দেওয়া হোক_ এমন দাবি কোনো সুস্থ মানুষই করবেন না। এনবিআর এ বিষয় সুনির্দিষ্ট করার কারণে বিনিয়োগকারীদের হতাশ হওয়া বা বাজারের দরপতনের কোনো কারণ নেই।
এছাড়া দেশে ইতিপূর্বে কালো টাকা বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য নয় উল্লেখ করে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কালো টাকা কখনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ হয়নি। ফলে যে সুবিধার বাজারে প্রত্যক্ষ কোনো প্রভাব নেই, সে সুবিধা যদি প্রত্যাহার যদি করা হয়, তার কারণে শেয়ারবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়া যৌক্তিক নয়।

No comments

Powered by Blogger.