পাকিস্তানে সংকট আরও ঘনীভূত-সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কায়ানির বৈঠক

যুক্তরাষ্ট্রকে পাঠানো গোপন চিঠি (মেমো) নিয়ে সরকার ও সেনাবাহিনীর টানাপোড়েন আর দুর্নীতির মামলায় প্রেসিডেন্টের বিচার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হুমকির পর পাকিস্তানে রাজনৈতিক উত্তেজনা দ্রুত বাড়ছে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার এই উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির বিদেশযাত্রা এবং সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠকে।


প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী জানান, এক দিনের সফরে প্রেসিডেন্ট জারদারি গতকাল দুবাই গেছেন। তিনি সেখানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ ছাড়া অসুস্থতার জন্য চিকিৎসকদের কাছেও যেতে পারেন। আজ শুক্রবার তিনি দেশে ফিরবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সহযোগী আরও জানান, এটা প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত সফর। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক সংকটের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার পর সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য অভ্যুত্থান প্রতিহত করা এবং সেনাবাহিনীর ক্ষমতা কাটছাঁট করতে সহযোগিতা চেয়ে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া একটি গোপন চিঠি প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে মুখোমুখি অবস্থানে আছে জারদারির বেসামরিক সরকার ও সেনাবাহিনী। ওই চিঠির ঘটনা তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানি ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান লে. জেনারেল আহমদ সুজা পাশা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে গত সোমবার মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি।
প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যে সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব এখন তীব্র রূপ নিয়েছে। ওই মন্তব্যের জবাবে সেনাবাহিনী গত বুধবার জানায়, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য দেশের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আর এর পরদিনই হঠাৎ করে প্রেসিডেন্ট জারদারির বিদেশ যাওয়ায় দেশটিতে সংকট ও গুঞ্জন আরও ঘনীভূত হয়েছে।
এদিকে, সেনাপ্রধান কায়ানি ও আইএসআইয়ের প্রধান পাশাকে যাতে সরকার সরিয়ে দিতে না পারে, সে জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে গতকাল স্বীকার করেছেন আদালত। আইনজীবী মৌলভি ইকবাল হায়দার গত বুধবার ওই আবেদন করেন এবং তা গ্রহণ করেছেন ইসলামাবাদের হাইকোর্ট। আবেদনে ইকবাল হায়দার বলেছেন, ‘আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী যাতে সেনাপ্রধান ও আইএসআইয়ের প্রধানকে সরিয়ে দিতে না পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
দেশটির এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকা লিখেছে, ইকবাল হায়দারকে ‘সন্দেহজনক ব্যক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করে তাঁকে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ঢুকতে ও পিটিশন দাখিল করতে বাধা দেন প্রধান বিচারপতি ইফতিখার চৌধুরী। এরপর তিনি ইসলামাবাদ হাইকোর্টে তা দাখিল করেন।
সেনাপ্রধান ও আইএসআইয়ের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ‘ভয়ানক পরিণতি’ হতে পারে বলে সেনাবাহিনীর বিবৃতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই পিটিশন দাখিল করেন আইনজীবী ইকবাল। এর আগের দিন ‘বড় ধরনের অসদাচরণের’ অভিযোগ তুলে প্রতিরক্ষাসচিব সাবেক জেনারেল নাইম খালিদ লোদিকে বরখাস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী গিলানি। এতে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, সেনাপ্রধান ও আইএসআইয়ের প্রধানের বিরুদ্ধেও সরকার একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।
এদিকে, সেনাপ্রধান কায়ানি গতকাল সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল মুহাম্মাদ আলা দিয়াল। তবে এই সংকটকালে সেনাবাহিনী পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, তা নিয়ে নতুন করে গুঞ্জন সৃষ্টি করেছে গতকালের ওই বৈঠক।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী গিলানি এই সংকট-পরিস্থিতিতে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনে কাল শনিবার মন্ত্রিপরিষদের প্রতিরক্ষা কমিটির সভা ডেকেছেন। এতে সেনাপ্রধানও থাকবেন।
এর আগে গত শুক্রবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেন, প্রধানমন্ত্রী সৎ মানুষ নন। তিনি সাংবিধানিক শপথ পালন করেননি। বারবার বলার পরও তিনি প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা আবার চালু করার উদ্যোগ নেননি। সুপ্রিম কোর্ট আরও জানান, ওই মামলার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে অযোগ্য ঘোষণা করে সাংবিধানিকভাবে তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এএফপি ও রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.