কনের মেহেদি by রয়া মুনতাসীর

বিয়ের কনে মানেই হাতে মেহেদি লাগানো। নতুন জীবনের নতুন স্বপ্ন, ভালো লাগা, লজ্জা, আনন্দ সবকিছুই যেন প্রকাশ পায় রাঙা হাতের মধ্য দিয়ে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিয়ের সাজের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এই একটি সাজে কোনো বদল আসেনি। বরং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কনের মেহেদি এখন আরও আকর্ষণীয় এবং সুন্দর নকশায় ফুটিয়ে তোলা হয়।


মেহেদি ও নকশার কোনো শেষ নেই। ফুলেল নকশা, পেখম তোলা ময়ূর অথবা কলকির আভিজাত্য—যেকোনো কিছুই ফুটিয়ে তোলা যায় কনের মেহেদিতে। তবে নকশা যত সূক্ষ্ম এবং চিকন হবে, দেখতে ততই ভালো লাগবে। মেহেদিশিল্পী সায়মা ফেয়রুজ জানান, ‘বিয়ের মেহেদি কনুই পর্যন্ত লাগাতে সবাই পছন্দ করেন। তবে অনেকে ব্লাউজের মাপের সঙ্গে মিলিয়ে থ্রি কোয়ার্টার পর্যন্ত লাগান। ডিজাইনের ক্ষেত্রে নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে পারেন।’
বিয়ের আসরে লালের ছটাই প্রাধান্য পায় বেশি। মেহেদির বেলাতেও তাই। কনের হাতে লাল রংটাই শোভা পায় বেশি। কালো রং এখানে অনেকটাই বেমানান লাগে। এ কারণে কনের হাতে কালো মেহেদি কম রাখলেই ভালো দেখাবে বলে জানান রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা আরমান।
হলুদের অনুষ্ঠানে আলতা দিয়ে হাত সাজানো সবাই পছন্দ করে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে নেইল পলিশ বা রঙের মাধ্যমে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। কারণ একটাই, হলুদের আগে মেহেদি লাগানো হলে তার রং অনেকটা বিবর্ণ হয়ে আসে বিয়ের আসরে। রং কম সময় থাকে বলে বিয়ের অনুষ্ঠানের আগের দিন মেহেদি লাগানোই ভালো। দরকার মনে করলে মেহেদির নকশার ওপরই পছন্দমতো রং দিয়ে আউটলাইন করে নেওয়া যায়। সঙ্গে যোগ করতে পারেন কুন্দন কিংবা বিভিন্ন রঙের পাথর। তবে মেহেদি ওঠানোর সময় পানি ব্যবহার না করলেই ভালো। বরং মেহেদি উঠিয়ে ফেলার পর পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা পানি না লাগালে রং আরও গাঢ় হয়।

সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে
বাজারের কেনাবেশির ভাগ মেহেদিতেই রাসায়নিক নানা পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যা ত্বকের জন্য ভালো নয়। বাজারের টিউব মেহেদি ব্যবহার করলে কিছুদিন পরপর লাগালেই ভালো। মেহেদি লাগানো হাত দিয়ে কখনোই খাবেন না। কারণ, এর রাসায়নিক পদার্থ কিডনিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যত দিন হাতে মেহেদি আছে, খাবার সময় চামচ ব্যবহার করা উচিত বলে জানান রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। অনেকের হাতের ত্বক নমনীয় হয়ে থাকে। বাজারের মেহেদি লাগালে অনেক সময় র‌্যাশের সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় আধা চামচ দুধ এবং আধা চামচ মধু মিশিয়ে র‌্যাশের জায়গায় লাগান। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফল পাবেন। হাতের যে জায়গায় চামড়া পাতলা অর্থাৎ ওপরের দিকের অংশে, সেখানে প্রথমেই কিছুটা মেহেদি লাগিয়ে দেখতে পারেন। র‌্যাশের সমস্যা দেখা গেলে মেহেদি না লাগানোই ভালো।

মানানসই নকশা
সবার হাতের মাপ এক নয়। কারও হাত লম্বাটে হয়ে থাকে, কারও আবার গোলাকার। মেহেদি লাগানোর সময় হাতের মাপের সঙ্গে মিলিয়ে লাগালে দেখতে ভালো লাগবে বলে জানান সায়মা ফেয়রুজ। ‘চিকন ধাঁচের হাতে যেকোনো ধরনের নকশা ভালো লাগে। ঘন করে দিলেও দেখতে খারাপ লাগে না। তবে হাত মোটা হলে একটু হালকা নকশার মেহেদি লাগালেই দেখতে ভালো লাগবে। বেছে নিতে পারেন লম্বাটে ধাঁচের নকশা। কনুই পর্যন্ত না লাগিয়ে হাতের মাঝ বরাবর লাগালে হাতের আকারেও মানিয়ে যাবে।’

No comments

Powered by Blogger.