জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চার্জশিট-অবৈধ উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ ও খরচের অভিযোগ

হীদ জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করে অবৈধ উৎস থেকে প্রায় ৮ কোটি টাকা সংগ্রহ ও খরচের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে করা মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার কমিশনের এক সভায় এ চার্জশিটের অনুমোদন দেওয়া হয়।


দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশীদ গতকাল বিকেল ৪টায় আদালতে দুদকের প্রসিকিউটিং সেকশনে চার্জশিটটি দাখিল করেন। মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রসিকিউটিং সেকশনের জিআরও মোঃ আবদুর রশীদ আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে চার্জশিটটি পেশ করবেন। এদিকে এ মামলায় হাইকোর্টের জামিননামা দাখিল করতে খালেদা জিয়া আজ ঢাকার সিএমএম আদালতে যাবেন।
চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন_ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর সাবেক একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) এমডি জিয়াউল
ইসলাম (মুন্না) ও ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সাবেক এপিএস মনিরুল ইসলাম খান। একই অভিযোগে গত বছরের ৮ আগস্ট ঢাকার তেজগাঁও থানায় ওই মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলা নম্বর-১৫। হারিছ চৌধুরী পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, মালপত্র ক্রোক ও হুলিয়ানামা জারির জন্য চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে অবৈধ উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ ও সমাজের কল্যাণে দাতব্য কার্যক্রম পরিচালনা না করে ব্যক্তিস্বার্থে অর্থ খরচ করে অপরাধ সংঘটিত করায় দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় চার্জশিটটি পেশ করা হয়। চার্জশিটে মোট ৩৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোনালী ব্যাংক শাখার একটি হিসাবে ট্রাস্টের নামে জমা করা হয় মোট ৭ কোটি ৮০ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ টাকা। ২০০৫ সালের ১৩ থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সাত দিনে ওই পরিমাণ টাকা জমা করা হয়। এর মধ্যে বিএনপির বিভিন্ন উৎস থেকে ৬ কোটি ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯, মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৩৫ লাখ এবং হারিছ চৌধুরীর এপিএস এমডি জিয়াউল ইসলামের মাধ্যমে ২৭ লাখ টাকা জমা দেখানো হয়। এ ট্রাস্টের প্রথম ট্রাস্টির দায়িত্বে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
দুদকের তদন্তে দেখা যায়, ওই ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলন করা হয় ৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্য থেকে ৬ কোটি ৫২ লাখ ৭ হাজার টাকায় রাজধানীর কাকরাইলে সুরাইয়া খানের কাছ থেকে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। জমির দলিলে এ পরিমাণ টাকা ক্রয়মূল্য হিসেবে উল্লেখ করা হলেও সুরাইয়া খানকে ট্রাস্টের অ্যাকাউন্ট থেকে আরও ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা দেওয়া হয় বলে নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়। ট্রাস্ট থেকে সুরাইয়া খানের ব্যাংক হিসাবে কেন এ টাকা প্রদান করা হয়েছে দুদকের কাছে এর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা দেননি তিনি। এ পরিমাণ টাকা অবৈধভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়। চার্জশিটে বলা হয়, চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করে দুস্থ মানুষ বা সমাজের কল্যাণমূলক খাতে খরচ না করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে ওই টাকা খরচ করা হয়েছে।
চার্জশিটে বলা হয়, মেট্রো মেকারস নামে 'পে-অর্ডারে'র মাধ্যমে যে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা জমা দেখানো হয়েছে তা এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদান করা হয়নি। এ ছাড়া জমি কেনার নামে সুরাইয়া খানকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ জানান, অভিযোগ তদন্তকালে অবৈধ উৎস থেকে একই ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া আরও ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার তথ্য পাওয়া গেছে। হারিছ চৌধুরীর সাবেক এপিএস জিয়াউল ইসলাম ১০টি পে-অর্ডারে এ পরিমাণ টাকা জমা করেন।
গতকাল চার্জশিটের অনুমোদন দেওয়ার পর দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সাংবাদিকদের জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ উৎস থেকে ওই পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেন। খরচও করা হয় চ্যারিটেবল ট্রাস্টের উদ্দেশ্য বহির্ভূত কাজে। তদন্তকালে এ অভিযোগের বিপরীতে সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত, নথিপত্র পাওয়া গেছে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই চার্জশিট পেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন আদালতেই নিষ্পত্তি হবে এ অভিযোগ। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ওই ট্রাস্ট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপরও তাকে কেন চার্জশিটে আসামি করা হলো না_ এ প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, এ অভিযোগের সঙ্গে তার দালিলিক কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও বিএনপির বিভিন্ন উৎস থেকে আনা কিছু চেকে তিনি স্বাক্ষর করেছেন, তাতে অপরাধ প্রমাণিত হয় না। রাজনৈতিক কোনো চাপে এ চার্জশিট পেশ করা হয়েছে কি-না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদকে রাজনৈতিক কোনো চাপ নেই। চাপ এলেও আমরা তা আমলে নেব না।
চ্যারিটেবল (দাতব্য) কাজের উদ্দেশ্যে ওই ট্রাস্ট গঠন করা হলেও এর তহবিল থেকে কোনো ধরনের দাতব্য কাজে অর্থ খরচের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং ট্রাস্টের আড়ালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মোটা অঙ্কের টাকার জমি কিনেছেন। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ৬ শহীদ মইনুল হোসেন রোডের সাবেক বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে শহীদ জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করা হয়। ট্রাস্টের প্রথম ট্রাস্টি খালেদা জিয়া নিজে। ট্রাস্টের দু'জন সদস্য হলেন_ খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে সে সময় নিজের বাড়ির ঠিকানায় নামসর্বস্ব চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করে নিজে ও তার দু'সন্তানকে ট্রাস্ট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত করে দাতব্য কাজে অর্থ ব্যয় না করে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে খরচ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে প্রভাব খাটিয়ে ট্রাস্টের জন্য অবৈধভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। পরস্পর যোগসাজশে অর্থ সংগ্রহ কাজে সহায়তা করে হারিছ চৌধুরীসহ তিনজন একই অপরাধ করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.