গিলানিকে সুপ্রিম কোর্টে তলব-পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে পাস

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি পদত্যাগ করতে পারেন। আদালত অবমাননার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট গতকাল তাকে তলব করার পর এমন খবর দিয়েছে সে দেশের গণমাধ্যমগুলো। এদিকে পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের সম্মুখীন হয় সরকার। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক একটি দলের আনা প্রস্তাব গতকাল পার্লামেন্টে পাস হয়েছে।


সরকারের প্রতি পার্লামেন্টের পূর্ণ আস্থার বিষয়টি প্রমাণ করার লক্ষ্যে এ প্রস্তাব আনা হয়। তবে প্রস্তাব পাস হলেও সরকারের ওপর সুপ্রিম কোর্ট ও সেনাবাহিনীর চাপ কমবে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সোমবার আদালত অবমাননার দায়ে সুপ্রিম কোর্ট নোটিশ পাঠানোর পর গিলানি পদত্যাগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং তার রাজনৈতিক মিত্রদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গিলানি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে সুপ্রিম কোর্ট আদালত অবমাননার দায়ে গিলানিকে অভিযুক্ত করেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি ইসলামাবাদে তার বাসভবনে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং দলের মিত্র পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কায়েদে আজম) নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট জারদারিসহ অন্যদের মধ্যে পিপিপি নেতা কামার জামাল কাইরা, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী খুরশিদ শাহ এবং পিএমএল (কিউ) দলের চৌধুরী পারভেজ এলাহী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গিলানি 'সরকার এবং পার্লামেন্ট'কে শক্তিশালী করার স্বার্থে পদত্যাগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে উপস্থিত জোটের শরিক নেতারা সে দেশের শীর্ষ আদালতের আদেশ মান্য করে ১৯ জানুয়ারি সশরীরে সুপ্রিম কোর্টে হাজির হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গিলানিকে। পরে ক্ষমতাসীন দল জোটের সাংসদদের নিয়ে এক পার্লামেন্টারি বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী গিলানি। খবর পিটিআই, ডন, বিবিসি, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
গতকাল সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নাসির উল মুলক জানান, সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আদালত অবমাননার নোটিশ জারি এবং ১৯ জানুয়ারি ব্যক্তিগতভাবে তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল এ নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এর আগে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে তাদের পদে অযোগ্য ঘোষণা করতে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে গতকাল একটি আবেদন করা হয়। দেশটির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওয়াহাব আল খায়রি সুপ্রিম কোর্টে এ আবেদন করেন।
বিদেশি ব্যাংক থেকে পাকিস্তানের জাতীয় সম্পদ ফিরিয়ে আনতে প্রেসিডেন্ট জারদারিকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য ওই আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আবেদনে দাবি করা হয়, প্রেসিডেন্ট জারদারি ও তার সহযোগীরা দেশে লুটপাট করেছেন।
আইনজীবী খায়রি আরও অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্ট বিদেশে সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও বিদেশি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে অর্থ জমাচ্ছেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেনাপ্রধানের অমর্যাদা পুরো জাতির অবমাননা এবং তা করা হয়েছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে ধ্বংস করার জন্য।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ 'ন্যাশনাল রিকনসিলেশন অর্ডিন্যান্সে'র অধীনে জারদারির বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলা খারিজ করে দিয়েছিলেন। এদিকে গিলানি সেনাবাহিনীর সব দাবি বাতিল করে দিয়েছেন। উল্টো তিনি বলেন, আমি কারও কাছে এ বিষয়ে কোনো উত্তর দেব না; আমার কথা বলার জায়গা 'সংসদ' রয়েছে।
পাকিস্তানের শীর্ষ জেনারেল ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিতে মার্কিন সহায়তা চেয়ে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির 'গোপন চিঠি' কেলেঙ্কারিতে উত্তপ্ত দেশটির রাজনীতি। এর জের ধরে গতকাল আস্থা ভোটের মুখোমুখি হয় প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির সরকার। উলি্লখিত বিষয় নিয়ে দেশটির সামরিক এবং বেসামরিক সরকারের মধ্যে টানাপড়েন অব্যাহত রয়েছে। পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্ত এবং গিলানির এক মন্তব্য নিয়ে এ সংকট আরও ঘনীভূত হয়।
বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, আস্থা ভোটে টিকে গেলেও প্রধানমন্ত্রী গিলানিকে সরিয়ে দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট জারদারি। সে ক্ষেত্রে নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিটি) জ্যেষ্ঠ নেতা আইতজাজ আহসান। বিশ্লেষকদের মতে, সার্বিক পরিস্থিতিতে বেকায়দায় থাকা প্রেসিডেন্ট জারদারি তার পদ রক্ষা ও সরকারের মেয়াদ পূর্ণ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। আর সেটা করতে গিলানিকে সরিয়ে দিতে মোটেও কার্পণ্য করবেন না তিনি।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ক্ষুব্ধ সেনাবাহিনীকে সন্তুষ্ট করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে প্রধানমন্ত্রী গিলানিকে সরিয়ে দিতে পারেন জারদারি। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী পদে আইতজাজ আহসানই হবেন জারদারির প্রথম পছন্দ।
গত ডিসেম্বরে জারদারি দুবাই গেলে সেখান থেকে টেলিফোনে কথা বলেন আইতজাজের সঙ্গে। জারদারি তার অবর্তমানে ছেলে বিলাওয়াল জারদারির পরামর্শক হিসেবে সঙ্গে থাকতে আইতজাজকে অনুরোধ জানান।
সে দেশের রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা গতকাল সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত না হতে প্রধানমন্ত্রী গিলানিকে পরামর্শ দিয়েছেন।
মনসুর আইয়াজকে
পাকিস্তানে আসতে বাধা
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যবসায়ী মনসুর আইয়াজকে দেশে ফিরতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মেমোগেট কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত আইয়াজের কেঁৗসুলি আকরাম শেখ তার মক্কেলের পক্ষে এ অভিযোগ করেন। প্রেসিডেন্ট জারদারির স্বাক্ষরবিহীন চিঠি মনসুর আইয়াজের মাধ্যমে পেন্টাগনের এক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে তাকে ৩ সদস্যের বিচারক কমিশনের সামনে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। গতকাল কমিশনে উপস্থিত হয়ে অ্যাডভোকেট আকরাম শেখ বলেন, মনসুর আইয়াজ ২৫ জানুয়ারি অথবা তার পরে কমিশনে উপস্থিত হতে পারেন। আর কালক্ষেপণ না করে কমিশন মনসুর আইয়াজকে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন। কমিশনের এক সদস্য বিচারপতি ঈশা বলেন, 'আমাদের ধৈর্য নিয়ে পরীক্ষা করা উচিত নয়।'
আকরাম শেখ বলেন, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক মেমোগেট কেলেঙ্কারির ব্যাপারে মনসুর আইয়াজকে কমিশনের কাছে সত্য বলার অনুমতি দিলে তিনি পাকিস্তানে আসবেন। আকরাম শেখ আরও বলেন, মনসুর আইয়াজ সুইজারল্যান্ড দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করেছেন। পাকিস্তান সরকার সত্য প্রকাশ না করতে তাকে (মনসুর আইয়াজ) হুমকি দিচ্ছে বলে কেঁৗসুলি আকরাম শেখ গণমাধ্যমকে অভিযোগ করেন। পাকিস্তানভিত্তিক জিও নিউজের এক প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জি নিউজ গতকাল এ খবর দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.