অনুবাদ-'বাথ পার্টির ড্রইংরুম থেকেই সব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে'_রবার্ট ফিস্ক

টা আসাদের ভাষণের বছর। সিরিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত হচ্ছে, এটা সত্য। আরব দেশগুলো বহির্দেশীয় চাপের কারণে সিরিয়ার বিরোধিতা করছে, এটাও সত্য। কেউ এ কথার যৌক্তিকতা অস্বীকার করতে পারবে না। সব কিছুর বাইরেও সিরিয়ার সরকার নিজেই তার দুই হাজার সেনা মারা গেছে বলে জানিয়েছে, যেখানে জাতিসংঘ বলছে, সিরিয়ায় পাঁচ হাজার বেসামরিক মানুষ মারা গেছে।


কিন্তু যখন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এরদোগান সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বললেন, সিরিয়া উপদলীয় এবং ধর্মীয় যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে, তখন প্রেসিডেন্ট আসাদের কিছু সমর্থক এই বক্তব্যের সঙ্গে বিরোধিতা করে বসল।
বিদেশি চক্রান্তের অংশ হিসেবে যে কেউ বলতে পারে, লেবাননে আসাদবিরোধীদের অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে। আল-কায়েদা লেবাননের উত্তরের শহর আরসালে অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফাইয়াজ। এটা একটা কৌশলপূর্ণ দাবি, যাতে সিরিয়ার সেনাবাহিনী বৈধভাবেই হত্যাকাণ্ড চালাতে পারে। লেবাননের দার্জ নেতা ওয়ালিদ জুমবালত এখনো নামমাত্র আসাদের মিত্র। তিনি সিরিয়ার কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের কোনো মন্তব্য করতে নিষেধ করেন। কিন্তু যখন আরব লিগের পরিদর্শক দল সিরিয়া সফর করছে, তখনই রাজধানী দামেস্কে বোমা হামলায় ২৫ জন সিরীয় মারা যায়। আর সে জন্যই আবারও প্রশ্ন জেগে ওঠে। এর পরও আসাদ দেশের সংবিধান পুনর্গঠন এবং গত বছরের মার্চের মাঝামাঝি নির্বাচন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সমস্যাটা আসলে দুই দিকেই। গত ছয় মাসের মধ্যে প্রেসিডেন্ট আসাদ প্রথমবারের মতো জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। বহির্দেশীয় চক্রান্ত, আরব দেশগুলোর ওপর বহির্দেশীয় চাপ এবং দেশের সশস্ত্র বিরোধীদের প্রতি আসাদের লৌহ মুষ্ঠিই ছিল তাঁর বক্তব্যের মূল বিষয়। এ সব কিছুই তিনি এর আগেও বলেছিলেন। তাহলে নতুন কী বললেন?
পরিবর্তন কি হয়েছে? বরং বেশ দ্রুতই অবনতি ঘটছে গোটা পরিস্থিতির। আসাদবিরোধীরা আরো অধিক পরিমাণ ভারী অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা সজ্জিত হচ্ছে এবং প্রশাসনিক বাহিনীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াই করার জন্য প্রস্তুত। 'ফ্রি সিরিয়া আর্মি' অথবা 'ফ্রি আর্মি'তে সদস্যসংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আসাদ সরকার যদিও এখনো এ সমস্যার মিডিয়ার দিকটি বিবেচনা করতে পারেনি। কিছুসংখ্যক বিদেশি সাংবাদিককে দেশে ঢুকতে দিয়ে তারা এক প্রকার প্রচার চালাতে চাইছিল। ইউটিউবে জনগণের মতামত দেখিয়ে অনেক ভিডিও আপলোড করা হয়। কিন্তু যখন আল-জাজিরা সম্প্রচার করে, একজন মসজিদের ইমাম চেঁচিয়ে বলছেন, 'আসাদের সেনারা, তোমাদের ওপর আল্লাহ্র অভিশাপ নেমে আসবে। আসাদ তাদের খোদা! এতেও যদি তোমাদের রাগান্বিত করতে না পারে, তাহলে কী পারবে?', এর পরই প্রতিবাদকারীরা দামেস্কের শহরতলিতে বিক্ষোভের বিভিন্ন কৌশল দেখিয়ে দেয়। সিরিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য এটা আসলেই একটা সমস্যা।
প্রেসিডেন্ট বলতে পারেন, গতকাল তিনি যেমন বলেছেন_'আইন অনুযায়ী, কেউ গুলি করতে পারবে না; শুধু আত্মরক্ষার জন্য অথবা যুদ্ধের ময়দানে সশস্ত্র ব্যক্তির বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা যাবে।' কিন্তু ইউটিউবে কয়েক ডজন মোবাইল ভিডিও প্রমাণ করে, এই আইন প্রশাসন দ্বারা ব্যাপকভাবেই লঙ্ঘিত হয়েছে।
অবশ্যই, আল-জাজিরা কাতারের আমিরের অর্থায়নে চলে। এ ছাড়া কাতারের রাজপরিবারের প্রভাব আরব লিগের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়েই আছে। এরাই বারবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ার বিষয়টি নিয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে। আর এটা বোঝা খুব একটা কঠিন কিছু নয় যে, বাথ পার্টির ড্রইংরুম থেকেই সব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বাইরে থেকে কিছুই ঘটছে না।

সিরিয়া মিশন : আরব লিগের অস্থিরতা
২২ ডিসেম্বর আরব লিগের প্রতিনিধিরা সিরিয়ায় চলে গেলেন এবং সিরিয়ার মূল শহরগুলো থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে নিতে বললেন আসাদ সরকারকে।
২৩ ডিসেম্বর সিরিয়ায় প্রথমবারের মতো আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। ৪০ জন মারা যায় এ ঘটনায়।
২৭ ডিসেম্বর বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবাধিকার পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ আহমেদ আল-দাবি বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি সবচেয়ে খারাপ, কারণ সুদানের মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনার সঙ্গে এই পর্যবেক্ষকের যোগসাজশ প্রমাণিত হয়েছিল তখন।
২৮ ডিসেম্বর জেনারেল দাবি বলেন, সিরিয়ার কিছু অংশের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু এর পরদিনই নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ২৫ জন মারা যায়।
১ জানুয়ারি আরব লিগের পর্যবেক্ষক দল সিরিয়া থেকে চলে যেতে চায়। ৫ জানুয়ারি আরব লিগের পর্যবেক্ষকরা যে সিরিয়ায় ভুল করেছে, তা কাতারের প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করে নেন।
৬ জানুয়ারি সিরিয়ায় আরেক বোমা হামলায় ২৫ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়। রাষ্ট্র এই হামলাকে সন্ত্রাসীদের হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করে।
অনুবাদ : কল্লোল কর্মকার
ব্রিটেনের দি ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া

No comments

Powered by Blogger.