নৌপথে রোটেশন প্রথা-যাত্রীদের জিম্মি করে মুনাফা!

নৌপথে রোটেশন প্রথার অবসানের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে চলাচলকারী লাখ লাখ যাত্রী উপকৃত হবেন। পণ্য পরিবহনেও পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। তবে সিদ্ধান্ত হলেই বাস্তবায়ন হবে, এ ভরসা মিলছে না। লঞ্চ মালিকরা যথেষ্ট শক্তিশালী। প্রায় এক যুগ আগে তারা রোটেশন প্রথা বাতিলে রাজি হয়েছিলেন। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ছিল যাত্রী-স্বার্থবিরোধী ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে। হাইকোর্টেও মালিকদের অবস্থান বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে।


নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আগ্রহেরও অভাব নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাজধানীর সঙ্গে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পিরোজপুরের হাজার হাজার যাত্রীর প্রবল চাপ। তারা ওভারলোডেড হয়ে ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত চলাচল করছে। কেবিন হয়ে উঠছে সোনার হরিণ। মালিকরা রোটেশন প্রথার পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন লোকসানের। অথচ তারা প্রতি ট্রিপে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলাচলের জন্য ভাড়ার হার অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন। ঢাকার সঙ্গে বরিশাল অঞ্চলে নিয়মিত লঞ্চযাত্রীরা ভালো করেই জানেন যে, প্রতিটি ট্রিপেই নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী তোলা হয়। সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে সরকারি ছুটি আরেকটি দিন যুক্ত হলে যাত্রী সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। দুই ঈদের উৎসব তো রয়েছেই। এ সময়ে আসা-যাওয়ার সময়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অন্তত ১৫ দিন গলাকাটা হারে ভাড়া আদায় করা হয়। এভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে যে বিপুল অঙ্কের বাড়তি আয় হয় সেটা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অজানা নয়। রোববার মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে তারা সঠিকভাবেই এ হিসাব তুলে ধরেছেন। আমরা আশা করব, রোটেশন প্রথা তুলে ধরার সিদ্ধান্ত কার্যকর করায় তারা অনমনীয় মনোভাব দেখাবেন এবং তা অবশ্যই সাধুবাদ পাবেন। মালিকদের সমস্যা থাকতেই পারে এবং তার সমাধানের জন্য নৌপরিবহন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের করণীয় থাকলে সেটাও করতে হবে। কিন্তু পর্যাপ্ত নৌযান ও তা চলাচলের রুট পারমিট থাকা এবং যাত্রীদের বিপুল চাপ থাকার পরও রোটেশনের নামে প্রতিদিন কিছু নৌযান ঘাটে নোঙর করে রাখার যুক্তি থাকতে পারে না। যাত্রীদের জিম্মি করে রেখে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করার প্রথা থেকে অবশ্যই সরে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.